১৬ বছর পেরোল ইউটিউব, প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন এক ‘বাঙালি’!

২০০৫ সাল। আজ থেকে ঠিক ১৬ বছর আগের একটা ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন উদযাপনে সেদিনও মেতেছিল গোটা দেশ। তার মাঝেই মুহূর্ত তৈরি হচ্ছিল একটি নতুন ঘটনার। ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নানা রকমের ভিডিও। কিন্তু তাই বলে একটা অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম! যেখানে গেলে নাকি সার দিয়ে হাজির হবে ভিডিও’র সম্ভার; তারপর নিজের পছন্দের মতো বেছে নিয়ে দেখা। তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে! এমনটা তো এর আগে দেখা যায়নি…

এমনটাই করে দেখালেন শ্যাড হার্লে, স্টিভ চেন এবং জাওয়েদ করিম। শুরু হল ইউটিউবের যাত্রা। আজ গোটা পৃথিবীতে ইউটিউব কী, সেটা আর নতুন করে বলে দিতে হয় না। গান, সাক্ষাৎকার, খবর, সিনেমা, কমেডি— সমস্ত কিছু নিয়ে এক ভরপুর বিনোদনের সম্ভার আমাদের হাতের মুঠোয়। এই ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মই জন্ম দিয়েছে ভুবন বাম, লিলি সিং, কিরণ দত্তদের। সিলভার প্লে, গোল্ডেন প্লে বাটন পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে সদ্য ‘ইউটিউব’ করা মানুষও।

আজকের এই জায়গায় পৌঁছনোর আগেও বহু চড়াই উতরাই দেখেছে ইউটিউব। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি রেস্তোরাঁয় বসে শুরু হয় এর যাত্রা। সদ্য চাকরি হারিয়েছে তিন তরুণ। কিন্তু চোখে নতুন কিছু করার স্বপ্ন। ২০০৫-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হলেও, প্রথম ভিডিও আপলোড হয় ২৩ এপ্রিল। বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম ১৮ সেকেন্ডের একটি ক্লিপিংস আপলোড করেন ইউটিউবে। প্রসঙ্গত জাওয়েদের বাবা নাইমুল করিম বাংলাদেশ থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন জার্মানিতে। সেখানেই বিবাহ করেন এক জার্মান মহিলাকে। তাঁদেরই সন্তান জাওয়েদ। জন্ম ও বড় হওয়া পশ্চিমে হলেও, রক্তে রয়ে গেছে বাংলার নিবিড় ছোঁয়াই।


যাইহোক, ইউটিউবে প্রথম ভিডিওটি আপলোড করলেন জাওয়েদ। আর, সেই থেকে শুরু হল একটা নতুন অধ্যায়। নেট দুনিয়ায় তারপর একের পর এক বিপ্লব এনেছে এই ওয়েবসাইট। ২০০৬ সালে গুগল অধিগ্রহণ করে নেয় এই সংস্থাকে। প্রথমে ব্যবসার কথা না ভাবলেও, পরে যে শুধু ইউটিউবকে কেন্দ্র করেই একটা ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হবে, সেটা কি ভেবেছিলেন প্রতিষ্ঠাতারা?

আজ বাসে, ট্রেনে যেতে যেতে একটু ফাঁক পেলেই, ইউটিউব খুলে বসে পড়া। আর যাঁদের ইউটিউব নিয়ে ঘর সংসার? ভাল ভিডিও বানালে দর্শকরা সেটা দেখবেন। যত দেখবেন, তত ভিউ। সঙ্গে লাইক, সাবস্ক্রাইবও করা হয়। এই সবকিছুও যে বিশাল আয় দিতে পারে, খ্যাতি-সম্মান দিতে পারে, সেটা বিশ্বাস করার প্ল্যাটফর্ম এটি। বিশ্বাস করেছিলেন ভুবন বাম, লিলি সিংরা। আজ দুজনেই আন্তর্জাতিক স্টার! তৈরি হয়েছে নতুন একটি শব্দ— ইউটিউবার। ইউটিউব এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে কোনো বাধা নেই, কোনো ভিসা-পাসপোর্ট নেই। একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলছিলেন ‘বি বি’ ভুবন বাম। মাত্র পাঁচ মাসে তাঁর চ্যানেল ভারতের গণ্ডি টপকে পৌঁছে যায় অন্যান্য দেশে, এমনকি পাকিস্তানেও। সেখান থেকে শুভেচ্ছা পান তিনি। সেখান থেকে ডাকও পান। তাঁর কাছে পেশা, জনপ্রিয়তা সবকিছুর থেকেও এই ব্যাপারটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউব নিজেই একটা পৃথিবী। এখানে কোনো দেশ-বিভাজন নেই, কোনো কাঁটাতার নেই।

তিনজন সদ্য চাকরি হারানো তরুণ একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। পরে তাঁদের সেই স্বপ্নের হাত ধরে আরও লাখ লাখ মানুষ স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাচ্ছে। ইউটিউব ফ্যানফেস্টের মঞ্চে একদিন আমিও উঠব, এই আশাতেই হয়ত কেউ ঘরের এক কোণে বসে ভেবে চলেছে কনটেন্ট। তারপর এক ক্লিকে পাড়ি দিচ্ছে ইউটিউবের সমুদ্রে। এমন হাজার হাজার আশা, হতাশা, ভালবাসা নিয়ে আলো করে রেখেছে এই ওয়েবসাইট। যাত্রা বোধহয় একেই বলে…

আরও পড়ুন
বরফের হ্রদ থেকে উদ্ধার হরিণ শাবক, ভাইরাল মার্কিন মৎস্যজীবীর ভিডিও

Powered by Froala Editor