বয়স প্রায় ১৩০০০ বছর, বিশ্বের ‘প্রাচীনতম’ মন্দির রয়েছে তুরস্কে

মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার ধর্মীয় ইতিহাস। পৃথিবীর নানা প্রান্তে তাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মন্দির ও উপাসনাক্ষেত্র। মিশরের পিরামিড হোক বা স্টোনহেঞ্জ, এসবই আসলে প্রাচীন মানুষের ধর্মীয় উপাসনার জায়গা। তবে সেসব তো নিতান্ত নতুন। হ্যাঁ, অবাক লাগলেও পৃথিবীর প্রাচীনতম মন্দিরের তুলনায় এসবের বয়স অনেক কম। তুরস্কের অ্যানাটোলিয়া প্রদেশের মাটির নিচে খুঁজে পাওয়া গোবেকলি তেপের বয়স গবেষকদের মতে অন্তত ১৩ হাজার বছর। প্রায় ৮ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এখানে মানুষের পায়ের ছাপ পড়েছে। আর মানুষের এই প্রাচীন ইতিহাসকে যে ঘিরে থাকবে অসংখ্য রহস্য, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে?

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে তুরস্কের এই অঞ্চলে কোনো প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছিলেন একদল গবেষক। তবে ১৯৯৬ সালে জার্মানির পুরাতত্ত্ব বিভাগ খননকার্য চালিয়ে যে সৌধটি খুঁজে পেল, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। যদিও সম্পূর্ণ মন্দিরের খুব সামান্য অংশই খুঁড়ে বের করা হয়েছে, তবে তার মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে অন্তত ২০০টি পিলার এবং ২০টি বৃত্তাকৃতি অঞ্চল। আর এই আশ্চর্য কাঠামোই গবেষকদের অবাক করেছে সবচেয়ে বেশি।

এই মন্দির যখন তৈরি হয়, তখন মানুষ সবে নতুন প্রস্তরযুগে পা দিয়েছে। কৃষিকাজের পদ্ধতি তখনও মানুষ শেখেনি। তাই মন্দিরের সর্বাংশে ছড়িয়ে আছে শিকারী জীবনের নানা চিহ্ন। গবেষকদের ধারণা, প্রায় ৬ মিটার উঁচু পিলারগুলির নিচে আছে একেকটি সমাধি। আর পিলারের গায়ে খোদাই করা অসংখ্য ছবি। সেগুলো কোনো সাংকেতিক ভাষাও হতে পারে। তবে অত প্রাচীন যুগে ভাষার বিকাশের কথা এখনই স্বীকার করতে চাইছেন না গবেষকরা। তবে না চাইলেও যা স্বীকার করতেই হবে, তা হল এই মন্দিরের আর্কিটেকচার।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে গোবেকলি তেপের আর্কিটেকচার সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। গবেষকরা এই কাজে বেছে নিয়েছিলেন একটি স্থানিক অ্যালগরিদম। আর তার সাহায্যেই দেখা গেল মন্দিরের পিলার এবং বৃত্তাকৃতি অঞ্চলগুলি একদমই ইতস্তত গজিয়ে ওঠেনি। বরং তাদের মধ্যে আছে একটি জটিল জ্যামিতিক সাদৃশ্য। বিশেষভাবে রহস্যময় তিনটি অঞ্চলকে দেখা গিয়েছে প্রায় একটি সমবাহু ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষে অবস্থান করছে। আর পিলারগুলিকে যদি সমাধি হিসাবেই ধরে নিতে হয়, তবে গবেষকদের মতে এই ত্রিভুজ আসলে মৃত ব্যক্তিদের একধরনের সামাজিক পদমর্যাদার মাপকাঠি।

এতদিন মনে করা হত, প্রায় দূহজার বছর ধরে ইতিস্তত তৈরি হয়েছে এই মন্দির। তার প্রতিটি অংশ বিভিন্ন সময়ে তৈরি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নতুন গবেষণার ফলাফল দেখে অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা। কারণ এই জ্যামিতিক সাদৃশ্য সত্যি হলে বলতে হয় পুরো মন্দিরটাই একসঙ্গে তৈরি হয়েছে। আর তাহলে পূর্ববর্তী ধারণার থেকে অন্তত তিনগুণ বেশি শ্রমিক লেগেছে পুরো কাজটা করতে। এই অঞ্চলে তখন মানুষের সংখ্যা কত ছিল, আর তাদের সমাজব্যবস্থাই বা কেমন ছিল; এসবই তাই এখন গভীর গবেষণার বিষয়। আজ থেকে ১৩ হাজার বছর আগের একটি স্থাপত্যের মধ্যেও যে এমন ইঞ্জিনিয়ারিং থাকবে যা বর্তমান গবেষকদের ধাঁধায় ফেলে দেবে, এমনটা ভাবতে একটু অবাক লাগে বৈকি।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
থর মরুভূমির বুকে স্নো ট্রাউট মাছ, জানাচ্ছে রাজস্থানের প্রাচীন নদীর হদিশ