প্রতিদিন ৪০০ কুকুরকে খাওয়ান এই ভদ্রমহিলা, থেমে নেই লকডাউনেও

রাস্তায় জটলা বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুরের দল। রোজই দুপুরে ওরা হাজির হয় কসবার এই জায়গায়। কেন? কী এমন বিশেষ কারণ? সেটা জানা গেল খানিক পরেই। এজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন ওদের দিকে। হাতে নীল রঙের বড়ো বালতি। কুকুরগুলো লেজ নাড়তে নাড়তে ওই দিকেই চলে গেল। ওই ভদ্রমহিলা বালতি ভর্তি মাংস-ভাত এগিয়ে দিলেন কুকুরদের দিকে। একটু খাক ওরা; এই লকডাউনের বাজারে তো খেতে দেওয়ার কেউ নেই! সম্প্রতি এমনই একটি ছবি ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে আপ্লুত সমস্ত মানুষ।

শুধু ওই একটাতেই নয়, কাছাকাছির মধ্যে আরও বেশ কয়েকটা জায়গাতে ওই ভদ্রমহিলা কুকুরদের খাবার খাইয়ে বেড়ান। ওরাও ঠিক বুঝে যায়। নয় নয় করে আজ চারশোরও বেশি কুকুরের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি! কখনও একবেলা, কখনও দুই বেলাতেই খাবার নিয়ে হাজির হন। মেনু ওই একটাই, মাংস-ভাত। রাস্তার ওপর বিছানো প্লাস্টিকের ওপর ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় সবটা। কখনও মাটিতে ফেলারও অপেক্ষা থাকে না। বালতি থেকেই খাওয়া শুরু হয়ে যায়। ভদ্রমহিলা একটু হাসেন। তিনি যে মা, বুঝতে পারেন ওদের কষ্টটা…

https://www.facebook.com/mukherjee.i/videos/3046569308697311/?sfnsn=wiwspwa&extid=UVJHGSY2niuVJJR0&d=w&vh=i

অবশ্য লকডাউন উপলক্ষে এমন আয়োজন, তেমনটা কিন্তু নয়। আগে থেকেই সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগেই এমনটা করছেন তিনি। প্রতিদিন অন্তত ২২ কেজি চাল আর ১৫ কেজি মাংস বরাদ্দ থাকে। সঙ্গে বাড়িতে থাকে দুটো বড়ো প্রেসার কুকার। এটাই তাঁর নিজস্ব ‘রান্নাঘর’। এখানেই চলে ওই বিশাল যজ্ঞের আয়োজন। কিন্তু এখন অনেক অসুবিধার সামনে পড়ছেন তিনি। একে বাড়ির অবস্থাও ভালো নয়; আর্থিক পরিস্থিতিও আলোর মুখ দেখছে না। এরপর রয়েছে পাড়া প্রতিবেশীদের গঞ্জনা। এই কাজে প্রতিনিয়ত বাধা দিচ্ছেন তাঁরা। কেউ কেউ সাহায্যেও এগিয়ে আসছেন বটে; তবে আবার বিপদেও ফেলছেন। রাস্তায় ভাত খাওয়াচ্ছেন বলে এলাকা নোংরা করার অভিযোগও তোলা হয়েছে ওই ভদ্রমহিলার বিরুদ্ধে। এমনকি, তাঁর এই বিশাল কাজের কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন অন্য একজন। সেই মর্মে পুলিশকেও জানানো হয়েছিল। তার ওপর পথ কুকুরদের ওপর অত্যাচার তো আছেই।

সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আজও একইভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সংসারে নিজেরই হাঁড়ির হাল, কিন্তু এই কুকুরগুলো যেন অভুক্ত না থাকে। কষ্ট করে হলেও, লড়ে যাচ্ছেন তিনি। খাবার নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন। সমাজে এমন মানুষ আছেন বলেই এখনও আশা দেখতে পাই আমরা। এঁরা আছেন বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর এখনও। আমরা কি পারি না এঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে, সাহায্য করতে? তাহলে কসবার এই ভদ্রমহিলার মতো আরও যারা আছেন, তাঁরা একটু ভরসা পান। সংসারটা যাতে ঠিক থাকে, সেটাই শুধু চাওয়ার…