থামল ৬৩ বছরের যাত্রা, আমেরিকা থেকে বাংলায় রেডিও সম্প্রচারে ইতি

তখনও মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে কোনো রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি। পাক শাসনে পূর্ববঙ্গের বুকে বাংলা ভাষায় কথা বলাই একরকম বন্ধ হতে বসেছে। সেখানে বাংলা ভাষায় কোনো রেডিও চ্যানেল সম্প্রচারের কথা তো ভাবাই যায় না। তারপরেও রেডিও চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাৎ থমকে গেলেন মানুষ। পরিষ্কার বাংলা ভাষায় খবর পড়া হচ্ছে। তাও আবার একেবারে পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তানের খবর। কোথা থেকে হচ্ছে সম্প্রচার? সীমান্তের ওপারে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কি? না, খোঁজ নিতেই জানা গেল এই খবর সম্প্রচার হচ্ছে খোদ আমেরিকার বুক থেকে। আর চ্যানেলটির নাম ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’।

১৯৫৮ সালের কথা। তখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন তেমন দানা বাঁধেনি। কিন্তু সামরিক আগ্রাসন শুরু হয়ে গিয়েছে ততদিনে। আর ঠিক সেইসময় বাঙালির নিজস্ব স্বরকে তুলে ধরতে নতুন একটি বিভাগ চালু করল মার্কিন বেতার সংস্থা ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’। ক্রমশ বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার সমস্ত বাঙালিদের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠল ভিওএ-র বাংলা বিভাগ। আর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে তো বটেই। আজ সেইসবই কার্যত ইতিহাস। এই সংবাদ যখন পাঠকরা পড়বেন, তখন তাঁরা চাইলেও আর একবার রেডিওর চ্যানেল ঘুরিয়ে খুঁজে পাবেন না বিভাগটি। কারণ, ৬৩ বছরের দীর্ঘ পথচলার শেষে অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল ভিওএ বাংলা বিভাগের রেডিও সম্প্রচার।

গত মঙ্গলবারই ইতিহাসের সমাপ্তির কথা জানিয়েছিল ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা এই রেডিও সংস্থাটির যাত্রাপথে অন্যতম উজ্জল রত্ন হয়েই ছিল তার বাংলা বিভাগটি। কালক্রমে রেডিও সম্প্রচারের পাশাপাশি শুরু হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেষন। নিজস্ব পোর্টালের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমের নানা রকমের চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে সংবাদ পরিবেষন করে চলেছে এই বিভাগ। উত্তরোত্তর তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেল তার আদি রূপটাই।

সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ভিওএ বাংলা বিভাগের। গত এক বছরে চ্যানেলটির টুইটার হ্যান্ডেলের ফলোয়ার বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। আর ইনস্টাগ্রাম পেজের ফলোয়ার বেড়েছে ২৭৪ শতাংশ। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ক্রমশ রেডিও সম্প্রচারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মানুষ। রেডিওতে শ্রোতার সংখ্যা তো কমছেই। এখন সেই চ্যানেল থেকে মুনাফা তো দূরের কথা, সম্প্রচারের খরচটুকুও উঠে আসে না। ফলে বাধ্য হয়েই রেডিও সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল সংস্থা। ১৭ জুলাই, সপ্তাহান্তের শেষ অনুষ্ঠানটির ভিতর দিয়ে একটি ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটল। তবে ভিওএ বাংলা বিভাগ বন্ধ হচ্ছে না। এখনও তার অস্তিত্ব বজায় থাকবে ইন্টারনেট মাধ্যমে। আমেরিকার বুকে বসেই বাংলা ও বাঙালির নিজস্ব সংবাদ পরিবেষন করে যাবে ভিওএ বাংলা বিভাগ। শুধু সেখানে বাঙালির ‘ভয়েস’ শুনতে পাবেন না কেউ।

আরও পড়ুন
বাংলা থেকেই জন্ম ‘বাংলো’র, ছড়িয়ে পড়েছিল ইউরোপ-আমেরিকাতেও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মহিলা এশিয়ান কাপে ম্যাচহীন যুবভারতী, আবার বাংলার সঙ্গে বঞ্চনা?

More From Author See More