এক ক্লিকেই জানা যাবে নামের অর্থ! ‘আরবান ডিকশনারি’-তে মজে নেটদুনিয়া

আপনার নামের অর্থ অথবা সংজ্ঞা কী কিংবা সংশ্লিষ্ট নামের ব্যক্তিদের চরিত্রই বা কেমন হয়— তা এক নিমেষে জানিয়ে দেবে ডিকশনারি। ডিকশনারি না বলে তাকে ওয়েবসাইট বলাই বোধ হয় শ্রেয়। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে ‘আরবান ডিকশনারি’ (Urban Dictionary) নিয়ে। সম্প্রতি, এই বিশেষ ডিজিটাল শব্দকোষ (Digital Dictionary) ব্যবহারের ধুম পড়ে গেছে নেটিজেনদের মধ্যে। স্ক্রিনশটে ছেয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া। অপার আগ্রহেই ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে ভাগ করে নিচ্ছেন নিজেদের নামের অর্থ, সংজ্ঞা এবং তার ব্যবহারিক প্রয়োগ।

সোমবার, বিশ্বজুড়ে ট্রেন্ডিং-এর তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছিল আরবান ডিকশনারি। কিন্তু এই শব্দকোষ আদতে কী? হঠাৎ কেনই বা তার প্রভাব আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ল ইন্টারনেট জুড়ে? উত্তর পেতে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েক বছর। দু’দশক আগে কথা। ১৯৯৯ সাল সেটা। ভারতে না সেইভাবে প্রভাব বিস্তার না করলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয় দেশগুলির নাগরিকদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল ইন্টারনেট। সেইসময়ই জন্ম আরবান ডিকশনারির। 

তখনও পর্যন্ত ডিজিটাল শব্দকোষ প্রকাশ করেনি অক্সফোর্ড। আসেনি গুগলের ট্রান্সলেটরও। তাই ইন্টারনেট অনুসন্ধানকারীদের ডিকশনারির চাহিদা মেটাতেই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ অ্যারন পেকহাম। ব্যক্তিগত উদ্যোগেই গড়ে তুলেছিলেন একটি ওয়েবসাইট। কোনো শব্দ লিখলেই তার অর্থ, ক্ষেত্রবিশেষে সংজ্ঞা এবং বাক্যে তার যথাযথ ব্যবহার প্রদর্শন করত ‘আরবান ডিকশনারি’-খ্যাত ওয়েবসাইট। 

কিন্তু একজনের পক্ষে কি আদৌ সম্ভব একটা আস্ত ডিজিটাল লাইব্রেরি গড়ে তোলা? তাও যেখানে জায়গা পেয়েছে একাধিক ভাষার শব্দ। কাজেই ব্যবহারকারীদের ওপরও বর্তেছিল শব্দ সংযোজনের দায়িত্ব। নিজের ইমেইল আইডি-র সাহায্যে যে কেউ-ই শব্দ সংযোজন করতে পারতেন এই ক্রাউডসোর্স ওয়েবসাইটে। আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় আরবান ডিকশনারির। অল্পদিনের মধ্যেই আরবান ডিকশনারি হয়ে ওঠে স্ল্যাং ডিকশনারি। তাছাড়াও মজা করেই বিভিন্ন শব্দের হাস্যকর অর্থও সংযোজন করতেন ব্যবহারকারীরা।

আরও পড়ুন
গান্ধী জয়ন্তীতে ট্রেন্ডিং ‘নাথুরাম গডসে জিন্দাবাদ’ – ট্যুইটারজুড়ে হিংসার ইঙ্গিত

সম্প্রতি, ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার ইউনুস সিসারের (@bymayuuu) নজরে আসে বিষয়টি। নিজের নামের অর্থ খুঁজতে গিয়েই রীতিমতো চমকে ওঠেন ইউনুস। প্রকৃত উর্দু শব্দটির অর্থ ‘পায়রা’। তবে আরবান ডিকশনারি অনুযায়ী ইউনুস হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি বাসকেটবল খেলতে এবং বন্ধুত্ব তৈরি করতে ভালোবাসেন। নিজের নামে এহেন অর্থ খুঁজে পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রিনশট শেয়ার করেছিলেন খ্যাতনামা ইনফ্লুয়েন্সার। ফলোয়ারদেরও এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করাতে উদ্দীপিত করেন ইউনুস। তারপরেই হঠাৎ করে বদলে যায় ইন্টারনেটের চেহারা। টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আরবান ডিকশনারির ছবি। মানুষের নামের বিটকেল সব অর্থ। মাত্র একদিনের মধ্যেই আরবান ডিকশনারির দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় ২৯ লক্ষে। এমনকি শব্দের সঙ্গে মানানসই স্টিকারও সংযোজন করেন বহু ব্যবহারকারী। কেউ আবার সংযোজন করছেন বন্ধুর নামের মজাদার বা উত্তেজক অর্থ। 

আরও পড়ুন
লকডাউনে ট্রেন্ডিং 'ডালগোনা কফি', গোটা এশিয়া ঘুরে ফিরল ভারতেই

কিন্তু সময় নিয়ে এই ওয়েবসাইট একটু ঘাঁটলে এখনও বহু শব্দের অর্থবহ ও যথাযথ সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর তার বেশিরভাগটাই সংযোজিত হয়েছিল একুশ শতকের প্রথম দশক থেকে দ্বিতীয় দশকের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে। এই ডিজিটাল শব্দকোষ একটা সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে যে সত্যিই সাহায্য করত শব্দের অর্থ খুঁজতে— তাতে সন্দেহ নেই কোনো। এক লহমায় তার এই চরিত্রবদল এবার বেশ কষ্টসাধ্য করে তুলল শব্দ অনুসন্ধানকারীদের কাজ…

আরও পড়ুন
একই সিনেমার তিনটে ভাষায় মুক্তি, একাধিক ট্রেন্ড তৈরি করেছিল ‘মুঘল-ই-আজম’

Powered by Froala Editor