একদিনে প্রায় আট হাজার করোনা আক্রান্ত, কোনদিকে এগোচ্ছে দেশ?

মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। রাস্তায় সামান্য একটু বেরোলে বা ছাদে দাঁড়িয়ে দেখতেন, আপনার চেনা রাস্তাটা কেমন ফাঁকা হয়ে আছে। মাঝে মাঝে একটা দুটো গাড়ি, সামান্য চাল কিনে ফেরা মধ্যবিত্ত, আর অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ— এটাই ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘরের মধ্যে বন্দি দশা সবার। কোথাকার একটা ক্ষুদ্রস্য ক্ষুদ্র ভাইরাস, সে কিনা সভ্যতার শ্রেষ্ঠ জীবকে খাঁচার ভেতর বন্ধ করে রাখল? এরপর এল আমফান, এল পঙ্গপাল। মানব সভ্যতা বোধহয় শেষই হয়ে যাবে! হঠাৎই এতদিনের ফাঁকা রাস্তা আবার ভরতে শুরু করল। গাড়ি-ঘোড়া বহাল তবিয়তে বেরোতে লাগল। লকডাউন? থোড়াই কেয়ার… 

এত সব বলা কেন? এটাই ভাবছেন নিশ্চয়ই! কারণ গতকালের একটি তথ্য, যেটা আমার আপনার সবার জানা দরকার। করোনা ভাইরাস যে বিশ্ব থেকে নিজের থাবা সরায়নি, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল অর্থাৎ ২৯ মে ভারতে করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছে ৮,১০৫ জন! একদিনে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে রেকর্ড! এবং এই সংখ্যাটা যে বাড়ছে সেটা কয়েকদিনের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। নতুন করে মারাও গেছেন ২৬৯ জন। সব মিলিয়ে ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৭৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃত্যু? পাঁচ হাজার ছুঁইছুঁই! এই প্রতিবেদন যখন পড়বেন, তখন হয়ত এই সংখ্যা বদলে যেতে পারে। 

এই যে এত তথ্য দেওয়া হল, একে পাশে রেখে একবার বাইরে আসুন। কিছু বুঝতে পারবেন? না, বোঝার উপায় নেই। অন্যান্য দিনের মতোই যানবাহন চলছে, লোকজনও বেরোচ্ছে বহাল তবিয়তে। এরই মধ্যে লকডাউনের নিয়ম শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আরও নাকি শিথিল করে দেওয়া হবে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে তো ধর্মস্থানও খুলে যাচ্ছে জুন থেকে। এর পরের পরিস্থিতিটা কোথায় যেতে পারে, ভেবে দেখেছি? যে কড়াকড়ি শুরু হয়েছিল প্রথমদিকে, সেসব তো প্রায় কিছুই নেই। এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। আমরা কি সেই কথা ভুলেই গেছি? 

অবশ্য পাল্টা হিসেবে অনেকেই বলবেন, অর্থনীতি থমকে আছে দেশের। এত সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক, তাঁদের হাহাকারের ছবি ছড়িয়ে আছে সব জায়গায়। চাকরি হারাচ্ছেন বহু মানুষ। ঘরে খাবার নেই। এই অবস্থায় লকডাউন কতদিন টানা যায়? এসব ‘বিলাসিতা’ না? অর্থনীতির কথা তো ঠিকই। কিন্তু সেটা আমার-আপনার থেকেও অনেক বেশি ভাবা জরুরি সরকারের। পূর্ব পরিকল্পনা না করে, প্ল্যানিং না করে একটা লকডাউন ঘোষণা করা— আখেরে অন্যদিক দিয়ে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এল। ব্যুমেরাং বদলে গেল সাঁড়াশিতে। করোনা, দারিদ্র্য তো নয়; হাজির হয়েছে আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সব মিলিয়ে বেসামাল পরিস্থিতি। তা বলে সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে বসে থাকব? যখন নতুন করে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে, তখন কি রাশ টানা জরুরি নয়? 

সব শেষে আসে আমাদের, অর্থাৎ জনগণের কথা। পরিবহণ সচল করতে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০ জন করে, অথবা বাসের যত সিট তত জন করেই যেন নেওয়া হয়। বদলে আমরা কী দেখলাম? অফিস টাইমের বাদুড়ঝোলা ভিড়! কোথাও চালক-কনডাক্টর যাত্রী নিতে না চাইলে তাঁদের ওপর চড়াও হওয়া। শুধু বাস নয়, একই জিনিস অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমরা নিজেরা ঠিকভাবে মেনেছি? সমালোচনা করার আগে নিজেরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করি। কোন পরিস্থিতি দেখতে চলেছে আগামী ভারত? কোথায় যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি? আলো না ঘোর অন্ধকার; জানা নেই… 

(মতামত লেখকের নিজস্ব) 

Powered by Froala Editor

More From Author See More