মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম ভারতীয় তিনি, আমৃত্যু কাটিয়েছেন সেখানেই

আমেরিকা— অনেকের কাছে এক স্বপ্নের জায়গা। প্রতি বছর নানা দেশ থেকে মানুষজন সেখানে যাচ্ছেন। কেউ নিছক ঘুরতে, আনন্দ করতে; কেউ বা চাকরিসূত্রে। ভারত থেকেও বহু বছর ধরে যাচ্ছেন সবাই। অনেকে সেখানকার নাগরিকত্বও নিয়ে নিচ্ছেন। ঠিক এইরকমই ভাগ্য পরীক্ষায় সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন একজন অখ্যাত, সাধারণ ভারতীয়। এই গল্প আজ থেকে ১৩০ বছর আগের। আমেরিকার সঙ্গে এখানে জুড়ে আছেন সেই মানুষটি, এডুলজি সোরাবজি। 

গল্পটা শুরু হচ্ছে ১৮৯০ থেকে। তার দশ বছর আগে থেকে আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছে লস অ্যাঞ্জেলেস। আজকের ঝাঁ-চকচকে, আধুনিক শহরটি তখন উত্তরণের পথ খুঁজছে। নতুন জায়গা, নতুন শহর। সঙ্গে নতুন কাজের ক্ষেত্র খুলে যাচ্ছে। সমস্ত জায়গা থেকে মানুষরা আসতে শুরু করল আমেরিকায়। ‘গোল্ডেন রাস’-এর নতুন অধ্যায় শুরু হবে এবার। 

সেই ভিড়েই ঢুকে গেলেন এডুলজি সোরাবজি। আদতে পার্সি এই ভদ্রলোক জন্মেছিলেন ভারতে; মুম্বই নিবাসী। ব্যবসা করার ইচ্ছা প্রবল। কম বয়সেই জড়িয়ে পড়েছিলেন নানা কাজে। সোজা চলে গিয়েছিলেন ল্যাঙ্কশায়ার। এটি তখন ব্রিটেনের তুলো শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। সেখান থেকে কারিগরি শিক্ষায় বিশেষভাবে দক্ষ হয়ে শুরু করেন কাজ। নয় বছর ইংল্যান্ডের জীবনে শুধু তুলো আর ব্যবসা নিয়েই থাকেননি, পাঁচ পাঁচটি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনও করেন! পরে ভারতে আসার পর আমেরিকার দিকে নজর যায় তাঁর। সেই শুরু স্বপ্নের যাত্রাপথের। 

১৮৮৫ সালে নিউ ইয়র্ক ও পরে লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছন এডুলজি সোরাবজি। সেখানেই আমৃত্যু বসবাস তাঁর। তখন এত ভিসার কড়াকড়ি ছিল না। ১৮৯০ সালে সেখানকার নাগরিকত্বও পেয়ে গেলেন তিনি। সেই সঙ্গে ইতিহাসেও নাম উঠে গেল তাঁর। এডুলজি সোরাবজি হলেন সেই প্রথম ভারতীয়দের একজন, যিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন, তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি। লস অ্যাঞ্জেলেসের শুরুর সময় তখন। কাজেই অনেক কিছুই শুরু করা যায় সেখানে। আর সেই সব সম্ভাবনাই ধরা পড়েছিল অভিজ্ঞ এডুলজির চোখে। 

একদিকে সোনা, অন্যদিকে বিশাল সব জমি। চাষ তো বটেই; অন্যান্য কারখানা ও রিয়্যাল এস্টেট শিল্পের জন্য আদর্শ জায়গা হয়ে উঠল মার্কিন মুলুক। সেখানে নাগরিকত্ব নিয়ে বেশ টাকাকড়িও করে ফেললেন তিনি। তবে আসল ব্যাপারটা লুকিয়ে আছে সেই নাগরিকত্বে। মার্কিন প্রদেশের শুরুর সময়ের নিয়ম ছিল, যারা ‘ফর্সা চামড়ার’, তাঁরাই শুধু নাগরিকত্ব পাবে। ১৮৭০ সাল থেকে আফ্রিকান-আমেরিকানরাও সেই অধিকার পেতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, এশিয়ানদেরও খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হত না। সেই পরিস্থিতিতে এডুলজি সোরাবজি’র নাগরিকত্ব পাওয়াটা একটা বড়ো ব্যাপার। সম্ভবত তিনিই ছিলেন মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া প্রথম দক্ষিণ এশীয়। সেটা কি তাঁর বুদ্ধির জন্য, পার্সি পরিচিতিটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য? জানা যায় না। কিন্তু এডুলজি ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি খোদাই করে গেছিলেন। 

Powered by Froala Editor