আমফানের দাপটে স্থলভাগে এসে পড়েছে সামুদ্রিক পাখি, অভাব খাদ্য এবং আশ্রয়ের

লকডাউনের কড়াকড়ি ক্রমশ শিথিল হয়ে আসছে, তাই বাড়ি থেকে বেরোলেই এখন আর কারণ দেখাতে হয় না। আবার নাগরিক ব্যস্ততাও নেই পথেঘাটে। এমন সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে নানা ধরনের পাখি দেখতে বেরোচ্ছেন অনেকেই। সঙ্গে থাকছে ক্যামেরা। বহু পরিচিত, অপরিচিত পাখি কীভাবে আকাশটা ঢেকে রেখেছে, ভাবতেও অবাক লাগে। তবে এর মধ্যেই আপনার চোখে পড়তে পারে, স্থলভাগের দিকে চলে এসেছে এমন কিছু পাখি, যাদের আদৌ এখানে থাকার কথা নয়। এরা সামুদ্রিক পাখি। সমুদ্রের বুকে অথবা সমুদ্র মধ্যবর্তী দ্বীপে দেখা যায় এদের। জলের অনেক গভীরে গিয়ে মাছ শিকার করে। স্থলভাগের পরিবেশের সঙ্গে তারা আদৌ পরিচিত নয়। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, হঠাৎ তবে তারা এখানে এসে পড়লো কীভাবে?


এসে পড়ার কারণ আর কিছুই নয়, কিছুদিন আগে দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে যে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফান, তারই ধাক্কায় নিজেদের বাসস্থান হারিয়েছে এইসব সামুদ্রিক পাখিরাও। জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশপরগনা, কলকাতা এমনকি হাওড়া ও হুগলি জেলাতেও বেশ কিছু সামুদ্রিক পাখির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। অনেক পক্ষী বিশারদও দেখেছেন তাদের।


দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় দেখতে পাওয়া এইসব সামুদ্রিক পাখির মধ্যে আছে ফ্রিগেটবার্ড, টার্ন এবং সিয়ারওয়াটারের মতো প্রজাতি। লক্ষাদীপ অঞ্চলে বা ভারত মহাসাগরের জাহাজ থেকে দেখা যায় এইসব পাখি। এর মধ্যে সিয়ারওয়াটার প্রজাতির পাখি অবশ্য মাঝে মাঝে সুন্দরবনের উপকূল অঞ্চলে ধরা দেয়। কিন্তু বাকিরা কেউই মূল ভূখণ্ডের আশেপাশেও আসে না। আর একদম অপরিচিত এই পরিবেশে তাই স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পড়েছে বহু পাখি। খাদ্যের অভাবে বেশ কিছু পাখির মৃত্যুও অসম্ভব নয়। 


ইতিমধ্যেই মেদিনীপুর জেলায় ভয়ানক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা  হয়েছে একটি ফ্রিগেট পাখিকে। সারা দক্ষিণবঙ্গে এমন অসংখ্য পাখি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু লকডাউন এবং টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার গোলযোগের কারণে সমস্ত খবর সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্বস্তির বিষয়, আমফান এসেছে গ্রীষ্মের শুরুতে। যখন পরিযায়ী পাখির গতিপথ হাওয়ার দিকেই। অন্যথায় যে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হত, তা কল্পনা করতেও অস্বীকার করছেন পরিবেশ কর্মীরা।

Powered by Froala Editor

More From Author See More