একসময়ের শিকারিদের তত্ত্বাবধানেই গড়ে উঠেছিল দেশের প্রথম ‘গ্রিন ভিলেজ’

করোনা ভাইরাসের সঙ্গে আসতে চলেছে খাদ্যাভাব। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে সতর্কতা জানিয়েছে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। লকডাউনের ফলে কাজ নেই, উৎপাদনও বন্ধ। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও বেশ নিশ্চিন্ত প্রকৃতির মধ্যে থাকা মানুষরা। এই দুর্দিনেও তাই আশার আলো দেখাচ্ছে ভারতের প্রথম গ্রিন ভিলেজ, খোনামা।

নাগাল্যান্ডের পর্বতের ঢালে একটি নিরিবিলি ছোট্ট গ্রাম ছিল খোনামা। থাকত কয়েক ঘর আঙ্গামি উপজাতির মানুষ। জীবিকা বলতে জঙ্গলে শিকার করা এবং জঙ্গল ধ্বংস করে ঝুম চাষ করা। তবে ৯০-এর দশকের শুরু থেকেই ছবিটা বদলাতে থাকে। গ্রামের মধ্যেই অনেকে প্রচার শুরু করেন, জঙ্গলকে শত্রু না ভেবে তো বন্ধু বানিয়েও তোলা যায়। আদিবাসীদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আর ১৯৯৮ সালে এখানেই তৈরি হল ট্রাগোপান অভয়ারণ্য। 

২০ বর্গ কিলোমিটারের এই অভয়ারণ্যে বাস করে অসংখ্য বিরল প্রজাতির চিতা, ভাল্লুক, গীবন এবং প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি। যে অঙ্গামি উপজাতির মানুষ এতদিন জন্তুদের শিকার করে বেঁচে থাকত, তারাই হয়ে উঠল জঙ্গলের রক্ষক। এভাবেই মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থান গড়ে উঠল নাগা উপত্যকায়। আর এই বিরল বাসস্থান দেখতে স্বাভাবিকভাবেই ভিড় জমান নানা দেশের মানুষ।

পাহাড়ের ঢালে সামান্য কৃষিকাজ বাদ দিলে, পর্যটনই খোনামা গ্রামের মানুষের বর্তমান জীবিকা। গতবছর এই গ্রামে এসেছিলেন ৪০০০এর বেশি পর্যটক। আর তাঁদের আপ্যায়নের বিনিময়েই আসে উপার্জন। কিন্তু এবারে গ্রীষ্ম রীতিমতো প্রখর হয়ে ওঠার পরেও খোনামা গ্রামে পর্যটকদের দেখা নেই। কারণ দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। আর এই পরিস্থিতিতে অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে। কারণ লকডাউনের ফলে চোরাশিকারিদের পক্ষে মৃতদেহ পাচার করা সম্ভব হবে না। 

তবে এতে আশঙ্কিত নন গ্রামবাসীরা। আর তার কারণ, তিন দশক আগে যে জীবনে প্রবেশ করেছিলেন খোনামা গ্রামের মানুষ, সেখানে আর যাই থাকুক খাদ্যাভাব নেই। জঙ্গল সুরক্ষিত থাকায় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তার ফলে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। আগামী এক বছর কোনো কারণে কৃষিকাজ বন্ধ থাকলেও চিন্তিত হবেন না খোনামা গ্রামের মানুষ। অবশ্য করোনা পরিস্থিতিতে সেখানকার কৃষিকাজ বন্ধ হয়নি।

Powered by Froala Editor