অবলুপ্তির মুখ থেকে ফিরছে পৃথিবীর বৃহত্তম জলচর ব্যাঙ, উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা

দক্ষিণ আমেরিকার সব থেকে বৃহত্তম এবং পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম নাব্য হ্রদ হল তিতিকাকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় আন্দিজ পর্বতের পিঠে অবস্থিত এই হ্রদের আয়তন প্রায় ৩২০০ বর্গ মাইল। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই তিতিকাকা লেকেই বসবাস পৃথিবীর বৃহত্তম জলচর ব্যাঙের। যা পরিচিত তিতিকাকা ফ্রগ বা ক্রোটাম ফ্রগ নামেই। তবে বিগত দুই দশকে কমতে কমতে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকায় নাম লিখেয়েছিল এই ব্যাঙ। সম্প্রতি তিতিকাকা হ্রদে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন এর অস্তিত্ব।

স্ক্রোটাম ফ্রম নামে পরিচিত হলেও এর বিজ্ঞান সম্মত নাম টেলমাটোবিয়াস সেলুয়াস। তবে এদের দেহে ঝুলে থাকা, ভাঁজ হওয়া চামড়ার কারণেই এই এমন নাম। যা অন্য যে কোনো অ্যাম্ফিবিয়া গোষ্ঠীর প্রাণীদের থেকে আলাদা করে এই বিশেষ ব্যাঙটিকে। দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ সেমি বা ৮ ইঞ্চি অবধি লম্বা হয় এই ব্যাঙগুলি।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারনেশনাল ইউনিয়ন ফর কনসার্ভেশন অফ নেচার’ তাদের সমীক্ষায় জানিয়েছিল, ১৯৯৪ থেকে ২০০৪ - এই এক দশকের মধ্যে স্ক্রোটাম ফ্রগের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। ২০০৪ সালের পরে আরও দ্রুত হ্রাস পেতে পেতেই রেডবুকে জায়গা হয়েছে এই প্রাণীর। বলিভিয়া এবং পেরুর সীমান্তে অবস্থিত এই তিতিকাকা লেক। বলিভিয়ার অংশ থেকে ইতিমধ্যেই ৯০ শতাংশ স্ক্রোটাম ফ্রগই অবলুপ্ত হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে ‘ক্রিটিকালি এনডেনজার স্পিসিস’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এই ব্যাঙকে। তারপর থেকে মানুষের নজরে খুব একটা পড়েনি এই প্রাণীর অস্তিত্বের ইঙ্গিত।

এই অবলুপ্তির পিছনেও রয়েছে মানুষের হাত। তিতিকাকা হ্রদে চাষ করা হয় ট্রট মাছের। এই মাছের মূল খাদ্যই হল স্ক্রোটাম ফ্রগের ব্যাঙাচি। অত্যাধিক চাষ করার ফলে এই বিশেষ প্রজাতির বংশবৃদ্ধি থেমে গেছে প্রায়। পাশাপাশি দূষণের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত এদের বাসস্থানও। কলকারখানার আবর্জনা এবং আশেপাশের অঞ্চলের নর্দমার জলও ফেলা হয় এই হ্রদে। ফলে ধীরে ধীরে বাস অযোগ্য হয়ে উঠেছে তিতিকাকা হ্রদও। ২০১৬ সালে একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজারের বেশি স্ক্রোটাম ফ্রগ মারা গিয়েছিল আকস্মিকভাবেই।  

আরও পড়ুন
সম্পূর্ণ বিলুপ্তির মুখে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের দৈত্যাকার তিমির প্রজাতি

বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে এই প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। গত কয়েক বছরে পেরু এবং বলিভিয়া সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল এই বিশেষ প্রজাতির সংরক্ষণের। সংরক্ষণের কাজে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার চিড়িয়াখানাও। সেখানে বেশ কয়েকটি এই প্রজাতির প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। গত বছরই ডিম ফুটে জন্মেছিল প্রায় ২০০টির মত ব্যাঙ। তবে শুধু চিড়িয়াখানায় নয়, প্রাকৃতিকভাবেও কীভাবে এদের সংরক্ষণ সম্ভব তা নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছে ডেনভার চিড়িয়াখানা। এরই মধ্যে তিতিকাকায় আবার স্ক্রোটাম ফ্রগের দেখা পাওয়ায় আশাবাদী পরিবেশবিদরাও...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে কচ্ছপ ও কাছিমের অধিকাংশ প্রজাতি, চিন্তিত প্রাণীবিদরা