নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে কৃত্রিম আলো – বিলুপ্তির পথে জোনাকিরা

গোটা বিশ্বের সাহিত্যে, সিনেমায়, ছবিতে নানাভাবে উঠে এসেছে এরা। শুধু সেখানেই নয়, সন্ধে হলেই আমাদের চারপাশেও প্রচুর দেখা যেত এদের। ঘন অন্ধকারে, চারিদিক ঝিকমিক করে উঠলে বোঝা যেত, এসেছে ওরা। জোনাকি। এখন এদের সংখ্যা খুবই কমে গেছে। তবে শুধু বাংলায় নয়, জোনাকিদের এই সংকট বিশ্বজোড়া।

সম্প্রতি বায়োসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই সমস্যার কথাই উল্লেখ করেছে। টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী সারা লুইস এই গবেষণায় বলেছেন, যত বেশি কৃত্রিম আলোর ব্যবহার বাড়ছে, ততই বিপদে পড়ছে জোনাকিরা। এমনিতে এই পোকারা যেকোনো জায়গায় টিকে থাকতে পারে। কিন্তু তার জন্য একটি পরিবেশ দরকার। খাদ্য দরকার। দরকার প্রজননের পরিবেশও। সেই সমস্ত কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানী।

বিশ্বে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি জোনাকির প্রজাতি রয়েছে। তারা নিজেদের শরীরেই একটি বিশেষ রাসায়নিকের সাহায্যে আলো তৈরি করতে পারে। যার জন্য সবার কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এরা। জলাভূমি, বনাঞ্চল, ঝোপঝাড় কমে আসায় এদের অস্তিত্বও সংকটে পড়েছে। আমরা নিজেরাও সেটা দেখতে পাই। মাত্র কয়েক বছর আগেও যে পরিমাণে জোনাকি দেখা যেত, আজ সেই সংখ্যা এক লাফে অনেকটা কমে গেছে। শুধু জঙ্গল কমা বা বসতি বেড়ে যাওয়াই নয়, কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহারেও এদের ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘জোনাকি পর্যটন’। ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো আরও কিছু জায়গায় এই বিশেষ পর্যটনের জন্য প্রতি বছর ভিড় জমায় হাজার হাজার দর্শক। আর এর জন্য ব্যাহত হচ্ছে জোনাকিদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। ফলস্বরূপ, তারা আজ বিলুপ্তির মুখে।

ইতিমধ্যেই এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার ১০টি জোনাকির প্রজাতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিদের অবস্থাও খুব খারাপ। অন্ধকারে জোনাকির আলোর সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট তো হই সবাই। কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস কি নিই আমরা? ক্রমশ বদলে যাওয়া পরিবেশেও মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে এই ছোট্ট পোকাদের। তাহলে কি শুধু গল্পে, ছবিতেই থাকবে জোনাকির উপস্থিতি? প্রশ্ন থাকল সবার কাছে…