বাবুল গাম কি কাহানি: ফেলে আসা কৈশোর ও এক অনবদ্য আবিষ্কারের গল্প

এমন একটা ফুঁ, যা আগুন নেভানোর জন্য নয়। অথচ সেই সহজ ফুঁয়ে ‘বেলুন’ ফোলে। ‘বড়ে বড়ে বাবল বড়ে আসান’― মনে পড়ে? জিঙ্গল জাগানো বিজ্ঞাপন। যা দেখে এবং শুনে আমি-আপনি প্রায় প্রত্যেকেই এককালে মেতে উঠেছিলাম। এতটাই উন্মাদনা তৈরি করেছিল এই বিজ্ঞাপন যে, বাচ্চারাও পর্যন্ত বেশ মজা করে ফুঁ দেওয়া প্র্যাকটিস করত। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, এই লেখা কোন বিষয়ে। ঠিকই ধরেছেন, বাবল গাম হল এই লেখার বিষয়।

ভারতে কিন্তু চুইংগাম একদিনে জনপ্রিয়তা পায়নি। ’৭০ বা ’৮০-র দশকে তা ছিল মূলত টিন-এজার্স বা বলিউড স্টারদের জন্য। ব্যাঙ্গালোরে (বেঙ্গালুরু) এনপি’স ০০৭ বাবল গাম ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড। তাদের বিজ্ঞাপনও সমানভাবে জনপ্রিয় ছিল। এরপরে আসে ‘বিগ ফান’, যা ১৯৮৩-র ২৪ অক্টোবর চেন্নাইয়ে লঞ্চ হয়েছিল। ওই বছরেরই ৬ নভেম্বর টিভি চ্যানেল ‘ডিডি’-তে বিগ ফানের প্রথম বিজ্ঞাপনের সম্প্রচারের পরে গোটা ভারতে প্রেক্ষাপট বদলে দিয়েছিল। বাবল গাম চিবিয়ে স্রেফ ফুঁ দিয়ে মুখের মধ্যে বেলুন ফোলানো যেত। এরপর হার্ড ক্যান্ডি, টফি বা লজেন্সের সঙ্গে আমজনতা বেশ সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বিগ ফানের বাবল গামকে। এর চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, নির্মাতারা তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টাতেও চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না। সে-সময় বাজার দখল করে নিয়েছিল বিগ ফান। কেমন ছিল সেই ‘মহার্ঘ’র চেহারা? আয়তাকার। রং ছিল গোলাপি। মনে আছে, আমরা ছোটোবেলায় মুখে বেলুন ফোলানোর জন্য আগে বেশ কিছুক্ষণ চিবিয়ে নিতাম। ভালোই লাগত, কারণ স্বাদ ছিল মিষ্টি। তারপর মুখে বেলুন (কেউ বলত বুদ্বুদ) ফোলানোয় ছিল হিরো বনে যাওয়ার মতো কৃতিত্ব। আর হ্যাঁ, বাবল গাম আদরে বা অপভ্রংশে হয়ে গিয়েছিল ‘বাবুল’ গাম। বড়ো নস্টালজিক সেই সব দিন।

১৯৭৮-এ র্যা ন্ডাল ক্লেইজারের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘গ্রিস’। কিংবা ১৯৮৫-তে জন হিউজের পরিচালনায় ‘দ্য ব্রেকফাস্ট ক্লাব’। এইসব সিনেমার চরিত্রেরা বাবল গাম চিবিয়েছেন। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। মহামারির হানায় বাবল গামের ব্যবসাতেও যেন ‘মহামারি’ চলছে। মাস্ক ঢেকে দিয়েছে মুখকে। তাই মুখ বন্ধ। আর মুখ বন্ধ হলে চিবানোও বন্ধ। কোনও জিনিস চিবিয়ে তা এখন থুতুর মতো করে ফেললে থাকছে সংক্রমণের ভয়। তাই হয়তো পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় ২০২০ সালে গাম বিক্রি ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং, আগে পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে যে ছোকরাটি বেশ কামুক মন নিয়ে বাবল গাম চিবাত, সে বিনা চব্যে মনকষ্টে ভুগছে।

ওয়াল্টার ডাইমার

এমন চিবানোর কিন্তু দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন গ্রিসের মানুষ ম্যাসটিক গাছের আঠালো ছাল চিবাতেন। প্রাচীন মায়ান জাতি স্যাপেডিলা গাছের কষ বা চিকল চিবাতেন। আর প্রাচীন ভারতীয়রা চিবাতেন স্প্রুস গাছের রসালো ছাল। ১৯ শতকে মেক্সিকান স্যাপেডিলা গাছের রজন বা বৃক্ষের অবশিষ্ট শুষ্ক নির্যাস নিউ ইয়র্কে এসেছিল। অত্যন্ত পরিচিত এই ফল বাংলায় ‘সফেদা’ নামে পরিচিত। গাছটির ছালে সাদা আঠালো কষ থাকে, যা ‘চিকল’ নামে পরিচিত। দুধের মতো কষগুলো বেশ আঠালো হয়। একসময় এটি চুইংগাম শিল্পখাতে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হত। অ্যাজটেক সভ্যতার মানুষ এখনকার চুইংগামের মতো করে যা চেবাত, তা তৈরির কাঁচামাল ছিল এই গাছের কষ। উনিশ শতকে মার্কিনিরা চটচটে এই জিনিসটা বিক্রির উপায়ও পেয়ে গেলেন। স্থানীয় গাম উদ্যোক্তারা সেই চিকলকে ভিত হিসাবে ব্যবহার করে তাতে বিভিন্ন স্বাদ যুক্ত করতে শুরু করলেন। প্রস্তুতকারকরা মোড়কে মোড়া চিকল নিয়ে এলেন, যা সস্তা ছিল। পরবর্তীতে তাঁরা সুগার ফ্রি গামও বাজারে আনেন।

১৯২৮ সালে পেনসিলভানিয়ার বৃহত্তম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম জনবহুল শহর ফিলাডেলফিয়ার ফ্লিয়ার চুইংগাম কোম্পানির হিসাবরক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ওয়াল্টার ডাইমার। সেই সময় খরচ কমানোর জন্য তিনি নতুন গাম রেসিপি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন ‘ব্লিবার ব্লাবার’ নামে একটি চুইংগামের ফর্মুলার উপর ভিত্তি করে। চুইংগামের চেয়ে কম আঠালো সহজপাচ্য একটি বস্তু তৈরি হয়। এরপর প্রসিদ্ধ কোম্পানি দ্য ফ্লিয়ার কর্পোরেশন (১৮৮৫-তে ফ্রাঙ্ক এইচ ফ্লিয়ার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন)-এর সভাপতি এর নামকরণ করেন ‘ডাবল বাবল’। সফলভাবে প্রথম বাবল গাম তৈরির কারখানা ছিল এই কোম্পানিই। এর রং ছিল গোলাপি। ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভানিয়ায় জন্মানো বেড়ে ওঠা ডাইমারের বাবল গাম উইসকনসিন স্বীকৃত। ডাইমার তাঁর অবসর সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতেই কাকতলীয়ভাবেই তৈরি করে ফেলেছিলেন বাবল গাম। এর রং ছিল গোলাপি। কারখানার বা ফুড কালার বা রং সংযোজক ছিল গোলাপি। যে রঙে শিল্পের মানও নির্ণয় করত। এ-কারণে বাবল গামের রং গোলাপি রেখেছিলেন ডাইমার। এখনও বেশিরভাগ বাবল গামের রং গোলাপিই হয়, হয়তো এখন তা ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে।

স্ট্যান্ডার্ড চুইংগামের তুলনায় এটি কম আঠালো ছিল, যা মুখে লেগে থাকবে না, সহজে প্রসারিতও হবে। এমন যে হতে পারে, সেই পথ দেখিয়েছিলেন ডাইমার। একটি সল্ট ওয়াটার ট্রফি র্যা পিংয়ে একশো বাবল গাম প্যাক করেন তিনি। এরপর সেগুলি স্থানীয় এক মম-অ্যান্ড-পপ ক্যান্ডি স্টোরে নিয়ে যান। এক সেন্টের একরত্তি দামের এই বাবল গাম একদিনেই বিক্রি হয়ে যায়। ফ্লিয়ার কোম্পানি নতুন এই গামকে ‘ডাবল বাবল’ হিসেবে বাজারজাত করতে শুরু করে। ডাইমার নিজেই বিক্রয়কর্মীদের শিখিয়েছিলেন যে, কীভাবে এই ডাবল বাবল চিবাতে হয়। অন্য সব চুইংগামের থেকে যে এই ডাবল বাবল আলাদা, তা-ও দেখিয়ে দিয়েছিলেন ডাইমার। এক সেন্ট এক পিসের দামে বিক্রি হওয়া ডাবল বাবলের বিক্রি প্রথম বছরে ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাপিয়ে যায়। ১৯৩০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী মহামন্দার সময় বাবল গাম খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময় সস্তার খাদ্যবস্তুটির চাহিদা আকাশ ছোঁয়। তবে, ঘটনাচক্রে ডাইমার তাঁর আবিষ্কারের জন্য কখনও কোনও পেটেন্ট চাননি।

তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ফ্লোরেন্সের মতে, ওয়াল্টার ডাইমার কখনও তাঁর আবিষ্কারের জন্য রয়্যালটি পাননি। যদিও এ-নিয়ে কোনও আপশোস ছিল না তাঁর। ফ্লোরেন্স আরও জানিয়েছিলেন যে, তিনি ফিলাডেলফিয়া এবং স্পেনের বার্সেলোনাতে বাবল গাম গাছ পোঁতার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এই বাবল গামের বিপণনের জন্য গোটা বিশ্ব ঘুরেছিলেন। তিনি কয়েক দশক ধরে ফ্লিয়ারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফ্লিয়ার কর্পোরেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বোর্ড অব ডিরেক্টর পদেও পৌঁছেছিলেন। ১৯৭০-এ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এর পরে আরও পনেরো বছর তিনি বোর্ডে ছিলেন। ১৯৯০-এ তাঁর প্রথম স্ত্রী অ্যাডিলেডের মৃত্যুর পর ডাইমার তাঁর শেষজীবন পেনসিলভানিয়ায় কাটান। তখন একটি বড় ট্রাইসাইকেলে সেখানকার গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিশুদের বাবল গাম বিতরণ করতেন তিনি। ১৯৯৬-এ ডাইমার ‘ল্যাঙ্কাস্টার ইন্টেলিজেনসাস’ জার্নালের এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বাবল গাম তৈরি ছিল নিছকই এক দুর্ঘটনা। ১৯৯৮-এ তাঁর ৯৩তম জন্মদিনে ল্যাংকাস্টার, পেনসিলভেনিয়ায় কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওরের কারণে প্রয়াত হন। ‘স্যাটারডে নাইট’ লাইভ মজা করে বলেছিল, ডাইমারের মৃতদেহ একটি সিনেমা হলের সিটের নিচে আটকে আছে।

 

আসব, বিগ ফানের কথায়। ’৮০-র দশকের মাঝামাঝি বিগ ফান বাবল গামের মোড়কের পিছনে ডিজনির চরিত্রেরা শোভা পেল। এতে শিশুরা আকৃষ্ট হল। ১৯৮৭-র বিশ্বকাপ ক্রিকেট যখন নাকের ডগায়, সেই সময় প্রমোশনাল চালু করেছিল এই বিগ ফান। বিগ ফান বাবল গামের সঙ্গে প্রিয় ক্রিকেটারদের ছবি যুক্ত কার্ড দেওয়া শুরু হল তখন থেকেই। যা পরবর্তীতেও ছিল। আমাদের স্কুলজীবন মনে করায় এইসব ট্রাম্প কার্ড। একেকটা বিগ ফান কিনলে একেকটা কার্ড পাবার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতাম আমরা। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে চুপিচুপি বিগ ফান কিনে কতবার যে বকা খেয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। শচীন, সৌরভ, দ্রাবিড়, কুম্বলে, জাদেজা, শ্রীনাথ, আজহার-সহ নানান বিদেশি ক্রিকেটারদের রঙিন কার্ডের কথা ভাবলে ছোটোবেলার স্মৃতিগুলো উসকে ওঠে। একবার তো এক দাদা দেখিয়েছিল প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছবি যুক্ত একগোছা কার্ড। কপিল দেব, দিলীপ বেঙ্গসরকার, সুনীল গাভাস্কর, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ছিলেন কার্ডের ছবিতে। মনে আছে যে, গাভাস্করের পরনে ছিল আর্মির পোশাক। আর হ্যাঁ, কার্ডের পিছনে দেওয়া থাকত ক্রিকেটারদের পরিসংখ্যানও।

ফলে, সেই সময় গুগল আজকের মতো মুঠোফোনে না থাকলেও ক্রিকেটারদের পরিচয় কিংবা কে কত ম্যাচ খেলেছেন, কত রান খেলেছেন, ক’টা উইকেট পেয়েছেন, হায়েস্ট রান কত, সেরা বোলিং পারফরম্যান্স কী, এমনকী অ্যাভারেজও পর্যন্ত নখদর্পণে থাকত। আমরা বন্ধুরা মিলে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে একটা খেলা খেলতাম। আগে দেখা হত, কার কাছে কোন কার্ড রয়েছে। ধরুন, আমার কাছে রয়েছে পঁচিশটা কার্ড, আমার দুই বন্ধুর কাছে রয়েছে আরও পঁচিশটা করে মোট পঞ্চাশটা কার্ড। এবার পঁচাত্তরটা কার্ড মেলানো হত। তিনজনের কাছে যে কার্ড কমন থাকত, সেই তিনটি কার্ড থেকে একটিই কার্ড রাখা হত। এরপর ব্যাটসম্যানদের এবং বোলারদের আলাদা করে রাখা হত। ব্যাটসম্যানদের কার্ড এবং বোলারদের কার্ড তিন বন্ধুর মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হত। তাসের মতো করে একেকটা কার্ড তুলে চলত পরিসংখ্যান মেলানোর পালা। যার পাল্লা ভারী সে-ই জয়ী হত, অবশ্য তার জন্য সর্বাধিক কার্ডের অধিকারী হতে হত বিজয়ীকে। সে-এক যুগ ছিল বটে। বন্ধুরা কেউ কেউ সে-সময় ডাকটিকিট জমাচ্ছে, কেউ জমাচ্ছে কয়েন, কেউ-বা পোস্ট কার্ড, আবার কেউ পেপসি-কোকাকোলা-থাম্বস আপের ছিপিও জমাত। এরসঙ্গে তারা বিগ ফানের কার্ডও জমাতে শুরু করল সমানতালে। বিগ ফান যেন ক্রিকেট কার্ডের সমার্থক হয়ে ওঠে।

আবছা মনে আছে যে, একটা অফার এনেছিল বিগ ফান। বিগ ফান বাবল গাম কিনে ৩০০ রান এবং ১০০টি উইকেট সংগ্রহ করতে পারলে পাওয়া যাবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সই করা ছোট্ট একটি ব্যাট। ক্রিকেট ততদিনে ভারতের ‘ধর্ম’ হয়ে উঠেছে। টিভিতে তখন ‘শচীন আলা রে’ (বিজ্ঞাপন) চলছে, সৌরভ ততদিনে লর্ডসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলার গৌরব হয়ে উঠেছেন― দুর্গাপুজোর চন্দননগরের লাইটিংয়েও তখন সৌরভের অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরির ঝিলিক, তখন এমন অফার আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো। আমার তো লক্ষ্য স্থির ছিল, সই করা ব্যাট পেতেই হবে। তাই প্রতিদিন অন্তত তিন-চারটে গাম কিনতেই হবে আমাকে। দোকান থেকে গাম হাতে পেয়ে তড়িঘড়ি মোড়ক খুলে দেখতাম কত রান বা উইকেট আছে। একবার তো বুকলেটও চালু করা হয়েছিল। রটে গিয়েছিল যে, সেই বুকলেট নিয়ে গিয়ে দোকানে দেখালে নাকি ফ্রিতে মিলবে বাবল গাম।

এরপর নব্বইয়ের মাঝামাঝি (১৯৯৫) এসেছিল সুপার বাবল গাম ‘বুমার’। প্যাকেটের ওপরে থাকত ‘বুমার ম্যানে’র ম্যাসকটের ছবি। তাকে দেখতে ছিল অনেকটা ‘মিস্টার ফ্যান্টাস্টিকে’র মতো। এই স্প্যানিশ কোম্পানি ‘জয়কো’র তৈরি এই বাবল গামও বেশ সাড়া ফেলেছিল তখন। এক সময় তো রীতিমতো রেষারেষি চলত বিগ ফান ও বুমারের মধ্যে। এই দুই গাম কিনলে স্টিকার বা ট্যাটুও পাওয়া যেত বিনামূল্যে। বিগ বাবল-ও সেসময় দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এরপর এলো ডব্লিউডব্লিউএফের তারকাদের ছবিওয়ালা ট্রাম্প কার্ড। আন্ডারটেকার, ব্রেট হার্ট, হাল্ক হোগান, সনমাইকেলরা তখন কালার টিভি ও কেবল টিভির বিপ্লবের দুনিয়ায় রাজা-বাদশাহ। তাঁদের হাতের মুঠোয় কে-ই বা পেতে চাইবে না! সুতরাং সেই সময়ের প্রো-রেসলারদের কার্ড নিয়ে খেলা জমে উঠল। প্রতিটি কার্ডে থাকত একটি নির্দিষ্ট রেসলারের ছবি, তাঁর র্যা ঙ্ক, ফাইটস ফট, ফাইটস উইন, হাইট, ওয়েট, চেস্ট এবং বাইসেপসের বিবরণ।

শেষ করব সামান্য কিছু বছর ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে। মনে পড়ছে, ’৯০-এর দশকের আরও এক বিজ্ঞাপনের কথা। যার ট্যাগলাইন ছিল, ‘বড়ে কাম কি চিজ’। সেখানে দেখা গেল, একটা কচ্ছপকে বাবল গাম বেলুনের মতো ফুলিয়ে উড়ে যেতে। জর্জ বার্নার্ড শ একবার বলেছিলেন, “বেশিরভাগ মানুষ চারপাশের বস্তুগুলো দেখে জিজ্ঞেস করে― কেন? আর আমি যা নেই, তা কল্পনা করে বলি― কেন এটা বাস্তব হবে না?” সেইসব দিনগুলি, সেইসব রাতগুলি ছিল অনেকটা এমনই। স্বপ্ন এবং বাস্তবের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে ছোটবেলার ‘আমি’ও সেই কচ্ছপটার মতো উড়তে চাইতাম যে।

Powered by Froala Editor