সকালে রাজা, রাতে প্রহরী, ‘অন্যরকম’ জীবন রাজশাহীর বৃদ্ধের

সাতসকালে হঠাৎ গ্রামজুড়ে হইহই কাণ্ড। আলপথ দিয়ে ছুটে আসছে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা। সবার মুখে একটাই কথা। রাজা এসেছে। হ্যাঁ, এই একুশ শতকেও রাজা রাস্তায় বেরিয়েছেন। সারা শরীরে রাজপোশাক। মাথায় মুকুট। কাঁধে ধনুক আর তীরের তূণ। কোমরে ঝুলছে তলোয়ার। ঘোড়ায় চড়ে রাজা বেরিয়েছেন বাংলাদেশের রাজশাহীর (Rajshahi) দুর্গাপুর উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামে। কিন্তু কে এই রাজা? স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। তবে তার বুকেও একটুকরো রাজতন্ত্র ধরে রেখেছেন আব্দুল কাদের (Abdul Kader)। প্রায় ৫ দশক ধরে তিনি নিজেকে রাজা বলেই পরিচয় দেন। তবে এমনিতে মানুষটা একেবারেই হতদরিদ্র। কিন্তু মনে মনে তিনিই রাজা (King)।

সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশের এক যুবকের হঠাৎ মনে হয়, তিনিই রাজা। বিভিন্ন যাত্রাপালায় এবং সিনেমায় রাজা চরিত্রগুলি দেখে মুগ্ধ হতেন তিনি। তারপর একদিন সেই রাজাদের আদলেই সাজিয়ে তুললেন নিজেকে। তখন চাষের মাঠে ক্ষেতমজুরি করতেন আব্দুল। কিন্তু রাজা হয়ে তো আর ক্ষেতমজুরি করা চলে না। তাই শেষপর্যন্ত সেই কাজ ছেড়ে দিলেন তিনি। সঞ্চয়ের ৪০০ টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে ফেললেন। ঘোড়াকেও সাজালেন রাজার ঘোড়ার বেশে। যাত্রাপালার পোশাকের অনুকরণে তৈরি করালেন রাজবেশ। তীর-ধনুক, তলোয়ার সবই যোগাড় হল। তারপর বেরিয়ে পড়লেন গ্রামের রাস্তা দিয়ে।

প্রথম প্রথম অবাক হতেন গ্রামবাসীরা। তবে এখন আশেপাশের গ্রামের মানুষরাও চেনেন তাঁকে। জানেন তাঁর এই আজব শখের কথাও। অবশ্য আব্দুল কাদেরের নাম জানেন না অনেকেই। বরং রাজা বলতেই এক কথায় চেনেন সকলে। তাঁর ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে যে কেউ দেখিয়ে দেবেন সেই ‘রাজপ্রাসাদ’। কিছুদিন আগে পর্যন্তও সেই প্রাসাদ ছিল মাটির কুঁড়েঘর। এখন ছেলেরা বাড়ির একটা অংশে পাকা ঘর তুলেছেন। সেই আধপাকা বাড়িই ৭০ বছরের রাজার ঠিকানা। বাবার এই শখ নিয়ে অভিযোগ নেই ছেলেদেরও। অবশ্য বিয়ের পর কিছুদিন বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তাঁর স্ত্রী। তখন সদ্য সদ্য রাজা সাজতে শুরু করেছেন কাদের। কৃষিকাজ ছেড়ে দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় রোজগারের রাস্তাও। তবে এখন গ্রামে রাতের পাহাড়াদারের কাজ করেন কাদের।

তখন অবশ্য খুলে রাখেন রাজপোশাক। সঙ্গী কুকুরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। রাতের অন্ধকারে তখন রাজার অন্য বেশ। এক একদিন টহল দিয়ে ২০০ টাকা করে পান কাদের। এর মধ্যে নিজের খরচের জন্য রেখে দেন ৬০-৭০ টাকা। বাকি সবটাই লেগে যায় ঘোড়ার খাবারের জন্য। সংসারের যাবতীয় খরচ মেটান তাঁর ছেলেরাই। রাজকোষহীন এই রাজার একমাত্র সম্পদ মানুষের ভালোবাসা।

আরও পড়ুন
পক্ষাঘাতে হারিয়েছে চলচ্ছক্তি, মুখ দিয়েই ছবি আঁকেন বাংলাদেশের শিল্পী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
একই গাছে পাঁচবার ধানের ফলন! অভিনব আবিষ্কার বাংলাদেশের বিজ্ঞানীর