নিজে পোলিও আক্রান্ত হয়েও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করতে লড়াই হেমার

পাঁচ একর অঞ্চলজুড়ে গড়ে তোলা প্রকাণ্ড এক বাগান। কোথাও চাষ হচ্ছে টম্যাটো, রাঙা আলু বা অন্যান্য শাক-সবজি, কোথাও আবার চাষ হচ্ছে অ্যালোভেরা, ঔষধি, ফুল গাছের। তবে এই বাগান বাণিজ্যিক কারণে তৈরি করা হয়নি। বরং, এই জৈব খামার তৈরির মূল উদ্দেশ্য হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে উদ্যানপালনের (Horticulture) প্রশিক্ষণ দেওয়া।

বেঙ্গালুরুর চেন্নাপাটনায়-এ গেলেই দেখে মিলবে এই আশ্চর্য খামারের। যেখানে প্রতিদিন উদ্যানপালনের প্রশিক্ষণ নেন বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা। আর এই অভিনব প্রকল্পের নেপথ্যে রয়েছে ‘চেন্নাপাটনায় অ্যাসোসিয়েশন অফ পিপল উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি’ নামের একটি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা। 

আজ থেকে ১৫ বছর আগের কথা। পাঁচ একর জমির ওপর এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলেন সমাজকর্মী এনএস হেমা (NS Hema)। হেমার জন্ম ১৯৫৯ সালে বেঙ্গালুরুতেই। শৈশবেই পোলিও-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। হারিয়েছিলেন চলচ্ছক্তি। সেসময় উপযুক্ত চিকিৎসা তো দূরের কথা, ন্যূনতম হুইলচেয়ারও যোগাড় করতে পারেননি হেমা। ফলে, স্কুলশিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হন তিনি। 

বয়স আরেকটু বাড়ার পর, সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। শুরু করেন চাকরির অনুসন্ধান। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বার বার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। এরপর নিজ উদ্যোগেই উদ্যানপালনের প্রশিক্ষণ নেন হেমা। শুরু করেন নিজস্ব খামার। পৈতৃক জমিতে বাগান করে, সেখানেই উৎপাদন করতেন নানান শাক-সবজি। তবে সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বরং, লড়াই শুরু করেছিলেন তাঁর মতো বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য দাঁড়াবার জায়গা গড়ে তোলার। 

প্রাথমিকভাবে নিজের বাড়িতেই তিনি উদ্যানপালনের প্রশিক্ষণ দিতেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের। পরবর্তী বেঙ্গালুরুতে পাঁচ একর জমির ওপর গড়ে তোলেন একটি বিশেষ খামার। পথ চলা শুরু হয় ‘চেন্নাপাটনায় অ্যাসোসিয়েশন অফ পিপল উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি’ সংস্থার। উল্লেখ্য, তাঁর এই উদ্যোগে সে-সময় এগিয়ে এসেছিলেন শহরের বহু সমাজকর্মী। হাত মিলিয়েছিল বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানও। 

বিগত ১৫ বছর ধরে এই দাতব্য সংস্থা থেকে উদ্যানপালনের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি প্রতিবন্ধী। যাঁরা বর্তমানে বাগান দেখাশোনার কাজ করছেন বিভিন্ন গ্রামীণ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কেউ আবার খুলেছেন নিজস্ব খামার। সবমিলিয়ে সহস্রাধিক মানুষকে জীবিকার হদিশ দিয়েছে বেঙ্গালুরুর এই এনজিও। পাশাপাশি পোলিও ও অন্যান্য দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান এবং বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের শিক্ষাদানেরও ব্যবস্থা রয়েছে বেঙ্গালুরুর এই সংস্থায়। 

বছর ছয়েক আগে, ২০১৬ সালে প্রয়াত হন হেমা। অবশ্য তাঁর কর্মযজ্ঞ থেমে থাকেনি। তাঁর অবর্তমানে এই সংস্থার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন শহরের অন্যান্য সমাজকর্মী এবং তাঁর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা। শুধুমাত্র সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর না করে, বিশেষভাবে সক্ষমদের মাথা উঁচু করে বাঁচার পাঠ দিচ্ছে ‘এপিডি’…

Powered by Froala Editor

Latest News See More