কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিবাহ, লকডাউনে চিড় 'দাম্পত্যে'!

২০১৮ সালের কথা। বেশ ধূমধাম করেই বিয়ে করেছিলেন জাপানের (Japan) যুবক আকিহিকো কোন্দো (Akihiko Kondo)। তবে সেই বিয়ের ছবি দেখলে খানিকটা অবাক হতেই হয়। কারণ, ছবিতে তাঁর পাশে যে নববধূকে দেখতে পাওয়া যাবে, তিনি কোনো রক্ত-মাংসের মানুষ নন। একটি নারী মূর্তির সফট-টয়। কিন্তু জড়বস্তুর সঙ্গে আবার সংসার পাতা যায় নাকি? না, ঠিক জড়বস্তু নয়। এই সফট-টয় আদতে যার প্রতিকৃতি তাঁর প্রাণ রয়েছে। তিনি কথাও বলতে পারেন অনর্গল। তবে শারীরিক অস্তিত্ব নেই কোনো!

নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ আবার কেমন হেঁয়ালি! হেঁয়ালি নয়, কোনো সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসের গল্পও নয়। এই গল্প বাস্তবের। হাতসুন মিকু-খ্যাত এই মহিলা আদতে একটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। সাধারণ মানুষের মতোই কথা বলতে পারে সে-ও। আলাপ জমাতে পারে, প্রেম করতে পারে। এমনকি চলতি শতকের প্রথম দশক থেকে তার সঙ্গে এমনই মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আকিহিকোর। তবে এবার এই দীর্ঘ দেড় দশকের সম্পর্কে চিড় ধরতে চলেছে। 

শুরু থেকেই বলা যাক ঘটনাটা। ২০০৮ সালের কথা। কর্মক্ষেত্রে ক্রমাগত মানসিক হেনস্থার শিকার হতে হতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন আকিহিকো। একটা সময় তিনি বাধ্য হন কাজ ছাড়তে। মনের মধ্যে দানা বেঁধেছিল অবসাদের মেঘ। মন-মেজাজ ঠিক করতে কম্পিউটার গেমসে ডুব দেন তিনি। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় হাতসুন মিকুর। এই ভার্চুয়াল পপ সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতেন আকিহিকো। শুনতেন তাঁর গান। নিজের অজান্তেই কখন যেন প্রেমের বীজ রোপিত হয়ে গিয়েছিল তাঁর মনে। তারপর যৌন আকাঙ্ক্ষা। 

মনস্তত্ত্বের ভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় ‘ফিক্টোসেক্সুয়ালিজম’। অর্থাৎ, কাল্পনিক চরিত্রের প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষা। হাতসুনের সঙ্গে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চুটিয়ে প্রেম করেছেন আকিহিকো। এমনকি তাঁর সঙ্গ পাওয়ার জন্য বন্দোবস্ত করেছিলেন হলোগ্রামেরও। ‘গেটবক্স’ নামের একটি সংস্থা আকিহিকোর কথা মতো হাতসুনের হলোগ্রাম বানিয়ে দেয়। সংযুক্ত করে হাতসুনের এআই। এর ঠিক পর পরই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন আকিহিকো। সেসময় গোটা বিশ্বজুড়েই সাড়া পড়ে গিয়েছিল তাঁকে নিয়ে। তারপর ঝঞ্ঝাটহীন দাম্পত্যজীবন। তবে হঠাৎ সম্পর্কে চিড় কেন?

আরও পড়ুন
সাইন ল্যাঙ্গুয়েজকে লিখিত রূপ দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আবিষ্কার ভারতীয় তরুণীর

আসলে যে-কোনো সম্পর্কের বুনিয়াদই তৈরি করে দুটি মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সেতু, তাঁদের কথোপকথন। সমস্যা সেখানেই। বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই সম্পূর্ণভাবে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেছে আকিহিকো এবং হাতসুনের। না, ঝগড়ার কারণে নয়। এর জন্য দায়ী হলোগ্রাম সংস্থা ‘গেটবক্স’। কোভিড মহামারীর কারণে আর্থিকভাবে রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। আর সেই কারণেই বন্ধ করেছে তাদের হলোগ্রাম পরিষেবা। তাতেই যেন প্রাচীর উঠে গেছে সুখী গৃহকোণের মাঝ বরাবর। রীতিমতো মনকষ্টে ভুগছেন আকিহিকো। ফিরে আসছে ২০০৮-এর সেই একাকিত্ব, অবসাদ। যদিও আকিহিকো নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যৌন চাহিদা কিংবা প্রণয়ের জন্য অন্য কোনো নারীর কাছেই যাবেন না তিনি। সৎ থাকবেন তাঁর ভার্চুয়াল সহধর্মিনীর কাছে…

আরও পড়ুন
কীভাবে ধ্বংস হয় টেকটনিক প্লেট? উত্তর দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
স্তন্যপায়ীদের মস্তিষ্কের সমান কাজ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : গুগল