সাড়া জাগানো ‘জয় ভীম’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র রয়েছেন বাস্তবেও, কে এই চান্দ্রু?

/১০

গত ১ নভেম্বর আমাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছিল সুরিয়া শিবকুমার অভিনীত তামিল কোর্ট রুল ড্রামা ‘জয় ভীম’। ইতিমধ্যেই চলচ্চিত্র সমালোচকদের নজর কেড়েছে দক্ষিণী সিনেমাটি। উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রতি বিচার ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের বঞ্চনা ও অমানবিকতার ছবিই ফুটে উঠেছে ‘জয় ভীম’ চলচ্চিত্রে। অভিনেতা সুরিয়াকে দেখা গেছে মুখ্যচরিত্র তথা আইনজীবী চান্দ্রুর ভূমিকায়।

/১০

না, কোনো মনগড়া গল্প নয়। ১৯৯৩ সালে তামিলনাড়ুর বুকে ঘটে যাওয়া এক বাস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই নির্মিত পরিচালক টিজে জ্ঞানভেলের এই ছবি। বলাই বাহুল্য, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আইনজীবী চান্দ্রুও বাস্তব চরিত্র। কিন্তু কে তিনি?

/১০

১৯৯৩ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টে দায়ের হওয়া হেবিয়াস কর্পাস মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল তাঁর তত্ত্বাবধানেই। যে গল্পের ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘জয় ভীম’। এক সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে গয়না চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তামিলনাড়ুর কুড্ডালোর জেলার বাসিন্দা রাজকান্নুকে। স্রেফ আন্ডাই কুরুম্বার উপজাতির সদস্য হওয়ায় তাঁর ওপর চলেছিল অকথ্য অত্যাচার। ফলাফল কাস্টাডিতেই মৃত্যু। তবে পুলিশের খাতায় ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল এনকাউন্টার হিসাবে।

/১০

ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাদ্রাজ হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দায়ের করেছিলেন কে চান্দ্রু। দীর্ঘ ১৩ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর এসেছিল জয়। যোগ্য বিচার পেয়েছিলেন রাজকান্নু। ১৪ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট পুলিশ অধিকর্তাকে।

/১০

এখানেই শেষ নয়। তাঁর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার তালিকা বেশ দীর্ঘ। এককথায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ‘ত্রাতা’ হয়ে উঠেছিলেন চান্দ্রু। আইনি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরই সাম্য ও সুবিচারের জন্য লড়াই শুরু হয়েছিল চান্দ্রুর। দরিদ্রদের আইনি প্রতিনিধি হিসাবে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন তামিলনাড়ুর একটি অলাভজনক সংস্থার হয়ে।

/১০

৮ বছর সেখানে কাজ করার পর বার কনিষ্ঠতম আইনজীবী হিসাবে কাউন্সিলের সদস্য হন চান্দ্রু। ১৯৯০-এর দশকে মাদ্রাজ হাইকোর্টে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসাবে দায়িত্ব নেন তিনি। সেসময়ও একাধিকবার সত্যের পক্ষে সওয়াল হয়ে সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছিলেন চান্দ্রু। তবে বিচারপতি থাকাকালীন সময়ে আইনের জগতে এক অনন্য নজির গড়েছিলেন তিনি।

/১০

২০০৬ সালে তাঁকে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতির পদে নিযুক্ত করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আব্দুল কালাম। ২০০৯ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর অদ্ভুত এক কাণ্ড বাঁধান চান্দ্রু। প্রথম ভারতীয় বিচারপতি হিসাবে বার কাউন্সিলের কাছে পত্রপাঠ নিজের সমস্ত সম্পত্তির বিষদ বিবরণ পেশ করেন তিনি। সেইসঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন আদালত প্রদত্ত আর্দালি এবং নিরাপত্তাকর্মীদের। এমনকি সাফ জানিয়ে দেন ‘মে লর্ড’ বলেও ডাকা যাবে না তাঁকে।

/১০

মাত্র ৭ বছরের বিচারক জীবনে সব মিলিয়ে ৯৬ হাজার মামলার নিষ্পত্তি করেছেন চান্দ্রু। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৭টি মামলার নিষ্পত্তি। এমন রেকর্ড ভারতে দ্বিতীয় কোনো বিচারকের রয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে যথেষ্ট।

/১০

২০১৩ সালে অবসর নেওয়ার সময়ও বার কাউন্সিল ও হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিতে অস্বীকার করেন চান্দ্রু। ভারতের দীর্ঘ একশো বছরের আইনি ইতিহাসে সেটাই ছিল এই ধরনের প্রথম ঘটনা। তিনি যে আনুষ্ঠানিকতার ঘোর বিরোধী, বিদায়বেলাতেও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বিচারপতি কে চান্দ্রু।

১০/১০

মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার সুযোগ থাকলেও, তা ফিরিয়ে দেন তিনি। বরং, আইন শিক্ষার্থীদের জন্য বই লেখা, জার্নাল সম্পাদনা এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের কাজে মনোনিবেশ করেন চান্দ্রু। সেইসঙ্গে আজও চলছে সাম্প্রদায়িকতা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই। সব মিলিয়ে বলতে গেলে ভারতীয় আইনজগতে এক বর্ণময় চরিত্র কে চান্দ্রু। অদ্বিতীয়ও বটে…

Powered by Froala Editor