সমুদ্রের জলের মধ্যে পিচ, বছরে একবার ক্রিকেট ম্যাচ হয় যেখানে

ক্রিকেট ম্যাচে কখনও কখনও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পিচের ভূমিকা। ম্যাচের আগে তো বটেই, এমনকি আগের দিনও পিচ পরিদর্শনে দৌঁড়োয় কোচ-ক্যাপ্টেন। কতরকম বাহার বাইশ গজের। কোনো পিচ পাটা তো, কোনোটা আবার সবুজে ঢাকা। সেই বুঝে দাপট দেখা যায় বোলার অথবা ব্যাটসম্যানের। টসে জেতার পর ব্যাট না ফিল্ডিং, কোনটা নেওয়া হবে সেটাও নির্ভর করে পিচের উপরেই। কিন্তু কেমন হয়, যদি সারা বছর জলে ডুবে থাকে সেই পিচ? যেখানে সারা বছরে খেলার সুযোগ মেলে শুধুমাত্র একদিন।

এমনই ক্রিকেট চলে আসছে ইংল্যান্ডের (England) সাউদাম্পটনে। যার নাম ব্র্যাম্বলস ব্যাংক ক্রিকেট ম্যাচ (Brambles Bank Cricket Match)। ব্রিটিশ নৌ-প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘উফা ফক্স’-এর হাত ধরে সূত্রপাত হয় ১৯৫০ সালে। আর প্রতিবছরই দুটি দল অংশগ্রহণ করে এই ম্যাচে। দ্য রয়্যাল সাউদার্ন ইয়াচ ক্লাব (The Royal Southern Yacht Club) আর আইল্যান্ড সেলিং ক্লাবের (Island Sailing Club) খেলা দেখতে হাজির হয় কয়েকশো মানুষ। তবে কোনো বিশেষ কারণ ঘটলে বন্ধ থাকে খেলা। যেমন গতবছর ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর কারণে স্থগিত ছিল ব্র্যাম্বলস ব্যাংক ক্রিকেট। এরকম তো বহু ম্যাচই হয় সারা বিশ্বজুড়ে, তাহলে এর বিশেষত্ব কোথায়? তার জন্য তাকাতে হবে এই অঞ্চলের ভূগোলের দিকে। 

সোলেন্ট অঞ্চলের ব্র্যাম্বল আসলে একটি সমুদ্রতট। সারা বছরই ডুবে থাকে জলের তলায়। শুধু আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের কোনো একদিন ভাঁটার কারণে জল চলে যায় অনেকটা দূরে। বড়োজোর ঘণ্টাখানেক চলে এই অবস্থা। আর ঠিক সেই দিনের সেই সময়টুকুতেই নেমে পড়েন দুই ক্লাবের খেলোয়াড়রা। যাঁরা পেশায় মূলত মাঝি, এই একটা দিনই দাঁড় ছেড়ে হাতে ব্যাট-বল তুলে নেন তাঁরা। এভাবেই চলে আসছে সত্তর বছর ধরে। জল নেমে যাওয়া সমুদ্রতটের বালিতে উইকেট পুঁতে দেওয়া হয়। যার পোশাকি নাম স্যান্ডবার। খেলোয়াড়দের পরনে থাকে সাদা পোশাক। যতক্ষণ না জোয়ারের জল এসে সব ডুবিয়ে দিচ্ছে, ততক্ষণ চলতে থাকবে খেলা। থাকে চা-পানীয়ের ব্যবস্থা। দর্শকরাও বাদ যান না সেই আতিথেয়তা থেকে। খেলা নয়, উৎসবটাই মূল লক্ষ্য ব্রাম্বলবাসীদের।

তার একটা বড়ো উদাহরণ দেখা যায় খেলার শেষে। যদি দু’দলের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই জোয়ার চলে আসে, তাহলে খেলার ফলাফল কী দাঁড়াবে? তাই আগে থেকেই ঠিক হয়ে থাকে জয়ী দলের নাম। যেমন, ২০২৩-এ ১ সেপ্টেম্বর আয়োজিত ম্যাচের বিজেতা ছিল রয়্যাল সাউদার্ন। শেষ ওভারে যখন আইল্যান্ড ক্লাবের বোলাররা তেড়েফুঁড়ে উঠেছিলেন, ঠিক সেই সময়েই জোয়ারের জলে ভেসে যায় উইকেট। কিন্তু বিজেতা আগে থেকে ঠিক হয়ে থাকায় আর কোনো ঝামেলা বাঁধেনি। ২০২১-এও জিতেছিল তাঁরা। গতবছর খেলা বন্ধ থাকলেও জয়ীর শিরোপা উঠেছিল আইল্যান্ড ক্লাবের মাথায়। কে জয়ী হবে সেটা ঠিক করে দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। আর তারপর রাতে থাকে বিরাট ভূরিভোজের আসর। 

আরও পড়ুন
ক্রিকেট বিশ্বকাপে ‘নবরস’, কী অর্থ বোঝায় চিহ্নগুলি?

বলা হয়, আধুনিক ক্রিকেটের উৎপত্তি ইংল্যান্ড থেকেই। অনেক রীতি-নীতিও তৈরি হয়েছে এদেশের বুকে। স্যান্ডবারে খেলা ব্র্যাম্বলস ব্যাংক ক্রিকেট ম্যাচও তো চলে নিজস্ব নিয়মে। নতুবা সমুদ্রের জলে ভেজা বালিতে ক্রিকেটের আসর আর বিশ্বের কোথায় দেখা যাবে? অবশ্য ভারতের কথা আলাদা। এখানের ক্রিকেট পাগল জনতা একটুখানি জায়গা পেলেই নেমে পড়ে ব্যাট-বল নিয়ে। আসলে জয়-পরাজয়ের ঊর্ধ্বে খেলা মানে তো আনন্দ। সেটা সমুদ্রের বুকে হোক অথবা কোনো অলি-গলিতে। 

আরও পড়ুন
পুরুষ নয়, প্রথম চালু হয়েছিল মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ

Powered by Froala Editor