আফগান সহকর্মীদের ছেড়ে দেশে ফিরতে নারাজ প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনা

কোটি কোটি টাকায় সুসজ্জিত সেনাবাহিনী হাত তুলে নিয়েছিল আগেই। প্রায় বিনা প্রতিরোধেই চোখের নিমেষে গোটা দেশের দখল নিয়েছিল তালিবানরা। তারপরই আফগানিস্তানে হিড়িক পড়ে যায় দেশ ছাড়ার। হিংস্র মৌলবাদী সংগঠনের থেকে প্রাণ বাঁচানোর প্রচেষ্টার সেই ভয়ঙ্কর ছবির সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের দৌলতে অল্পবিস্তর পরিচিত হয়েছেনসকলেই। আফগানিস্তানে বসবাসরত ভারত-সহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরও দেশের ফেরানোর কাতর আর্জি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও অবিচল প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনানী পল পেন ফার্থিং। আফগান সহকর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে গেলে, তিনি যে কাবুল ছাড়বেন না— তা স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন পল।

না, প্রতিরক্ষা নয়। ২০০৬ সালেই সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। আফগানিস্তান থেকেই। কিন্তু তারপরেও আফগানিস্তানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর আফগানিস্তানের বুকে শুরু করেছিলেন প্রাণী অধিকার নিয়ে বৃহত্তর কর্মকাণ্ড। গড়ে তুলেছিলেন একটি অলাভজনক দাতব্য সংস্থা ‘নওজাদ’। যার মূল লক্ষ্য ছিল, পথের কুকুর, বেড়াল ও অন্যান্য পশুদের সুরক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা। বিগত দেড় দশকে, সব মিলিয়ে প্রায় ১৬০০ বৈদেশিক সেনা আধিকারিকরা পোষ্য দত্তক নিয়েছে এই সংস্থা থেকে। বর্তমানে তাঁদের পরিচর্যায় রয়েছে ১৪০টির বেশি কুকুর এবং ৪০টির বেশি বিড়াল। 

তবে কেবলমাত্র পশু অধিকারই নয়, যাতে বৃহত্তর ক্ষেত্রে আফগান নারীদের অধিকার নিয়েও সরব হয়েছিলেন পেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ভেটেরেনারি চিকিৎসার ট্রেনিং পান বহু আফগান তরুণী। তাঁদের কেউ কেউ কর্মরত ছিলেন নওজাদে। কেউ আবার অন্যান্য বিভিন্ন শহরে। সেইসঙ্গে নওজাদের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন বহু স্থানীয় আফগান মানুষ।

সম্প্রতি পল ফার্থিং-কে দেশে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাস। তবে স্পষ্ট ভাষাতেই পল জানিয়ে দেন, ‘নওজাদ’-এর ৭১ জনের এই পরিবার ছেড়ে ব্রিটেনে ফিরবেন না তিনি। পলের আশঙ্কা, তালিবান রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ভেটেরেনারি চিকিৎসার ট্রেনিংপ্রাপ্ত আফগান তরুণীদের জীবন কার্যত শেষ হয়ে যাবে আফগানিস্তানে থাকলে। তাঁরা ভবিষ্যতে আর কাজ করার সুযোগ তো পাবেনই না, সেইসঙ্গে থেকে যাচ্ছে প্রাণনাশের প্রবল সম্ভাবনাও। তাই তাঁদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ছেড়ে দেশে ফিরে আসা সম্ভব নয় পলের। তাঁর এই আবেদনের পর, গোটা বিষয়টিকেই পর্যালোচনা করে দেখছেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। তবে আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত অনুমোদন আসেনি ব্রিটিশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে। 

ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীতে কর্মরত পলের দুই প্রাক্তন সহকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন তালিবান আক্রমণে। পল নিয়েও বারংবার হুমকি পেয়েছেন তালিবানদের থেকে। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে একসময় যিনি বন্দুক হাতে লড়াই করেছেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে, তাঁর কাছে এই মৃত্যুর ভয় তুচ্ছ। পালিয়ে না গিয়ে, এই লড়াইয়ের যেন শেষ দেখে ছাড়তে চান প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনানী…

Powered by Froala Editor

Latest News See More