পৃথিবীর বৃহত্তম ফুল বাঁচাতে একা লড়ছেন ইন্দোনেশিয়ার গবেষক

মূল, কাণ্ড, পাতা কিছুই নেই। গাছ বলতে রয়েছে কেবল একটি ফুল। আর সেই ফুলের আকার দেখলেও অবাক হতে হয়। এক একটি ফুল প্রায় ৩ ফুট ব্যাসের। আর তার ওজনও ২০ পাউন্ডের কম নয়। পৃথিবীর বৃহত্তম ফুল র‍্যাফ্লেসিয়া (Rafflesia)। অথচ তার অস্তিত্ব ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে। পরজীবি এই ফুলের সংরক্ষণ (Conservation) নিয়েও তেমন আলোচনা হয় না। সংরক্ষণের নানা জটিলতা তো রয়েছেই। তাছাড়া আরও একটি বড়ো কারণ এই ফুলের দুর্গন্ধ। যার জন্য কোনো মানুষই র‍্যাফ্লেসিয়া নিয়ে তেমন আগ্রহী নন। ব্যতিক্রম ইন্দোনেশিয়ার বোগোর বোটানিক্যাল গার্ডেনের গবেষক ডঃ সোফি মুরসিদাওয়াতি। একা একজন মহিলা চেষ্টা করে যাচ্ছেন পৃথিবীর বৃহত্তম ফুলের প্রজাতিটিকে বাঁচিয়ে রাখার।

শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা এবং বোর্নিও দ্বীপে দেখা মেলে র‍্যাফ্লেসিয়া ফুলের। পরজীবি গোত্রের এই ফুলটি বৃষ্টি অরণ্যের ভিজে কাঠের গাছকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। ফুল ফোটার আগেই দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। আর মোটামুটি পরিণত অবস্থায় পৌঁছালে পচা মাংসের গন্ধে ছেয়ে যায় চারিদিক। র‍্যাফ্লেসিয়া নার্সারি গড়ে তোলার পিছনে এই দুর্গন্ধই সবচেয়ে বড়ো বাধা। আরও একটি বাধা হল, এই ফুলের আয়ু মাত্র সপ্তাহ খানেক। আর একই সময়ে একটি অঞ্চলে কেবল একটিই র‍্যাফ্লেসিয়া  দম্পতি বাঁচতে পারে। একটি পুরুষ এবং একটি মহিলা ফুল থাকলে সেখানে অন্য ফুল জন্মাতে পারে না।

তবে এই সমস্ত প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই ২০০৪ সালে র‍্যাফ্লেসিয়া সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছিলেন ডঃ সোফি। সারা ইন্দোনেশিয়া থেকে সংগ্রহ করে চলেছেন ফুলের বীজ। তারপর পরীক্ষাগারে সেইসব বীজ থেকে কৃত্রিম উপায়ে র‍্যাফ্লেসিয়া জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রথম সাফল্য পেতেই অবশ্য লেগে গিয়েছিল প্রায় ৫ বছর। আর ১০ বছর পরেও দেখা যায় ৯০ শতাংশ ফুলই পরিণত বয়সে পৌঁছানোর আগীই মারা যাচ্ছে। তবে তারপরেও হাল ছাড়তে রাজি হননি। সোফি। আজও তিনি একইভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। র‍্যাফ্লেসিয়া বীজ পাঠাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। সেইসমস্ত পরিবেশে ফুল বাঁচতে পারবে কিনা, তা অবশ্য জানেন না সোফি। কিন্তু পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সদস্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবরকম চেষ্টা করাই যে ভীষণ জরুরি।

Powered by Froala Editor