৩০ লক্ষ বছর আগেকার প্রাকমানব জীবের সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য আধুনিক মানুষের

লম্বায় মানুষের থেকে বেশ ছোটো। দ্বিপদী এই এপ গোত্রের প্রাণীরা পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়াত প্রায় ৩০ লক্ষ বছর আগে। মানুষ বা শিম্পাঞ্জির মতোই তারা হাঁটত দুই পায়ে। এদের বিজ্ঞানসম্মত নাম অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেন্সিস, আর ডাকনাম লুসি। ইথিওপিয়ার মাটির নিচে এই প্রাকমানব প্রাণীটির সামান্য কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। তাছাড়া জানা যায়নি কিছুই। কেমন ছিল তাদের জীবনযাত্রা? মানুষের সঙ্গে তাদের কতটুকুই বা মিল? নাকি শিম্পাঞ্জির সঙ্গেই তাদের সাদৃশ্য ছিল বেশি? এইসব নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেন বিজ্ঞানীরা। আর দীর্ঘ গবেষণার ফলে সেই উত্তরও পাওয়া গেল।

জন্মের পর দীর্ঘদিন বাবা-মায়ের যত্নেই থাকতে হত অস্ট্রালোপিথেকাস প্রাণীদের। কারণ মানুষের মতোই তাদের মস্তিষ্ক পরিণত হতে দীর্ঘ সময় লাগত। এমনটাই জানা গেল গবেষণায়। এমনকি, তাদের মস্তিষ্কের আকার মানুষের মতো না হলেও, বেশ বড়ো ছিল। অন্তত বর্তমান শিম্পাঞ্জিদের মস্তিষ্কের চেয়ে ২০ শতাংশ অধিক আয়তনের তো বটেই। সম্ভবত তারা পাথরের ধারালো অস্ত্রের ব্যবহারও রপ্ত করেছিল। এমনটাই ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

এই আবিষ্কার যথেষ্ট অবাক করেছে তাঁদের। এমনটাই জানাচ্ছেন আমেরিকার প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থার জীবাশ্ম-নৃতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম কিম্বলে। হোমিনিন গণের আবির্ভাবের আগেই এইসব প্রাকমানব জীবের উৎপত্তি। আর তাদের সঙ্গে মানুষের এমন সাদৃশ্য অবাক করার মতো বৈকি!

১৯৭৪ সালে প্রথম লুসি প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকে তাদের চরিত্র বুঝতে দীর্ঘ গবেষণা চলেছে। কিন্তু কোথাও ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেননি গবেষকরা। অবশেষে জীবাশ্মের মস্তিষ্কের স্ক্যান করতে চাইলেন উইলিয়াম কিম্বলে। মস্তিষ্ক যদিও জীবাশ্মে পরিণত হয় না, কিন্তু পার্শ্ববর্তী কলার উপর ছাপ রেখে যায়। আটটি জীবাশ্মের নমুনা সংগ্রহ করলেন কিম্বলে। তারপর সিটি স্ক্যান পদ্ধতিতে সেই ছাপ উদ্ধার করলেন। মিলিয়ে দেখলেন মানুষ এবং অন্যান্য এপ গোত্রের প্রাণীদের মস্তিষ্কের সঙ্গে। আর তারপরেই এই সিদ্ধান্তে এলেন তিনি। সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস পত্রিকায় তাঁর সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

শুধুই মস্তিষ্কের আয়তন বা জীবনযাত্রায় নয়, মানুষের সঙ্গে লুসি প্রাণীদের সাদৃশ্য আছে দর্শন এবং শ্রবণ পদ্ধতিতেও। অর্থাৎ বিবর্তনের ধারায় হোমিনিন গণের আবির্ভাবের অনেক আগেই মানুষের পদসঞ্চারের আভাস পাওয়া গিয়েছিল। মানুষের আবির্ভাবের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে কয়েক লক্ষ বছর ধরে। তারপর আত্মপ্রকাশ করেছে প্রকৃতির উন্নততম প্রাণী 'মানুষ'। প্রকৃতিকেই যে নিয়ন্ত্রণ করেছে শেষে। বিবর্তনের সেই ইতিহাসের এখনও অনেককিছুই গবেষকদের জানতে বাকি থেকে গিয়েছে। ঠিক যেমন আশ্চর্য করছে লুসি প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারা সর্বশেষ তথ্যগুলি।