বন্যায় বিপর্যস্ত অসম, কাজিরাঙায় মৃত ৬টি বিরল একশৃঙ্গ গণ্ডার

বন্যা কেবল মানুষেরই প্রাণ কাড়েনি অসমে, বিপন্ন করেছে বন্যপ্রাণীদেরও। বন্যার জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে। এই জাতীয় পার্কে বসবাস বিলুপ্তপ্রায় এক-শৃঙ্গ গণ্ডারের। আর বন্যা পরিস্থিতিতে তাদের অস্তিত্বই এখন সংকটে। কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের কর্তৃপক্ষ জানাল ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে ৬টি একশৃঙ্গ গণ্ডার।

আগেই দুটি গণ্ডারের মৃত্যুর খবর শোনা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার বনদপ্তর কর্মীরা উদ্ধার করেন আরো চারটি গণ্ডারের মৃতদেহ। সেন্ট্রাল রেঞ্জ এবং বুরাপাহাড় রেঞ্জের কাছ থেকে উদ্ধার করে হয় সেগুলি। গণ্ডার ছাড়াও বন্যায় প্রাণ গেছে ৬১টি সম্বর হরিণের। প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে ১২১টি বন্যপ্রাণীর।

কাজিরাঙার ৯০ শতাংশ অঞ্চলই এখন পুরোপুরি বন্যার কবলে। যেমন জলমগ্ন হওয়ার বাসস্থান হারিয়েছে প্রাণীরা। তেমনই দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাবও। পাশাপাশিই তাল মিলিয়ে থেকেই যাচ্ছে চোরাশিকারের সম্ভাবনা। কাজিরাঙার সব মিলিয়ে ২২৩টি বনদপ্তরের ক্যাম্প রয়েছে। যেখান থেকে চোরাশিকার রুখতে টহল দেয় বনকর্মীরা। কিন্তু বন্যায় সম্পুর্ণ জলের তলায় ডুবেছে ১০০টি ক্যাম্প। ফাঁকা করা হয়েছে আরও ৬টি।

কাজিরাঙার অবস্থানের জন্যই প্রতিবছর প্রভাবিত হয় বন্যায়। একদিকে ব্রহ্মপুত্র এবং আরেকদিকে ডিপলু, ধানসিঁড়ি নদীগুলিও ফুলে-ফেঁপে ওঠে ব্রহ্মপুত্রের জলে। অন্যদিকে কর্বি আংলং পাহাড় থাকায় সেখান থেকেও প্রবাহিত হয় বর্ষার জল। ফলে ভেসে যায় কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বন্যা কাজিরাঙার ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। বেশকিছু প্রাণীদের মৃত্যু হলেও, অধিকাংশরাই বেঁচে যায়। জলস্তর বাড়লে ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে দক্ষিণের পাহাড়ের দিকে। সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র প্রাণ হারায় তুলনামূলকভাবে বয়স্ক প্রাণীরাই। পাশাপাশি প্রতি বছরের এই রুটিন বন্যায় খানিকটা অভিযোজিত হয়ে গেছে কাজিরাঙার বন্য প্রাণীরা।

উল্লেখ্য কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের প্রকৃতিও। বেশিরভাগ কাজিরাঙাতেই রয়েছে জলাভূমি, তৃণভূমি এবং ছোট-বড় নানান জলাধার। যা একদিক থেকে বন্যার জলেই পুষ্ট। প্রতিবছরে বন্যা না হলে দেখা যেত জল-সংকট। কাজিরাঙা পরিণত হত শক্ত কাঠের জঙ্গলে। জলাভূমি না থাকায় প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারত না গণ্ডার, সম্বর হরিণের মত প্রজাতিরা। অন্যদিকে বিপুল বন্যার জল ঢোকায় পার্কের জলাধারগুলিতে ভেসে আসে বিভিন্ন প্রজাতির মাছও। যারাও একদিক থেকে সাহায্য করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়।

আরও পড়ুন
অসমের বন্যায় বিপর্যস্ত ৩৩ লক্ষ মানুষ, ভাসল কাজিরাঙাও, মৃত ৫০টি বন্য প্রাণী

তবে সার্বিকভাবে আরও কঠিন হতে চলেছে অসমের পরিস্থিতি। বন্যায় দুর্গতদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ লক্ষ। মৃত্যু হয়েছে আরও সাত জনের। তার ওপরেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দিশেহারা অসম। পরিবেশের রোষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীরা খাপ খাইয়ে নিলেও, মানুষের অবস্থা নাজেহাল। প্রকৃতির সঙ্গে চলছে অসম লড়াই। যত বেশি সম্ভব মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করছেন সরকারি আধিকারিক এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More