মধ্য ভারতে স্ক্রাব টাইফাস, নেই প্রতিষেধকও, বাঁচবেন কীভাবে?

আবার নতুন করে আঘাত হানতে চলেছে করোনা অতিমারী। চলছে তৃতীয় তরঙ্গের জন্য প্রস্তুতি। আর এর মধ্যেই নতুন করে নানা রোগ মাথাচারা দিয়ে উঠছে দেশজুড়ে। সম্প্রতি তেমনই এক বহুল আলোচিত রোগ ‘স্ক্রাব টাইফাস’। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ সহ নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে স্ক্রাব টাইফাসের প্রাদুর্ভাব। আর সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, এই রোগের প্রথম শিকার শিশুরা। ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশে ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে এই রোগে। তার মধ্যে ৮০ জনই ফিরোজাবাদ অঞ্চলের। অন্যদিকে নাগপুর শহরেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩২ জন শিশু সহ মোট ৪০ জনের। কিন্তু কী এই স্ক্রাব টাইফাস? এর থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী? এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের মনে।

অতিমারী পরিস্থিতিতে রোগটি নিয়ে আলোচনা বেশি হলেও স্ক্রাব টাইফাস কিন্তু মোটেও কোনো নতুন রোগ নয়। অন্তত দক্ষিণ এশিয়ায় তো নয়ই। একুশ শতকের শুরুর ১০ বছরেও একাধিকবার এই রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের নানা অঞ্চলে। ২০০৩ এবং ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কয়েকজন শিশু আক্রান্ত হয়েছিল স্ক্রাব টাইফাসে। ওরিয়েন্টিয়া সুৎসুগামুসি নামক ভাইরাসের থেকে হয় এই রোগ। আর এই ভাইরাসকে বহন করে নিয়ে আসে ছারপোকার মতো ছোট্ট একটি পোকা, যার নাম চিগার্স। সাধারণত নোংরা ঝোপঝাড়ের মধ্যেই বংশবিস্তার করে চিগার্স। আর তারপর কোনো ভাইরাস সংক্রামিত চিগার্স মানুষকে কামড়ালে স্ক্রাব টাইফাস রোগ দেখা দেয়।

এই ছারপোকা সাধারণত মানুষের বগল, কুঁচকি, ঘাড় ইত্যাদি যেসব জায়গায় বেশি ঘাম হয়, সেখানেই কামড়ায়। প্রাথমিকভাবে কামড়ের সামান্য দাগ ছাড়া কিছু দেখা যায় না। কিন্তু মোটামুটি সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নানা উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। জ্বর, মাথাব্যথা, পায়খানা-প্রস্রাবের সমস্যা, মল-মূত্রের সঙ্গে রক্তপাত ইত্যাদি। আর এর সঙ্গে শরীরে লাল রঙের র্যা শও বেরতে থাকে। অনেক সময় কামড়ের জায়গায় বিষাক্ত পুঁজ জমা হয়। তবে মোটামুটি অর্ধেক ক্ষেত্রে এই রোগ নিজে নিজেই সেরে যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি রোগ না সারে, তাহলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। আর তাই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখামাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

স্ক্রাব টাইফাসের কোনো প্রতিষেধক এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসকরা সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের উপরেই নির্ভর করেন। এক্ষেত্রে ডক্সিসাইক্লিন নামক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেয় আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। তবে রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা হল বাড়ির আশেপাশে সবসময় আগাছা পরিষ্কার করে রাখা। বিশেষত বর্ষাকালে চিগার্স নামক পোকাটির বংশবিস্তারের সময়। এই সময় আগাছা পরিষ্কার করে রাখলে সংক্রমণ অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েও গিয়েছে। তবে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে, এটাই আশঙ্কার বিষয়। ইতিমধ্যে কয়েকশো শিশুর জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। আরও কয়েকশো শিশু মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এই শিক্ষা থেকে হয়তো আগামী বছরগুলিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেবে সরকার।

আরও পড়ুন
মহাকাশে জন্ম নিল ব্যাকটেরিয়া, ভারতীয় বিজ্ঞানীর নামে নামকরণ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ব্যাকটেরিয়ার আচরণের সঙ্গে সাদৃশ্য পদার্থবিদ্যার তরল স্ফটিকের, অবাক গবেষকরা