ছড়াতে পারে নিপা-সহ একাধিক নোভেল ভাইরাস! আশঙ্কা নতুন মহামারীর

উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের ঘটনা ধরা পরার পর, পেরিয়ে গেছে একটা গোটা বছর। কিন্তু এখনও মারণ ভাইরাসের মোকাবিলা করে উঠতে পারেনি পৃথিবী। কোথাও চলছে গণটিকাকরণের প্রস্তুতি, আবার কোথাও ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনে দিশেহারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এসবের মধ্যেই নতুন আশঙ্কার কথা জানালেন থাইল্যান্ডের ভাইরোলোজিস্ট এবং অতিমারী বিশেষজ্ঞ সুপাপর্ন ওয়াচারাপ্লুয়েসাদে। এশিয়ার ট্রপিক্যাল অঞ্চলে ঘন জীববৈচিত্রের জন্য রয়েছে অসংখ্য প্যাথোজেন। যার মধ্যে উপস্থিত বেশ কিছু নোভেল ভাইরাসও। এই ভাইরাসগুলিই পরবর্তীকালে ভয়ঙ্কর মহামারীর রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করলেন সুপাপর্ন। জানালেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সংক্রমাক প্রভাব করোনাভাইরাসের থেকেও বেশি।

থাইল্যান্ড-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশেই দ্রুত কমছে বনভূমির আয়তন। তার জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন নগরী, কারখানা। বসতি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানুষের সংঘাত বাড়ছে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে। সেইসঙ্গে মানুষ সংস্পর্শে আসছে এইসব সম্পূর্ণ অজানা প্যাথোজেনগুলির। 

এমনই অন্যতম একটি প্যাথোজেন নিপা ভাইরাস। যা ছড়িয়েছিল মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকেই। ফ্রুট ব্যাট বা ফ্লাইং ফক্সের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংস্পর্শে আসে মানুষের। তবে সবথেকে বড়ো চিন্তার কারণ হল, ভ্যাকসিন তো দূরের কথা এই ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা-পদ্ধতিই আজ পর্যন্ত খুঁজে বার করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সংক্রমণের অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে মৃত্যুর হার হতে পারে ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। 

তবে শুধু সুপাপর্ন একাই চিন্তিত নন, সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-ও। প্রতিবছরই আশঙ্কাজনক প্যাথোজেনের একটি তালিকা প্রকাশ করে হু। যাদের মধ্যে মহামারী তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই সেই তালিকায় প্রথম ১০-এর মধ্যেই নাম তুলেছে নিপা ভাইরাস। যার সংক্রমণ এশিয়ায় ইতিমধ্যেই হয়ে থাকলেও, তা সম্পূর্ণ মহামারীর রূপ নেয়নি এখনও পর্যন্ত।

তবে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারীর রূপ নিলে তার ক্ষয়ক্ষতি হবে ভাবনাতীত। কারণ এই ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড চলে দেড় মাস। হিসেব মতো ৪৫ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার দরকার সংক্রমিতকে। তবে ৪৫ দিনের ইনকিউবেশন হওয়ায় শুরুদিকে আক্রান্তকে চিহ্নিত করাই মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে আসেন দ্রুত তাঁদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস।

মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড— দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশগুলিতে নিপা সংক্রমণের সম্ভাবনা আকাশ ছুঁচ্ছে দিন দিন। প্রতিদিন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে প্রায় ২৬ লক্ষ মানুষের। কারণ এই দেশগুলির ট্রপিক্যাল অরণ্যে বননিধনের পর গড়ে উঠছে একের পর এক পাম তেল প্রস্তুতকারক কারখানা। এই অঞ্চলগুলিই ছিল ফ্রুট ব্যাটের আস্তানা। ফলে রাতে পাম তেল সংগ্রহের জন্য গাছে ঝুলিয়ে রাখা পাত্রেই ভোজ চালাচ্ছে বাদুড়, ত্যাগ করছে মল-মূত্র। তারপর অজান্তেই প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে সেই তেলের। অজানেই খুলে যাচ্ছে নিপা সংক্রমণের পথ।

আরও পড়ুন
উপসর্গ হাঁচি-কাশি, মারণ ভাইরাস হানা দিয়েছিল ব্যাটম্যানের শহরেও

চলতি বছরেও মালয়েশিয়ায় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০০ জন মানুষ। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বৈদেশিক রপ্তানির ফলেই ভারত এবং বাংলাদেশেও নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল এর আগে। তবে এর পরেও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে না দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে। পাম চাষের পাশাপাশি এই অঞ্চলে অনেকেই ফ্রুটব্যাটের বর্জ্র পদার্থ সংগ্রহ করেন, সার তৈরির জন্য। যা একটি দীর্ঘ জনগোষ্ঠীর প্রধান উপার্জনের পথ। সংক্রমণের আশঙ্কা চরম তাঁদের মধ্যেও। তবে ঠিক কবে সতর্ক হবে প্রশাসন, ইয়ত্তা নেই তার। সংক্রমণ বা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা কীভাবে আটকানো যাবে, সে বিষয়েও সঠিক রূপরেখা এখনও তৈরি করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে বননিধন বন্ধ হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমবে বলেই আশাবাদী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং এপিডেমিওলজিস্টরা। যা বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে পাথরবাটির মতোই...

Powered by Froala Editor