সময়ের স্রোত বয় বিপরীতে, অস্তিত্ব রয়েছে অদ্ভুত যমজ ব্রহ্মাণ্ডের

প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ডের কথা অল্পবিস্তর সকলেই জানি আমরা। সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ড আদতে আমাদেরই মহাবিশ্বের একটি প্রতিরূপ মাত্র। সেখানেও রয়েছে আকাশগঙ্গা, সৌরমণ্ডল, পৃথিবী, জীবজগৎ। এমনকি এও হতে পারে, সেই মহাবিশ্বে আপনারও প্রতিরূপ এই মুহূর্তে এই লেখাটিই পড়ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক গাণিতিক তত্ত্ব এবং কিছু ঘটনাই আরও জোরদার করেছে এই তত্ত্বকে। তবে এবার আরও বিচিত্র এক সমান্তরাল মহাবিশ্বের কথা জানালেন বিজ্ঞানীরা। সেই মহাবিশ্ব আমাদের পরিচিত ব্রহ্মাণ্ডের যজম হলেও, সেখানে সময় (Time) প্রবাহিত হয় উল্টোস্রোতে।

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। প্যারালাল ইউনিভার্সের বদলে গবেষকরা এই মহাবিশ্বের নামকরণ করেছেন ‘অ্যান্টি-ইউনিভার্স’ (Anti-Universe) হিসাবে। সিপিটি উপপাদ্য এবং তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই এই বিশেষ তাত্ত্বিক মহাবিশ্বের মডেল তৈরি করেছেন গবেষকরা। সম্প্রতি ‘অ্যানালস অফ ফিজিক্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। এই মডেল আগামীদিনে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব এবং চরিত্র বুঝতেও সাহায্য করবে বিজ্ঞানীদের। কিন্তু এই উল্টোস্রোতে সময় প্রবাহের রহস্য কী? 

এই রহস্য বুঝতে গেলে বুঝতে, প্রথমে বুঝতে হবে সিপিটি থিওরেম বা মৌলিক প্রতিসাম্যকে। এই উপপাদ্য অনুযায়ী তড়িতাধান, সমতা বা প্যারিটি এবং সময়— এই তিনটি রাশিই প্রতিসম। অর্থাৎ, একটি ভৌত মিথস্ক্রিয়ায় কোনো একটি রাশিকে যদি সম্পূর্ণভাবে উল্টে দেওয়া হয় তারপরেও সেটি একইরকম আচরণ করবে। তিনটি রাশির সংমিশ্রণ এই প্রতিসাম্য লঙ্ঘন করেনি কখনো। 

এই ধারণা থেকেই উঠে আসছে সময়ের বিপরীত প্রবাহের তত্ত্ব। ইলেকট্রন, প্রোটন কিংবা মিউয়নের মতো মৌলিক কণাগুলির প্রতিকণার অস্তিত্ব রয়েছে এই পৃথিবীতেই। যাদের ভর এক হলেও প্যারিটি বা সমতা, আধান এবং ঘূর্ণনের দিক ভিন্ন। খুব সরলভাবে বলতে গেলে এই ধরনের কণা দিয়ে তৈরি একটি সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে সময় বিপরীত দিকে প্রবাহিত হলে প্রতিসাম্য লঙ্ঘন হবে না। 

আরও পড়ুন
ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড়ো ছায়াপথের হদিশ

গাণিতিকভাবেও এই ঘটনার প্রমাণ দিয়েছেন গবেষকরা। তবে এই যমজ বিশ্বের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গেলে আবশ্যিকভাবেই চিহ্নিত করতে হবে নিউট্রিনো কনার প্রতিকণার অস্তিত্ব। মূলত, তিন ধরনের নিউট্রিনো কণা পাওয়া যায় এই ব্রহ্মাণ্ডে। তাদের প্রত্যেকেরই ঘূর্ণন হয় বাঁদিকে। ডানদিকে ঘূর্ণায়মান নিউট্রিনো কণার সন্ধান মিললে সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হবে এই বিপরীত যমজ বিশ্বের অস্তিত্ব। অবশ্য এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনো কণারই অস্তিত্ব খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। 

আরও পড়ুন
সার্নের কণা ত্বরকে ধরা দিল ব্রহ্মাণ্ডের আদিমতম কণা ‘X’

তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও একটি পরীক্ষা আকস্মিক ফলাফল ইঙ্গিত দিয়েছিল বিপরীত মহাবিশ্বের। আন্টার্কটিকা ইমপালসিভ ট্রানসিয়েট অ্যান্টেনায় ধরা পড়েছিল অদ্ভুত টাউ নিউট্রিনোর স্রোত। মূলত, নিউট্রিনো কণা মহাবিশ্ব থেকে কোনোরকম শক্তিক্ষয় ছাড়াই এসে পৌঁছায় পৃথিবীতে। ২০১৬ সালে গবেষকরা যে নিউট্রিনো কণার স্রোত চিহ্নিত করেছিলেন, তার উৎস ছিল পৃথিবী। এই ঘটনার অর্থ একটাই। সংশ্লিষ্ট কণাগুলি ভ্রমণ করছে সময়ের বিপরীতে। অর্থাৎ, সময়ের স্রোতও উল্টোদিকে প্রবাহিত হচ্ছে কোনো অজানা সমান্তরাল মহাবিশ্বে।

আরও পড়ুন
ধরা দিল ব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে পুরনো ব্ল্যাকহোল, আশ্চর্য চরিত্রে অবাক বিজ্ঞানীরাও

এবারের গবেষণাতেও সেই একই ইঙ্গিত দিয়েছেন গবেষকরা। বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের আগের ঘটনা আমরা কিছুই জানি না। গবেষকদের অনুমান, বিগ ব্যাং-এর পর যেমন সময় যেমন সামনের দিকে প্রবাহিত হয়েছে আমাদের পরিচিত ব্রহ্মাণ্ডে, তেমনই অ্যান্টি-ইউনিভার্সে এই সময় প্রবাহিত হয়েছে সময়ের বিপরীতে। অর্থাৎ সেখানে সময় ক্রমশ পিছিয়ে চলেছে বিগ ব্যাং-এর পূর্ববর্তী ঘটনাপ্রবাহের দিকে। অ্যান্টি-নিউট্রিনো কণা হদিশ মিললেই এই তত্ত্বের গায়ে পাকাপাকি শিলমোহর বসবে বলেই মনে করছেনও বিজ্ঞানীরা…

Powered by Froala Editor