নির্দিষ্ট সময় পরপর আসে সংকেত, মহাবিশ্বে তরঙ্গের উৎস সম্পর্কে নতুন তথ্য

মহাবিশ্বের কোনো এক অজ্ঞাত উৎস থেকে ভেসে আসে এই বেতার সংকেত। মহাকাশ বিজ্ঞানের বইতে তার নাম লেখা হয়, এফআরবি ১২১১০২। এই দ্রুত বেতার বিস্ফোরণ বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই। তখন অনেকে মনে করেছিলেন, কোনো ভিন গ্রহের প্রাণী বুঝি পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে নিজস্ব বার্তা। অবশ্য বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে এই তরঙ্গ একেবারেই প্রাকৃতিক। কিন্তু ঠিক কী কারণে যে এমন তরঙ্গ সৃষ্টি হচ্ছে, আজও তা বুঝতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

এর মধ্যেই মহাকাশের বেতার গ্রাহক যন্ত্রে ধরা পড়েছে আরও কিছু সংকেত। এই বছরের শুরুতেই বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন এফআরবি ১৮০৯১৬। এর চরিত্র ঠিক আগের মতোই। তবে অবাক করা বিষয় একটাই, এই বিস্ফোরণের সংকেত পাওয়া যায় ঠিক ১৬ দিনের কিছু বেশি সময় পরপর। চারদিন ধরে মাঝেমাঝে চলে বিস্ফোরণ। আবার ১২ দিন সব চুপচাপ। অবশ্য এই বিস্ফোরণেরও কোনো উৎস খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এপ্রিল মাসের শেষ দিকে অনুরূপ আরেকটি সংকেত পাওয়া যায় আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির একটি দূরতম ম্যাগনেটার নক্ষত্র থেকে। আচারে, ব্যবহারে বাকিদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে এটি। ফলে অনেকেই অনুমান করছেন ম্যাগনেটার থেকেই জন্ম নেয় এই এফআরবি। তবে অন্য কোনো উৎস যে থাকতে পারে না, সেবিষয়ে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা।

এফআরবি নিয়ে এই গবেষণার মাঝেই উঠে এল নতুন তথ্য। না, অন্য কোনো সংকেত নয়। সেই প্রথম আবিষ্কৃত এফআরবি ১২১১০২-এর মধ্যেই আছে একটি বিশেষ চরিত্র। এতদিন সেটা লক্ষ্য করেননি বিজ্ঞানীরা। দ্বিতীয় এফআরবির ১৬ দিনের পর্যায়ক্রমিক গতির উল্লেখ তো আগেই করা হয়েছে। কিন্তু এফআরবি ১২১১০২ও নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যায়। তবে সময়টা অনেক দীর্ঘ হওয়ায় এতদিন সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়নি। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে মোটামুটি ৯০ দিন ধরে বিস্ফোরণের সংকেত দেওয়ার পর আবার ৬৭ দিন সব চুপচাপ থাকে। মোটামুটি এই ১৫৭ দিন পরপরই চলতে থাকে পর্যায়ক্রমিক বিস্ফোরণ। আর এই বিশ্লেষণে স্বীকৃতি জানিয়ে ঠিক জুন মাসের ২ তারিখ থেকে আবারও শোনা গেল একই বেতার সংকেত। ফলে এই রহস্যময় বেতার সংকেতের পর্যায়ক্রমিক চরিত্র সম্বন্ধে পুরোপুরি নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা।

মিল্কি ওয়েতে ম্যাগনেটার থেকে এই ধরনের বেতার তরঙ্গের অস্তিত্ব জানা গেলেও অন্যান্য উৎসের সম্ভবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে নিউট্রন স্টার, ব্ল্যাক হোল বা পালসারের থেকে এমন সংকেত আসতেই পারে। আর সেই উৎস সন্ধানে যে এই আবিষ্কার রীতিমতো কাজে লাগবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডানকান লরিমার। আর এই আবিষ্কার ব্রহ্মাণ্ডের আরও কোন অজানা দিক উন্মোচিত করে, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে সকলে...

Powered by Froala Editor

More From Author See More