তরল কেলাস দিয়ে তৈরি সৌর-ব্যাটারি, শক্তি ধরে রাখবে ১৮ বছর

ছোট্ট একটা কাচের পাত্র। তাতে ভরা রয়েছে একটি সবুজ রঙের তরল। সূর্যের আলোয় খানিকক্ষণ রাখলেই তা হয়ে উঠবে স্বয়ংক্রিয় ব্যাটারি। শুনতে অনেকটা জুলে ভার্নের গল্পের মতো লাগছে নিশ্চয়ই? না মশাই, কোনো সায়েন্স ফিকশন নয়। বরং মডার্ন সায়েন্সের নতুন এক অধ্যায়ই শুরু হল এমনই যুগান্তকারী এক আবিষ্কার দিয়ে। এবার তরল একটি কেলাসের মধ্যেই সৌরশক্তিকে আবদ্ধ করার পন্থার হদিশ দিলেন বিজ্ঞানীরা। যা শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম দীর্ঘ ১৮ বছর।

সুইডেনের চালমার্স প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বছর দুয়েক আগে এই ব্যাটারি তৈরি করেন। নামকরণ করা হয়েছে ‘মোস্ট’। হ্যাঁ, নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তার বৈশিষ্ট্য। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সবথেকে কার্যকরী সৌর ব্যাটারি এটিই। যদিও 'মোস্ট'-এর পুরো কথাটা হল মলিকিউলার সোলার থার্মাল এনার্জি স্টোরেজ। গত দু'বছর ধরেই চলছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এবার সফলতার কথা ঘোষণা করলেন তাঁরা। ১২৫ বারের বেশি ব্যবহার করার পরেও কার্যকারিতা বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি বলেই দাবি করছেন গবেষকরা। ব্যাটারিটি গঠিত হয়েছে মূলত ‘সোলার থার্মাল ফুয়েল’-এর ওপর ভিত্তি করেই। যা পারতপক্ষে ওই তরল কেলাসটিই। তবে জ্বালানি বলা হলেও এর মধ্যে ঘটে চলা বিক্রিয়া আসলে একটি আবর্ত প্রক্রিয়া। ঠিক কেমন? 

সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলেই এই কেলাসটির আণবিক গঠন বদলাতে থাকে। আণবিক সংকেতের কোনো বদল হয় না ঠিকই, কিন্তু আন্তঃপারমাণবিক বন্ধনীগুলি সজ্জিত হয় একেবারে নতুন শৃঙ্খলে। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের পরিভাষায় তৈরি হয় নতুন আইসোমার। আর তার মধ্যেই সঞ্চিত হয় সূর্যের শক্তি। পরবর্তীতে এই শৃঙ্খল পুনরায় ভেঙে গেলে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণ শক্তি। যা সাধারণ ঘরোয়া কাজ ছাড়াও ডিসটিলেশন, স্টেরিলাইজেশনের মতো বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য।

তবে এই প্রক্রিয়া এত ‘ভারি’ শোনালেও, যন্ত্রটি দেখতে একেবারেই সাধারণ। কাচের টিউবের মধ্যে ওই বিশেষ তরলকে প্রতিস্থাপিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর তার পিছনে বসানো হয়েছে একটি অবতল আয়না। যার মাধ্যমে সূর্যশক্তিতে একটিই বিন্দুতে উপরিপাতিত করা হয়। ব্যাস, এইটুকুই। শক্তি সঞ্চয় হয়ে গেলে তরলটিকে একটি অনুঘটকের মধ্যে দিয়ে চালনা করা হয়। আর তাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তরলটি। তাপশক্তি হিসাবে সঞ্চিত সৌরশক্তির নির্গমন হয়। তবে ভবিষ্যতে এই যন্ত্রের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ শক্তিতেও রূপান্তরিত করা যাবে সৌরশক্তিকে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী গবেষকরা।

আরও পড়ুন
শামুকের ভিতর হাতজোড় সৈন্য, ব্রিটেনে আবিষ্কৃত ‘মধ্যযুগীয় মিম’-মূর্তি

সৌরশক্তি ব্যবহার দুটি মূল সমস্যা ছিল— সঞ্চয়ের অসুবিধা এবং মেঘলা দিনে শক্তি উৎপাদন। এই ব্যাটারির মধ্যে দীর্ঘদিন শক্তি ধরে রাখার ক্ষমতাও যেমন রয়েছে, তেমনই আছে সৌরশক্তিকে একত্রিত করার বন্দোবস্তও। কাজেই মেঘলাদিনেও কাজ করতে পারবে এই যন্ত্র। অন্যদিকে সিলিকনের ঝঞ্ঝাট না থাকায়, যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেলে থাকবে না পরিবেশ দূষণের ভয়ও। বর্তমানে কয়লা, পেট্রোল ডিজেল কিংবা পারমাণবিক শক্তির বিকল্প খুঁজে চলেছে মানব সভ্যতা। পরিবেশ বাঁচাতে জোর দেওয়া হচ্ছে অপ্রচলিত শক্তির ওপর। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এই আবিষ্কার যে ভবিষ্যতের সেই পথটাই দেখাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই বিন্দুমাত্র…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আবিষ্কৃত চারটি নতুন কণা, বদলাবে পদার্থবিদ্যার তত্ত্বও