শামুকের ভিতর হাতজোড় সৈন্য, ব্রিটেনে আবিষ্কৃত ‘মধ্যযুগীয় মিম’-মূর্তি

ছোট্ট একটা রৌপ্যমূর্তি। আয়তনে বড়োজোর ২ সেন্টিমিটার। সূক্ষ্ম কারুকাজের মাধ্যমে তাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এক যোদ্ধার মূর্তি। একটি ছাগলের পিঠে রাখা এক শামুকের খোলস থেকে খানিকটা বেরিয়ে এসে প্রার্থনা করছেন তিনি। উত্তর ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে এমনই অদ্ভুত একটি মূর্তি খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। আজকের ঘটনা নয়, গত বছর অক্টোবর মাসেই হয়েছিল এই আবিষ্কার।

কিন্তু এই মূর্তির বক্তব্য কী? কিছুই বোঝা যাচ্ছে না নিশ্চয়ই? তেমনটাই হওয়া স্বাভাবিক। কারণ এই জিনিস রীতিমতো ঘোল খাইয়েছে তাবড় প্রত্নতত্ত্ববিদদেরও। এই শতকের সবথেকে ‘অস্বাভাবাবিক’ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হিসাবেই চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি প্রায় তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর তার মানে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞরা।

রূপোর গিল্ট করা এই মূর্তি আসলে কিছুই নয়, বিদ্রুপের প্রতীক। হ্যাঁ, এমনটাই অনুমান করছেন তাঁরা। কিন্তু এ কেমন রসিকতা? তা বুঝতে গেলে চলুন ফিরে যাওয়া যাক এই মূর্তির জন্মলগ্নে। আনুমানিক ত্রয়োদশ শতকে তৈরি হয়েছিল এই মূর্তি। তখন ব্রিটেন জুড়ে চলছে সামন্ততন্ত্র, মধ্যযুগীয় যুদ্ধের মহড়া। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে পরাজিত কোনো সৈনিককে নিয়েই এহেন বিদ্রূপ চলত ব্রিটেনে।

তবে এই ‘শামুক-মানুষ’-কে যুদ্ধের কোনো মেমেন্টো বা শোপিস ভাবলে ভুল হবে। আসলে এই ধাতব মূর্তিটি ব্যাজ হিসাবেই উর্দিতে ধারণ করতেন বিজয়ী সেনাধ্যক্ষ। অথবা চামড়ার কোমরবন্ধনী কিংবা স্ট্র্যাপের সঙ্গেও সংযুক্ত করা হত তাঁর পদ হিসাবে। মধ্যযুগীয় বেশ কিছু পাণ্ডুলিপির চিত্রণ থেকেই এমনটা জানাচ্ছেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিউরেটর নিঙ্ক। সেই বই থেকেই নিঙ্ক তুলে আনেন শামুক আসলে ভীরুতার প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হত মধ্যযুগীয় ইউরোপে।

আরও পড়ুন
মমির মুখে সোনার জিভ! কফিনের ঢাকনা খুলতেই অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা

আজকে ডিজিটালের যুগে দাঁড়িয়ে ‘মিম’ কথাটার সঙ্গে সকলেই অল্প বিস্তার পরিচিত আমরা। কখনো কখনো ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ তো বটেই বরং সরাসরি অপমানের সূচকও হয়ে উঠেছে মিম। ত্রয়োদশ শতকে স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের কল্পনাতীত এক বিষয়। তবে সেই সময়ের পরিস্থিতিও ছিল আজকের মতোই। শুধু ডিজিটালের বদলে এই ধরণের মূর্তি দিয়েই হেয় করা হত জীবন-যুদ্ধে হেরে যাওয়া মানুষদের। আর সেই কারণেই কিউরেটর নিঙ্ক এই ভাস্কর্যকে ‘মধ্যযুগীয় মিম’ বলেই চিহ্নিত করেছেন। সত্যিই, আশ্চর্যজনক বললেও যেন কম বলা হয়। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মানসিকতা যে আমাদের জিনগত প্রবৃত্তি তারই ঐতিহাসিক প্রমাণ এই মূর্তি…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
১৫০০ বছর আগেও ভারতে প্রচলিত ছিল ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নির্মাণকৌশল, তাজ্জব প্রত্নতাত্ত্বিকরা