‘পঞ্চপাণ্ডবের রথের চাকার দাগ দেখছি, তেড়ে এল ভালুক’

গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশনের নিচ দিয়ে বয়ে গেছে আদি খাল, ইতিহাসে যার নাম খোদিত আছে টালি সাহেবের নালা নামে। খালের সমান্তরালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস রোড। সেই রাস্তার এক পাশে নাকতলা, অন্য পাশে বিধানপল্লী। খালের এপার থেকে ওপারে পিনকোড বদলে যায়। পরিবেশও। 

বিধানপল্লীতে ঢোকার মুখেই শিশু উদ্যান। যাঁর নামে এলাকার নাম, সেই বিধানচন্দ্র রায়ের আবক্ষ মূর্তি। উদ্যানকে বাঁহাতে ফেলে আরও কিছুটা এগোলে ক্রমশ গাছগাছালির ছায়া দীর্ঘতর হয়। বিধানপল্লী শিক্ষা নিকেতন, বীণা বালিকা বিদ্যালয়। বালিকা বিদ্যালয়ের গা ঘেঁষে রাস্তা ধরে ঢুকলে বাঁহাতে পড়বে বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগার। সঙ্গে মুখোমুখি দু’খানা পাম্পিং স্টেশন। বড়ো পাম্পিং স্টেশনটি বামফ্রন্ট আমলে হয়েছিল, তার বয়স কুড়ির কাছাকাছি। ছোটোটি তৃণমূল সরকারের সময়ে, বিশেষ অনুপ্রেরণায়। এই দুটি কীর্তি ছাড়া বাকি সবই পাঁচের দশকে স্থাপিত। তখন এখানে কলোনি গড়ে উঠেছে। 

বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারের বয়স তেষট্টি পার হয়েছে। সামনেই দু’খানা প্লাস্টিকের বড়ো টেবিল গায়ে-গায়ে লাগিয়ে দোকান করেছে তিনজন। তেলেভাজার দোকানের মালিকানা বর্ণালীদির, চা-সিগারেট-রুটি-তরকারির দোকানের মালিক বাবুদা আর তার স্ত্রী শুক্লাদি। 

এই অঞ্চলে আমার অফিসঘর। সান্ধ্য জলখাবারের খোঁজে তেলেভাজার দোকানে আমার প্রায় রোজকার যাতায়াত। খাওয়ার সঙ্গে মানুষ-নিরীক্ষণ চলে।

সেখানেই আমার সঙ্গে দেখা হরিশঙ্কর দাসের।

সেদিন দোকানে যখন পৌঁছেছি, তখন আকাশে-বাতাসে সন্ধে-সন্ধে ভাব। মেঘ থাকার কারণে বেশ গুমোট। বিশাল জায়গা জুড়ে দু’খানা পাম্পিং স্টেশন থাকার ফলে দশ-বারো হাতের মধ্যে কোনও বাড়িঘর নেই। বাড়িঘরের স্বাভাবিক কোলাহলও তাই অনুপস্থিত। 

হরিশঙ্কর দাসের ডাক নাম হরে। সম্পর্কে বাবুদার মামা। বয়সের কারণে শরীরে স্বল্প স্থূলতা এসেছে, কিন্তু সুঠাম কাঠামোটা দিব্যি বোঝা যায়। হাতের বাইসেপ-ট্রাইসেপ সুগঠিত। বিধানপল্লীতেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা, এখনও থাকেন এখানেই। বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারের ঘরে তাঁর বিছানা ফেলা আছে। বিছানাকে ঘিরে টেবিল, চেয়ার, এবং আরও নানা প্রয়োজনের উপকরণ। স্ত্রী আর ছেলে থাকে রাজপুরে, পয়সা জমিয়ে সেখানে বাড়ি করেছেন হরেমামা। 

আসার পথে খানিক দূর থেকেই লক্ষ করেছি, স্কুটি নিয়ে অপেক্ষা করা একজন মহিলার জন্য ঠোঙা ভর্তি করে গরম তেলেভাজাগুলো তুলে দিচ্ছেন। যত্নের সঙ্গে।

কথায় কথায় বেরিয়ে এল, মানুষটি ভোজন এবং ভ্রমণ, দুইয়েরই ভক্ত।

ওড়িশায় বেড়ানোর কথা হচ্ছিল সেদিন। ভূতত্ত্ব পড়ার কারণে ওড়িশার পাহাড়-জঙ্গলে বার তিনেক যাওয়া হয়েছে। সে দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের দেশ। সবুজ জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে থাকে মূল্যবান খনিজ। টাটা, ইমফা, ওএমসি, এমন নামকরা মাইনিং কোম্পানিদের বড়ো বড়ো মেশিনের নিষ্পেষণ চলে সেখানে। কেওনঝড়ের জোডা লৌহখনি, টোমকা-দয়তরী লৌহখনি, ময়ূরভঞ্জের বাদামপাহাড়-সুলাইপাত লৌহখনি, কটকের নুয়াশাহি ক্রোমাইট খনি, এই চারটে খনি অঞ্চলে সশরীরে যাওয়ার সুযোগ ঘটেছিল। ওপেন কাস্ট, আন্ডারগ্রাউন্ড, দু’ধরনের খনিতেই কাজ হত আমাদের। সেসব নিচু পাহাড়শ্রেণি, সবুজ শালের বন, গ্রানাইট-গ্যাব্রো শিলাদের সুবিস্তৃত প্রান্তর – কতকাল দেখিনি সেসব। 

হরেমামা ওড়িশার এইসব জায়গায় ঘুরেছেন। বাদামপাহাড়ের কথা বলতেই বলে উঠলেন – “ওখানে এই বড়ো বড়ো কাজুবাদামের গাছ দেখেছেন তো?”

জানাই, দেখেছি। ফেরার সময়ে জোশীপুর থেকে কাজুবাদাম কিনেও এনেছিলাম। 

এমন নানা কথা হতে হতে একসময়ে তিনি বললেন – “আমাকে একেবারে ভাল্লুকে তাড়া করেছিল জানেন।”

কৌতূহলী হয়ে উঠি। হরেমামা বলতে শুরু করেন রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়েই।

ওড়িশাতে তাঁরা গিয়েছিলেন পাঁচজন বন্ধু মিলে। তখন অবশ্য তাঁরা ‘উড়িষ্যা’ বলতেন। উপলক্ষ্য ছিল, এক পাড়াতুতো দাদার শালীর বিয়ে। সেই পাঁচজনের মধ্যে দুজন ছিলেন মামার বড়ো কাছের। দুজনের অবশ্য কেউই আর বেঁচে নেই। তাঁদের কথা বলতে গিয়ে মামা ডানহাতের বুড়ো আঙুলটা বার করে মদ খাওয়ার ভঙ্গি করে বলেন – “এইসব টানার লোক তো। যারাই এসব বেশি করেছে, তারাই সব আগে মরেছে।”

আমি জিজ্ঞাসা করি – “এসব কত বছর আগের কথা?”

মামা বলেন – “তা ধরুন কম করে হলেও এইট্টি সেভেন তো হবেই। যাদের বাড়িতে উঠেছিলাম, সে বাড়ির একদম কাছেই একটা পাহাড়। আশেপাশে আরও পাহাড় ছিল, সেসব পাহাড়ের ওপরে মন্দির। তখন ওখানে খুব ভাল্লুক বেরোত। রাত ন’টা বেজে গেলে আর আমরা বাড়ির বাইরে থাকতাম না।”

বিকেলটা আস্তে আস্তে নিভে আসছে। এই সময়ে এই ঘুমন্ত পাড়াগুলোতে এক স্বাভাবিক নির্জনতা ঘনিয়ে আসে, হরেমামার কাহিনি সেই নির্জনতার সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে যায়।

ওখানকার দৈনিক যাপনের কথা হয়। ওখানকার সব বাড়ি তখন লম্বায় বেশি হত, চওড়ায় তত নয়। মামা বলছিলেন এক অদ্ভুত ঘটনা – “আর একটা ব্যাপার কী জানেন, যত পয়সাওয়ালা লোকই হোক, ঘরের মেয়েরা, ওই সন্ধে নামল তো, গলা অবধি ঘোমটা টেনে বাড়ির বাইরে বেরোল। ঘোমটাটা এত বড়ো দিত যে নিচ থেকে শাড়ি উঠে গিয়ে পা দেখা যেত। আমাদের ওই দাদার শালীকে আমরা এই নিয়ে খ্যাপাতাম। ওরা বেশ পয়সাওয়ালা ঘর ছিল। জঙ্গলে যেসব চোরাকাঠের কারবারি ছিল, ওরা সেসব কাঠ কিনে আনত। মুদির দোকান ছিল। এই উঁচু উঁচু বস্তায় চিঁড়ে-মুড়ি। তা ওইরকম এক-একটা বস্তা ডেলি, আপনাকে কম করেই বলছি, দশটা তো বিক্রি হতই। ওদিকে চিঁড়ে-মুড়িটা লোকে খুব খায়।”

মামাদের আমন্ত্রয়িদের অবস্থাপন্নতার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিল না আমার। বরং, জানতে ইচ্ছা করছিল ওইসব মহিলারা সন্ধেবেলায় ওরকমভাবে কোথায় যেত। 

মামা বলেন – “ওরা যেত পায়খানা করতে। একটু এগোলেই মেন রাস্তা। সেখানে ন’মাসে-ছ’মাসে একবার করে একটা বাস কি লরি যায়। ওই রাস্তার ধারে বসে ওরা পায়খানা করত। আপনাকে বললাম না যে যত পয়সাওয়ালা ঘরই হোক, যত বাথরুম-পায়খানাই থাকুক, বাড়ির মেয়েরা ওই সন্ধেবেলায় ওভাবেই পায়খানা করতে যাবে। আমরা যাদের বাড়িতে উঠেছিলাম, তাদের বাড়িতে তিন-তিনটে বাথরুম।”

সেই প্রসঙ্গ থেকে অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই সরে আসেন তিনি। সেবার বাইশদিন ছিলেন তাঁরা। তখনও খোলা বাজার অর্থনীতির কোপ এসে পড়েনি মানুষের জীবনে, পুঁজির কেন্দ্রীকরণ হয়নি। জিনিসপত্র পাওয়া যেত সস্তায়। ওড়িশায় তখন এক টাকায় সারাদিনের জন্য সাইকেল ভাড়া পাওয়া যেত। সেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে মামারা বেরিয়ে পড়তেন। পাঁচ বন্ধু একসঙ্গে। ঘুরতে ঘুরতে পাঁচজনের মধ্যে দুজন মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ত খড়ের ছাউনি, মাটির দেওয়াল, তালপাতায় ঢাকা ঘরে। সেখানে মহুয়ার রস, বিলিতি বা বাংলা মদের সঙ্গে তার কোনও তুলনাই চলে না। স্বাদে, গন্ধে, মাদকতায় সে স্বতন্ত্র। কলকাতা থেকে তাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন কয়েক বাঁট চরস। ওই চরস আর মহুয়ার মিশেলে ডুবে থাকতেন তাঁরা।

আমি জানতে চাই – “কোন সময়ে গিয়েছিলেন?”

হরিশঙ্কর দাসের মনে আছে সব। বিশ্বায়ন-পূর্ববর্তী সময়ের স্মৃতি, বৃষ্টির ফোঁটার মতোই টুপটাপ ঝরে পড়ে তারা। বলেন – “গিয়েছিলাম জুলাই মাসে। জুলাইয়ে ওখানে কী হয় জানেন তো, ছেলেরা সব কালীঠাকুর, শিবঠাকুর সেজে, বাড়ি বাড়ি আসে পয়সা নিতে। ওদের ওখানেও বোধহয় ‘সং’-ই বলত, আমার মনে নেই। আর এই কয়েকটা বাড়ি ছাড়া ছাড়া অনুষ্ঠান হত। সন্ধেবেলায়। বাচ্চারা নাটক করত। সাইকেল রেখে আমরা সেসব অনুষ্ঠান দেখতাম। কিন্তু আমি তো আর ওড়িয়া ভাষা কিছুই বুঝতে পারতাম না। আমার তাই বেশিক্ষণ ভালো লাগত না, আমি এদিক-ওদিক ঘুরতাম। আবার বেশি যাওয়াও যেত না, ভাল্লুকের ভয় আছে তো।”

আশেপাশে পাহাড়। বর্ষায় পাহাড়ের রূপ সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছয়। পাহাড়ের মাথায় সব মন্দির। তবে মন্দিরে পৌঁছতে গেলে খানিক কসরত করে উঠতে হয়। গাড়ি চড়ে গেলে ঘুরে ঘুরে, পাক খেতে খেতে ওপরে ওঠা। আর হেঁটে গেলে পাহাড়ের গায়ে কাটা সিড়ি দিয়ে উঠে যেতে হবে। মামাদের তখন জোয়ান বয়স, ‘গায়ে জোর, বুকে দম’, তাঁরা সেসব গাড়ি চড়ার ধার ধারতেন না। পাহাড়ের নিচে সাইকেল রেখে হেঁটেই উঠতেন। বাঁদরের উৎপাত সামলানোর জন্য হাতে থাকত লাঠি।

একটানা কথা বলতে বলতে হরিশঙ্কর দাসের কাশি এসে যায়। খানিক কেশে নিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে আবার তিনি বলতে শুরু করেন – “মন্দির বারোটায় বন্ধ হয়ে যায়। আমরা গিয়ে দেখি, বন্ধ। ফিরে আসছি, দেখি একজন লোক আসতে মন্দিরের পুরোহিত দিব্যি তাকে দরজা খুলে দিল। সে লোকটা পুলিশ অফিসার। ওকে যেতে দিয়েছে দেখে আমরাও তখন ঢোকার জন্য গেছি, আমাদের আটকে দিয়েছে। বলছে, মন্দিরে আর ঢোকা যাবে না। আমরা তখন বলছি, না, ওকে যখন দিয়েছ ঢুকতে, আমাদেরকেও ঢুকতে দিতে হবে। পুলিশ অফিসার তা কী হয়েছে! পাঁচজন মিলে বলতে তখন আমাদের যেতে দিল। আমরা সে মন্দিরে ঢুকলাম, দর্শন হল।” 

জিজ্ঞাসা করলাম – “সেটা কীসের মন্দির?”

হরেমামা বলেন – “শিবের।”

আবার প্রশ্ন করি – “কীরকম মন্দিরটা?”

মামা বলেন – “এমনি যেমন পাহাড়ি মন্দির হয়। বড়ো জায়গা নিয়ে। সিলিঙে দেখি ঊষার পাখা চলছে। দেখে তো আমি হেবি মজা পেলাম। আমি তখন ঊষার ফ্যাক্টরিতেই কাজ করি।” 

এই বলে মুচকি হাসল মামা।

মামার সঙ্গে আমিও আলগোছে হেসে উঠি। 

মামা ওদিকে ধীরে ধীরে আসল কাহিনিতে ঢোকেন। সেদিন তাঁরা ‘তারা তারিণী মন্দির’ দেখবেন বলে গেছেন। তারা তারিণী মন্দির যে পাহাড়ের ওপর, তার নাম কুমারী। এটা ওড়িশার গঞ্জাম জেলার পুরুষোত্তমপুরে। নিচ দিয়ে বয়ে গেছে রুশিকুল্যা নদী। মামা বলছিলেন – “একটা ভালুক আগের রাতে নাকি বেরিয়ে এসেছিল, তারপর সে আর তার নিজের বাড়ি ফিরতে পারেনি। সকালে দিনের আলো ফুটে গেলে ওরা আর ফিরতে পারে না, লোক চলাচল আরম্ভ হয়ে যায় তো। এবার হয়েছে কী, ওই তারা তারিণীর পুরোহিত, আমাদের বলে, পঞ্চপাণ্ডব এখান দিয়ে গিয়েছিল, তাদের রথের চাকার দাগ দেখিয়ে দেব। প্রত্যেকের দশ টাকা করে লাগবে। ব্যাটা আমাদের বলেইনি যে আশেপাশে ভাল্লুক আছে। পয়সার কাছে সবাই গলে, জানেন তো, আর তখন দশ টাকা মানে ভাবতে পারছেন। সে লোভ কি আর ছাড়তে পারে! পাহাড়ের অনেকটা উপরে নিয়ে গিয়ে আমাদের দেখাচ্ছে – একখানা বিশাল পাথর, দু-তিনতলা বাড়ির সমান, তার গায়ে আমরা দেখছি সেই দাগ।” 

মনে মনে হাসছি আমি। পাথরের গায়ে এমন দাগ, যা কিনা কখনও রথের চাকার দাগ কিংবা কোনও পৌরাণিক বীরপুরুষ বা দৈত্যের পদচিহ্ন হয়ে ওঠে লোককথার তোড়ে, এ জিনিস ছাত্রজীবনে বহুবার দেখেছি আমরা। জিওলজি পড়াকালীন ফিল্ড করার সময়ে এমন দাগ দেখিয়ে আমাদের অধ্যাপকরা জিজ্ঞাসা করতেন, এটা কীসের ফলে হয়েছে বলে মনে হয়? কোনও সময়ে উত্তর দিতে পারতাম, কোনও সময়ে মাথা চুলকোতাম। 

এসব যখন ভাবছি, হরেমামা কাহিনির শেষ এবং রোমহর্ষক অংশটিতে ঢুকে পড়েছেন। 

“হঠাৎ গুহার মধ্যে থেকে ‘খ্যা-খ্যা-খ্যা-খ্যা’ চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে এসেছে সেই ভালুক। যে যেদিকে পারে ছুটেছে। ওরা কোথায় চলে গেছে, দেখতে পাচ্ছি না। আমি দৌড়তে দৌড়তে একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়ে গড়াতে লেগেছি। প্রায় তিনতলা-সমান উঁচু পাথরটা, সেখান থেকে গড়িয়ে পড়েছি। আর ওদিকের পাহাড়ে না প্রচুর কাঁটাগাছ হয়। আমার শরীরে পুরো ছড়ে-কেটে গেছে। 

“ওরা চারজন তো ভেবেছে, আমাকে বোধহয় ভালুকে মেরে ফেলেছে বা খেয়ে ফেলেছে। অবশ্য ভালুক তো খায় না, মেরে রেখে দেয়। অ্যায়সা ধারালো নখ হয়, তা দিয়েই আঁচড়ে-কামড়ে মেরে দেয়। যেখানটায় গড়িয়ে পড়েছি, সেখান থেকে ভাবছি, এবার কোন দিকে যাব। কোন দিক থেকে এসেছি, সেটাও মনে নেই। যা থাকে কপালে, ভেবে একটা দিক ধরে হাঁটা শুরু করলাম। ঠিকই ভেবেছিলাম কিছুদূর নামতেই দেখি ওরা। আমাকে দেখে ওদের যেন বুকে জল এল।” 

সন্ধে নেমে এসেছে। অফিসঘরে ফিরতে হবে এবার। 

মামার তখনও কিছু বলা বাকি ছিল। সেটুকু বলে যান তিনি – “কত ভালো বিয়ে হল, জানেন। কিন্তু সে তাদের পরিবারটা ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়ে… বউটা অন্য একজনের সঙ্গে চলে গেল, কত সম্পত্তি ছিল, সব গেল। এখনও মনে পড়ে তাদের কথা। ওই বাইশদিন ছিলাম, খুব আনন্দ করেছিলাম।”

গল্পের শেষটুকু পেয়ে গেছি মনে করে উঠে পড়েছিলাম চেয়ার ছেড়ে। হেঁটে এগিয়ে এসেছি কিছুটা, পিছন থেকে হরেমামার গলা শুনি – “ছাতাটা ফেলে যাচ্ছেন। নিয়ে যান।”

Powered by Froala Editor

More From Author See More