চল্লিশের দশক। গোটা বিশ্বে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। একদিকে ত্রাস সৃষ্টিকারী জার্মানির ফুয়েরার অ্যাডলফ হিটলার এবং তাঁর পরাক্রমশালী নাৎসি বাহিনী; অন্যদিকে ব্রিটেন-রাশিয়া-আমেরিকা। নাৎজিদের তাণ্ডব রীতিমতো প্রভাব ফেলেছে ইউরোপে। সেই সময় ওই বাহিনীতে ছিলেন এক সৈন্য। প্রথমে অনুগতই ছিলেন; কিন্তু তাণ্ডবলীলা দেখার পর আর স্থির থাকতে পারলেন না। জীবনের চরমতম ঝুঁকি নিলেন তিনি। হিটলারের বাহিনীর ‘বিভীষণ’ হয়ে যোগ দিলেন ব্রিটিশ বাহিনীতে। যাই হয়ে যাক, নাৎসিদের সঙ্গে আর নয়। সেই সৈনিক, রিচার্ড ওয়াডানি ৯৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন।
জন্মসূত্রে রিচার্ড অস্ট্রিয়ান। ১৯২২ সালে প্রাগে জন্মেছিলেন তিনি। সাধারণভাবেই বেড়ে উঠছিলেন। কিন্তু পুরো জীবনটা বদলে যায় ১৯৩৮ সালে। হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানির নাৎসি সেনা অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করে। দখলও করে নেয় জোর দেখিয়ে। শুধু দখল করাই নয়, অনেক যুবকদের বাধ্যতামূলকভাবে নাৎসি দলে যোগদান করানো হয়। সেই দলে ছিলেন রিচার্ড ওয়াডানিও। ভাগ্যের ফের তাঁকে ফেলে দেয় এমন জাঁতাকলে।
নাৎসি বাহিনীর পূর্ব ফ্রন্টের অংশ ছিলেন তিনি। তবে একদম সামনের সারিতে ছিলেন না। আর সেটাই তাঁকে আসল সুযোগ এনে দিয়েছিল। হিটলারের এই নৃশংসতা, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের চিৎকার আর নিতে পারছিলেন না তিনি। এসব থামানো দরকার। কিন্তু এইভাবে নাৎসি বাহিনীর ভেতরে থেকে তো কিছু হবে না! একটাই উপায়- বিভীষণ! চল্লিশের শুরুতে জার্মানি যখন রাশিয়া আক্রমণ করল, তখন পালানোর চেষ্টা করেন রিচার্ড। কিন্তু পারেননি নানা কারণে। ব্যর্থ হন; কিন্তু হতাশ হননি। সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সেটা এলও, ১৯৪৪ সালে। কাঁটাতারের বেড়া টপকে, চূড়ান্ত ঝুঁকি নিয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে গেলেন রিচার্ড। তিনি তখন উত্তর ফ্রান্সে। সেখানে আত্মসমর্পণ করলেন।
কয়েকদিন পরেই রিচার্ড ওয়াডানি ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। সেখান থেকেই যুদ্ধ সম্পূর্ণ করেন। শেষ হবার পর যখন ভিয়েনায় যান, খুব ভালো আপ্যায়ন ছিল না। কিন্তু তিনি তো ইচ্ছা করে নাৎসিদের সঙ্গে যোগ দেননি। অবস্থা তাঁকে বা তাঁদের বাধ্য করেছিল। আরও অনেক হতভাগ্যের মতো তিনিও যে একজন! তৈরি করেছিলেন নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। নাৎসিদের অত্যাচার থেকে যারা মুক্তি পেয়েছিলেন, তাঁদের জন্যই কাজ করত এই সংস্থা। রিচার্ড ওয়াডানির সেই হতভাগ্যের জীবনই শেষ হল সম্প্রতি।