শুধু সিনেমার পর্দাই নয়, বাস্তবেও চলে রক্তচন্দনের পাচার!

কিছুদিন আগেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে অল্লু অর্জুনের সিনেমা ‘পুষ্পা : দ্য রাইজ’ (Pushpa The Rise)। রেড স্যান্ডালউড বা রক্তচন্দনের পাচার এবং চোরাচালানের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা ভারতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরো দমে চর্চা চলছে এই সিনেমা এবং রক্তচন্দনকে (Red Sandalwood) নিয়ে। কিন্তু সামান্য একটি কাঠ পাচারের মাধ্যমে আদৌ কি একটি সাম্রাজ্য গড়ে ওঠা সম্ভব? তবে কি রক্তচন্দন কাঠের আলাদা কোনো বিশেষত্ব আছে? তার চাহিদাই বা আকাশছোঁয়া কেন? 

দামের নিরিখে দেখতে গেলে আফ্রিকার ব্ল্যাকউডের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যবান কাঠ রক্তচন্দন বা রেড স্যান্ডালউড। কোথাও কোথাও যা পরিচিত স্যান্ডার্স উড বা রুবি রেড নামেও। তবে চাহিদার নিরিখে, ব্ল্যাকউডকেও পিছনে ফেলবে রক্তচন্দন। আর তার অন্যতম কারণ হল এই বিশেষ কাঠের দুষ্প্রাপ্যতা। হ্যাঁ, ভারত ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশেই জন্মায় না এই বিশেষ উদ্ভিদ প্রজাতি। এমনকি ভারতেও হাতে গোনা কয়েকটি অঞ্চলে পাওয়া যায় রক্তচন্দন। মূলত, অন্ধ্রপ্রদেশের চারটি জেলা— নেল্লোর, চিত্তোর, কুদ্দাপা, কুরনুল এবং তামিলনাড়ুর সীমান্তবর্তী শেষাচলম পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠে এই গাছ। পূর্বঘাট পর্বতমালার মাটিতে জলের পরিমাণ, অম্লতা এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বায়ুচলাচলের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে এই গাছের বৃদ্ধি। 

ফলে বলার অপেক্ষা থাকে না, সহস্রবছর আগে থেকেই গোটা বিশ্বের রক্তচন্দনের চাহিদা মিটিয়ে আসছে ভারত। রক্তচন্দনের ক্রেতার তালিকায় কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই শীর্ষস্থানে রয়েছে চিন। তাছাড়াও জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং আরবের দেশগুলিতে এই কাঠের চাহিদা শীর্ষে। কিন্তু অন্যান্য কাঠের থেকে কেন আলাদা রক্তচন্দন?

তা হল ঔষুধি গুণ। অম্লতা, ডায়েরিয়া, শ্বাসতন্ত্র, পাচনতন্ত্র এবং রক্ত পরিশোধন-সহ একাধিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় রক্তচন্দনের রস। তাছাড়াও অ্যালকোহলজাত পানীয় বিশেষত ওয়াইনের স্বাদ, বর্ণ এবং গুণমান নিয়ন্ত্রণেও বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় এই কাঠের নির্যাস। কখনও আবার রক্তচন্দনের ব্যারেলেই সংরক্ষিত হয় পানীয়। অবশ্যি চিনে এই কাঠ ব্যবহৃত হয় আসবাবপত্র তৈরিতে। সে দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে রক্তচন্দন। এই বিশেষ কাঠের তৈরি আসবাব চিনে আভিজাত্যের প্রতীক। 

আরও পড়ুন
চোরাশিকারের প্রভাব বিবর্তনেও, দাঁত ছাড়াই জন্মাচ্ছে আফ্রিকার হাতিরা

তবে ক্রমশ এই কাঠের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে সাম্প্রতিক সময়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেআইনি লগিং এবং চোরাচালানের মাত্রাও। ২০১৮ সালে ‘বিলুপ্তপ্রায়’ উদ্ভিদের তালিকায় রক্তচন্দনকে জায়গা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার। এই গাছের সুরক্ষার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্সও তৈরি করেছে ভারত সরকার। কিন্তু তার পরেও স্বমহিমাতেই চলছে গাছের চোরাচালান। সেদিক থেকে দেখলে, ‘পুষ্পা’-র গল্প কোনো মনগড়া কাহিনি নয়। তা বাস্তবেরই প্রতিফলন।

আরও পড়ুন
চোরাশিকারিদের ‘হিটলিস্টে’ প্যাঙ্গোলিন, রক্ষাকর্তা ভিয়েতনামি যুবক

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ছিলেন চোরাশিকারি, পরবর্তীকালে নিজের জীবন বিপন্ন করে রক্ষা করেন কঙ্গোর জঙ্গল