লকডাউনে একধাক্কায় রেকর্ড বৃদ্ধি শিশুশ্রমে, গত ২০ বছরে এই প্রথম

করোনা গৃহবন্দি করেছে মানুষকে। সেইসঙ্গে গ্রাস করেছে সাধারণ মানুষের স্বচ্ছলতাকে। করোনার সংক্রমণে কঠিন মন্দার সম্মুখীন সারা বিশ্বের অর্থনীতি। আর এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে শিশুরাও। একধাক্কায় বেড়েছে শিশুশ্রমের সংখ্যা। গত ২০ বছরের মধ্যে এত পরিমাণ বৃদ্ধি এই প্রথম।

এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্যের কথা শোনাল দিল্লি কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (ডিসিপিসিআর)। অবশ্য এই সংখ্যা বাড়তে পারে আরও, সেই সম্ভাবনার কথাও জানিয়ে রেখেছে ইন্টারনেশনাল লেবার অর্গানাইজেশন। ডিসিপিসিআরের মুখ্য আধিকারিক অনুরাগ কিন্ডু জানান, গোটা ভারতেই দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে শিশুশ্রম। তবে গ্রামাঞ্চলের থেকে শহরেই এর প্রভাব পড়ছে বেশি। কারণ অর্থনৈতিক মন্দাতে শহরের কারখানা, খনি এবং নানান দোকানে এখন শিশুদের দিয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ করানোর প্রবণতা বাড়ছে। 

গত মাসেই দিল্লি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৫টি শিশুকে, যারা শিশুশ্রমের শিকার। এই পরিস্থিতিকে আয়ত্তে আনতেই বাধ্য হয়ে ডিসিপিসিআর ঘোষণা করেছে, শিশুশ্রমের খোঁজ দিতে পারলে অর্থ পুরস্কারও দেওয়া হবে। এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে দিল্লি পুলিশ, নানান এনজিও, চাইল্ডলাইন এবং সাব-ডিভিশন ম্যাজিস্ট্রেটরাও। তৈরি হয়েছে শিশুশ্রম-প্রবণ এলাকাগুলির ম্যাপ।

তবে সব তথ্য পেয়েও অনেক সময়ই ধরা যাচ্ছে না মূলচক্রীদের। পরিচয় গোপন না থাকলে অনেক সময়ই খবর পেয়ে শিশুদের সরিয়ে দিচ্ছে চক্রান্তকারীরা। যে সমস্ত শিশুদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের বয়ান রেকর্ড করছে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। সেই বয়ানের ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। জুভেনাইল অ্যাক্টের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। 

আরও পড়ুন
স্বপ্ন, সন্তান, শিশুশ্রম - এক গতানুগতিক হেরে যাওয়া আমাদের

অনুরাগ কিন্ডু জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই শিশুশ্রমের বিষয়ে অবগত তাদের পরিবার, বাবা-মা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার শিকার হয়েই তাঁদের ছেলে-মেয়েকে কাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশিই বড় দোকানে বা কারখানায় হালকা কাজের পরিবর্তে বড়ো অঙ্কের টাকার লোভ দেখানোর মত ঘটনাও সামনে এসেছে। একদিকে যেমন শিক্ষা, পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে শিশুরা। তেমনই অন্যদিকে এই ঘটনা ক্রনিক ডিপ্রেশনের দিকেও ঠেলে দিচ্ছে তাদের।

২০১১-র গণনা অনুযায়ী, ভারতে শিশুশ্রমের শিকার হওয়া ৫-১৪ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০২৫ সালের মধ্যেই পুরোপুরিভাবেই শিশুশ্রম নির্মূল করবে দেশ থেকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আরও কঠিন অবস্থার দিকেই ঠেলে দিল পরিস্থিতিকে। আদৌ কি ভারত ছুঁতে পারবে তার লক্ষ্য? এই প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরে আসছে...

আরও পড়ুন
শিশুশ্রমিকদের নিয়ে তৈরি স্কুল, লকডাউনের দীর্ঘ ছুটিতে কেমন আছে তারা?

Powered by Froala Editor