লাদাখের শিক্ষাব্যবস্থায় বিপ্লব আনছেন বাস্তবের ‘র‍্যাঞ্চো’

ফুংসুক ওয়াংড়ু-র কথা মনে আছে? ঠিক মনে পড়ছে না? বেশ, র‍্যাঞ্চো? হ্যাঁ, থ্রি ইডিয়টস সিনেমার কথাই হচ্ছে। র‍্যাঞ্চোকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছিল এই সিনেমার গল্পমালা। তবে র‍্যাঞ্চো চরিত্রটি কাল্পনিক নয়। লাদাখের খ্যাতনামা পরিবেশকর্মী, প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক এবং গবেষক সোনাম ওয়াংচুকের জীবনের ওপর ভিত্তির করেই তৈরি হয়েছিল চরিত্রটি। একাধিক উদ্ভাবনার মাধ্যমে লাদাখকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই নয়, লাদাখের শিক্ষাব্যবস্থাকেও রীতিমতো বদলে ফেলেছেন ৫৫ বছর বয়সি সোনাম (Sonam Wangchuk)। 

আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। সেটা আশির দশকের শেষের দিক। কর্মক্ষেত্রে লাদাখের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দুর্দশার ছবি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোনামের। সেসময় লাদাখের প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাশ করতে পারত না বোর্ড পরীক্ষায়। আর যারা কোনোরকম ডিগ্রি সংগ্রহ করতে সক্ষম হত, তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রের সুযোগ থাকত না। 

সমীক্ষায় সোনাম বুঝতে পারেন, লাদাখ শীতল মরুভূমি হওয়ায় সেখানকার পরিবেশ ও মানুষদের জীবযাত্রাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে যে পরিকাঠামোয় শিক্ষা প্রদান করা হয়, তা লাদাখের জন্য প্রযোজ্য নয়। পাশাপাশি দুর্গম অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ না থাকায়, স্কুল স্তর থেকেই দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষাপ্রদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন লাদাখের শিক্ষার্থীদের জন্য। 

১৯৮৮ সালে এই লক্ষ্য নিয়েই গুটি কয়েক ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গী করে তিনি শুরু করেন সাংস্কৃতিক বিপ্লব। প্রতিষ্ঠা করেন লাদাখ স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট। ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি সোনাম। সরকারের অপেক্ষা না করে, নিজেই সেসময় শিক্ষা ব্যবস্থা বদলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। উদ্যোগ নেন স্কুলের পরিকাঠামো বদলের। পাশাপাশি মোটা মাইনের চাকরির সুযোগ ছেড়ে, স্বকীয় ভঙ্গিতে পড়ানো শুরু করেন লাদাখে। 

আরও পড়ুন
ইউক্রেন থেকে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ বাঙালি চিকিৎসকের

মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, ছাত্রদের দিয়েই স্কুল বিভিন্ন কাজ পরিচালনা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষাদান— লাদাখে সবটাই শুরু হয় তাঁর হাত ধরেই। এমনকি লাদাখে তিনি চালু করেন বিশেষ টাইম জোন। অবশ্য তা অলিখিত ভাবেই। ভারতীয় সময় অর্থাৎ আইএসটি’র থেকে লাদাখের স্থানীয় সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে থাকে। যা আপাতভাবে সমস্যাজনক না হলেও, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পৌঁছানো, স্কুল থেকে ফেরা এবং বাড়িতে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা তো বটে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যবহার করতে পারে পড়াশোনার কাজে, সে-জন্যই স্থানীয় টাইমজোন প্রচলন করেন সোনাম। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সৌরশক্তি ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত দিক থেকেও লাদাখকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সোনাম। বলতে গেলে, বিগত তিন দশকে তাঁর এই উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবেই বদলে ফেলেছে লাদাখের পরিস্থিতি। আজ ফেলের হার কমে এসেছে ৫ শতাংশের কাছাকাছি। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে লাদাখের ছাত্রছাত্রীরা। সোনামের এই দূরদৃষ্টি যেন মনে করিয়ে দেয় সিনেমার সেই বিখ্যাত ডায়লগ, ‘কামিয়াব নেহি, কাবিল হোনে কেলিয়ে পড়ো…’

আরও পড়ুন
শিক্ষার জন্য অসম লড়াই, একাধিক পাঠাগার তৈরি করে নজির বাংলাদেশের যুবকের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
অতিমারীতে শিক্ষার অন্যতম হাতিয়ার রেডিও