ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী, ৮৭ বছরে স্নাতকোত্তর শ্রীলঙ্কার বৃদ্ধা

কথায় আছে, জানার কোনো শেষ নেই। তেমন শেখারও কোনো নির্দিষ্ট বয়স হয় না। সেই কথাই আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন শ্রীলঙ্কার ৮৭ বছরের প্রবাসী ‘তরুণী’। প্রবীণতম ব্যক্তি হিসাবে কানাডার (Canada) ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় (York University) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে অনন্য এক নজির গড়লেন ভারাথা শানমুগানাথন (Varatha Shanmuganathan)। 

শ্রীলঙ্কার ছোট্ট গ্রাম ভেলানাইতে জন্ম ভারাথার। বড়ো হয়ে ওঠা থেকে, সংসার— জীবনের প্রায় বেশিরভাগ সময়টাই তাঁর কেটেছে শ্রীলঙ্কায়। সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চলতে থাকা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পরিণতি। রক্তক্ষয়ী সেই সংঘাতে মুছে গিয়েছিল উত্তর ও পূর্ব শ্রীলঙ্কার দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা। প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। কিন্তু এই নৃশংস গৃহযুদ্ধের কারণ কী? কোন রাজনীতি লুকিয়ে রয়েছে তার পিছনে? এই বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কোনো রাস্তাও কি ছিল না? এসব প্রশ্নই শেষ জীবনে তাড়া করে বেড়াত ভারাথাকে।

তাই শেষ পর্যন্ত জীবন-সায়হ্নে এসে শান্তি, ন্যায় এবং সাম্যের হদিশ পেতে এবং শ্রীলঙ্কার ইতিহাসকে আয়ত্ত করতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন শুরু করেন তিনি। ভর্তি হন কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৪ সালেই মেয়ের কর্মসূত্রে শ্রীলঙ্কা ছেড়ে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছিলেন ভারাথা। তখন থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও, সে-সময় পঠনপাঠন সম্ভব হয়ে ওঠেনি তাঁর। ২০১৯ সালে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রবীণ নাগরিকদের বিনামূল্যে শিক্ষাদানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দ্বিতীয় সুযোগ পেয়ে যান ভারাথা। না, এবার আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে থাবা বসিয়েছিল করোনাভাইরাস। অধিকাংশ সময় লকডাউন চলার জন্য অনলাইনেই করতে হয়েছে ক্লাস। তা সত্ত্বেও নাতি-নাতনিদের সামলে কঠিন চ্যালেঞ্জকে পেরিয়ে গেলেন শ্রীলঙ্কান তরুণী। 

তবে এই প্রথম স্নাতকোত্তর নয় ভারাথার। ভারতের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগেই ইতিহাসে স্নাতক হয়েছিলেন ভারাথা। শ্রীলঙ্কার ইংরাজি ও ভারতীয় ইতিহাসের শিক্ষিকা হিসাবেও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরাজির শিক্ষকতা করতে ১৯৯০ সালে তিনি পাড়ি দেন লন্ডনে। না, খুব বেশিদিন অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত থাকতে পারেননি ভারাথা। বদলে ফলিত ভাষাতত্ত্বের কোর্সে ভর্তি হয়ে যান তিনি। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে ৬০ বছর বয়সে। 

আরও পড়ুন
৫৩ বছর বয়সে সোনা জিতে চমক ডাচ প্যারালিম্পিয়ানের

নব্বইয়ের কোঠায় এসেও যে তাঁর তারুণ্যে ভাঁটা পড়েনি, তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন ভারাথা। গত ২ নভেম্বর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বারের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে নজির তৈরি করেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়। শ্রীলঙ্কার ইতিহাস এবং গৃহযুদ্ধ বিষয়ে সম্পূর্ণ একটি গ্রন্থরচনাই এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তরুণ প্রজন্ম তো বটেই, প্রবীণ শিক্ষার্থীদের কাছেও এখন অনুপ্রেরণার অন্য নাম ভারাথা শানমুগানাথন।

আরও পড়ুন
৯১ বছর বয়সেও দাপাচ্ছেন বাইশ গজ, অস্ট্রেলিয়ার সেনসেশন ‘তরুণ’ ডগ ক্রোওয়েল

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৮১ বছর বয়সে পিএইচডি, স্তন ক্যানসারের গবেষণায় নজির বৃদ্ধ চিকিৎসকের