দিল্লিতে ঘরছাড়া পাখিদের বাসা বেঁধে দেন ‘নেস্ট ম্যান’

শহরের পরিবেশে ক্রমশ কমে আসছে পাখির সংখ্যা। অল্প কিছু পাখি ভুল করে চলে এলেও শহরে বাসস্থান খুঁজে পায় না। বাসা বাঁধার মতো কোনো গাছ তো নেইই। এমনকি মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে গেলে তাঁরা তাড়িয়ে দেন। এইসমস্ত আশ্রয়হীন পাখিদের জন্যই এগিয়ে এসেছেন রাকেশ খেত্রী। দিল্লি শহরের এই পরিবেশকর্মী নিরলস পরিশ্রমে শহরকে করে তুলছেন পাখিদের বসবাসের উপযুক্ত। নিজে হাতে তাদের জন্য তৈরি করে চলেছেন কৃত্রিম খাঁচা। প্রায় ২ দশক ধরে এই কাজ করে চলেছেন তিনি। দিল্লি শহরের মানুষ তাঁর নাম রেখেছেন ‘নেস্ট ম্যান’ (Nest Man)।

’৮০-র দশকে ব্যবসার সূত্রে দিল্লি শহরে বসবাস শুরু করেন রাকেশ খেত্রী (Rakesh Khatri)। তখন থেকেই পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। কলকারখানা আর যানবাহনের কালো ধোঁয়া ঢেকে ফেলছিল শহরকে। পরবর্তী দুই দশকের মধ্যে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় কোনো না কোনো পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখতেন খেত্রী। আর সেই সময় থেকেই পাখিদের জন্য কৃত্রিম বাসা তৈরির কাজ শুরু করলেন তিনি।

ছোটো ছোটো কঞ্চি, খড়, পাটকাঠি, শুকনো ঘাস – এইসব দিয়েই বাসা তৈরি করেন রাকেশ। তারপর অপেক্ষা করেন, কখন সেখানে নিজে থেকেই কোনো পাখি এসে থাকতে শুরু করে। অবশ্য প্রথম দিকে এই চেষ্টায় বারবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। প্রতিবেশীরা তাঁকে পাগল বলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই রাকেশ বুঝতে পারেন ঠিক কী ধরনের বাসা হলে পাখিরা সেখানে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে থাকতে শুরু করবে। তখন প্রতিবেশীরাও তাঁর কাজের প্রসংশা করতে শুরু করেন।

দুই দশক ধরে নিজের মতো কাজ করে চলেছেন রাকেশ খেত্রী। কিন্তু তিনি জানেন, একা এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। তাই শহরের তরুণ সমাজের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। কৃত্রিম বাসা তৈরির নানা খুঁটিনাটি বিষয় সেখানে শেখানো হয়। দিল্লি শহরের বাইরেও নানা জায়গা থেকে ছাত্রছাত্রীরা আসেন সেখানে। অতিমারী পরিস্থিতিতে সেই ক্লাস এখন বন্ধ। কিন্তু তার বদলে অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করেছেন রাকেশ। এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রীকে কৃত্রিম বাসা তৈরির কৌশল শিখিয়েছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১২টি ভাষায় পাখি সংরক্ষণ নিয়ে নাটকও করেছেন তিনি। আর এইসমস্ত নাটকে সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি মানুষ সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন।

আরও পড়ুন
গান্ধী-আদর্শে লড়াই, কুষ্ঠ রোগীদের পাশে দিল্লির সমাজকর্মী

এর মধ্যে স্বীকৃতিও কম পাননি তিনি। সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কৃত্রিম বাসা বানানোর জন্য ২০১৯ সালে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে নাম ওঠে তাঁর। এছাড়াও চড়াই সংরক্ষণের জন্য লন্ডনের হাউস অফ কমন্স থেকে পেয়েছেন গ্রিন অ্যাপেল পুরস্কার। আর এর মধ্যেই আইসিএসই বোর্ড জানিয়েছে এবার থেকে চতুর্থ শ্রেণির পাঠক্রমে থাকবে রাকেশ খেত্রীর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের গল্পও। নগরায়ণকে হয়তো বাধা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তার মধ্যেই প্রকৃতির প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখার এই চেষ্টাকে কুর্নিস জানাতেই হয়।

আরও পড়ুন
দিল্লি বিধানসভার নিচে ফাঁসিঘর! হারানো ইতিহাসের খোঁজ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ঋতুস্রাবকে সঙ্গী করেই পর্বতজয় দিল্লির প্রকৃতির