মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠালেন রাজপুত রানি কর্ণাবতী, সাড়া দিলেন সম্রাটও

শুধু বাংলা নয়, ভারতের ইতিহাসের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে রাখি। ভাই আর বোনের পারস্পরিক বন্ধন, ভালোবাসার এক প্রতীক হিসেবেই এই উৎসবকে দেখে এসেছি আমরা। সারা বছর হয়তো দেখা হয় না; কিন্তু রাখি আর ভাইফোঁটার দিন নিয়ম করে সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়। এ তো গেল সামাজিক বন্ধন, যার রেওয়াজ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। রাখির গুরুত্ব কেবল এখানেই সীমাবদ্ধ নেই। পুরাণে, ইতিহাসের নানা ঘটনায় ফিরে এসেছে এই উৎসব। সেখানে বাঁধ মানেনি কোনো ধর্মের, বন্ধু-শত্রুর বিভেদ মুছে গিয়ে সবাই হাত ধরেছিল। বন্ধন বলতে ছিল একটি সুতোর বিশ্বাস…

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর রবীন্দ্রনাথ নিজের হাতে বাংলায় রাখিবন্ধন উৎসব চালু করেছিলেন। উপলক্ষ ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের একত্র করা। ধর্মের বেড়া এক নিমেষে ভেঙে গিয়েছিল সেদিন। তার আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল ভারতে। তখন মুঘলরা দেশ শাসন করছে। সেইসঙ্গে ছোটো ছোটো বেশ কিছু রাজবংশও নিজেদের মতো করে শাসন করে যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। রাজপুত রাজাদের বীরত্বের কথা নিশ্চয়ই কারোর অজানা নয়। তাঁদের সঙ্গে মুঘলদের লড়াই, যুদ্ধ, সন্ধি সমস্তটাই ইতিহাসে একটু একটু করে জেনেছি আমরা। এই বিশেষ কাহিনিও তাদেরই একটি অংশ; যার প্রতিটা ছত্রে ধরা ছিল হৃদ্যতা। 

দিল্লির মসনদে তখন হুমায়ুন। ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে চিতোরের রানি কর্ণাবতী তাঁর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠান। সঙ্গে একটি রাখি। গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ চিতোর আক্রমণ করছেন, এই খবর পেয়ে বাদশাহের সাহায্য প্রার্থনা করছেন তিনি। এই রাখি তাঁদের সেই বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। এমনটা হুমায়ুন কখনও ভাবেননি। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন, রাখি পরেন এবং চিতোর রক্ষা করতে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

কিন্তু যতক্ষণে তিনি পৌঁছোন, ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। বাহাদুর শাহের সৈন্য সমস্ত কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। চারিদিকে শুধু মৃতের স্তূপ। আর রানি কর্ণাবতী? যিনি রাখি পাঠালেন হুমায়ুনকে? বাহাদুর শাহের বাহিনীর হাতে সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য সমস্ত স্ত্রীদের নিয়ে রানি জহর ব্রত করেছেন ততক্ষণে। আগুনেই শেষ হয়ে যায় তাঁদের জীবন। শেষ পর্যন্ত বাহাদুর শাহকে হারিয়ে চিতোর পুনরুদ্ধার করেছিলেন হুমায়ুন। কিন্তু নিজের দখলে নেননি। কর্ণাবতীর ছেলে বিক্রমজিৎ সিংকে সিংহাসনে বসিয়ে বিদায় নেন হুমায়ুন। 

উৎসব কখনও একটা ধর্মের অংশ হয়ে থাকেনি। দিনের শেষে তা হয়ে উঠেছে মানবতার মহামেলা। ইতিহাস থেকে শুরু করে আজও এরকম অনেক নিদর্শন দেখা যাবে। হুমায়ুন, কর্ণাবতী, রবীন্দ্রনাথরা ব্যাতিক্রম নন। সংখ্যায় কম বটে, কিন্তু আজও এঁরা আছেন। ধর্মের কাঁটাতার পেরিয়ে উৎসব হয়ে ওঠে মানব-মঞ্চ। 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিস্মৃতির অতলে শেষ মোঘল রাজকুমার ফিরোজ শাহ, বেগমের মাসোহারা মাত্র পাঁচটাকা

More From Author See More