পুতিনের হীরক রাজ্যে

সত্যজিৎ রায় যদি আজ 'হীরক রাজার দেশে' (Hirak Rajar Deshe) নির্মাণ করতেন, তবে হীরক রাজ্যে মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিকের ওপর নজরদারি যন্ত্র গড়ে তোলার হুকুম হত। সারা বিশ্বের প্রায় সব শাসকই নিজ দেশে কড়া নজরদারি ব্যবস্থা মোতায়েন করেছেন। এর মধ্যে পুতিন (Putin) গোটা ব্যাপারটিকে সূক্ষ্ম শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করবার অব্যবহিত পরে আগ্রাসী দেশটির বড়ো শহরগুলিতে যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনসমাবেশ ও প্রতিবাদসভা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে প্রতিবাদের উত্তাপ নিভে এসেছে। কী কৌশলে রাশিয়ার শাসকবর্গ ভিতরের এই বিরোধিতাকে দমন করতে পারল? শুরি বুরতিন 'মেদুসা' বলে লাতভিয়া ভিত্তিক একটি ওয়েব পত্রিকার প্রতিবেদনে এর উত্তর দেবার চেষ্টা করেছেন। বুরতিন লক্ষ করেছেন যে, যুদ্ধ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে প্রত্যেক রুশির মধ্যে সন্ত্রস্ত ভাব - যেন এক অদৃশ্য সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে সবাই সাবধানী।

রুশি দূরদর্শন বেঁধে দিয়েছে যুদ্ধের প্রসঙ্গ ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনার সীমানা। যারা নিজেদের মত জানাচ্ছিলেন, তাঁদের বক্তব্য হয়ে উঠছিল অসংলগ্ন প্রলাপ  - পরস্পরবিরোধী এক উদ্ভট বয়ান। 

রুশি টেলিভিশনের ইউক্রেন আক্রমণ সম্পর্কিত যাবতীয় অনুষ্ঠানের লক্ষ্য সংবেদনশীল দর্শক - যাঁরা মনে করেন ইউক্রেনে আগুন জ্বলছে এবং ইউক্রেনবাসীদের অমানুষিক যন্ত্রণার ভিতর ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের মস্তিষ্ক ইতিমধ্যেই রাষ্ট্র দ্বারা প্রক্ষালিত হয়েছে, তাঁদের প্রচারের আওতার মধ্যে গণ্য করা হয়নি।

আরও পড়ুন
‘পাইরেসি’-তে ছাড়পত্র, শত্রুপক্ষকে প্রতিহত করতে সিদ্ধান্ত পুতিনের

যদি যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ায় কারো সঙ্গে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেন, তবে তিনি রুশি টেলিভিশনের বাঁধা বুলি আউড়ে যাবেন। রাষ্ট্র তা হলে তাঁকে বিরক্ত করবে না। এবার ধরে নেওয়া  যাক আপনি যুদ্ধের সমর্থক এবং রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিকারের পক্ষে, কিন্তু আপনি নিজস্ব যুক্তি প্রয়োগ করে আপনার মতকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন - তাহলেও আপনার বিপদ আছে। রাষ্ট্র ভাববে আপনি যখন যুক্তির দ্বারা চালিত হন, তখন আজ আপনি যুদ্ধের সমর্থক, কাল আপনার মত উল্টেও যেতে পারে - আপনার ভিতরে বিপজ্জনক প্রবণতা বর্তমান। আপনাকে চিহ্নিত করা হবে, এবং নজরে রাখা হবে। তেমন হলে আপনার ভিটেতে ঘুঘু চরতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও ১৫ বছর মসনদে! নতুন বিল পাশ করলেন পুতিন

প্রাথমিক আড়ষ্টতা কাটিয়ে নড়েচড়ে বসেছে রুশি রাষ্ট্রযন্ত্র। পুরোটাই সুচারু গাণিতিক ছকের ওপর গড়ে তোলা নজরদারি ব্যবস্থা। কোনো ছিদ্র দিয়েই যাতে প্রতিবাদী মানসিকতা প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য এই আঁট-সাঁট ধাঁচা। উদয়ন পণ্ডিতদের খুঁজে বার করা হবে। মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রে তাকে না ঢোকালে হীরক রাজার স্বস্তি নেই।

আরও পড়ুন
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনে সাফল্যের দাবি রাশিয়ার, টিকা নিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের কন্যা

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Powered by Froala Editor