দু-বাংলার সেতু হয়ে হাজির প্রহর, একুশে বইমেলার আড্ডায় জয়ী হল ভাষাই

ভাষা সীমানাহীন। কোনো কাঁটাতার মানে না সে। কথার ওপর ভর করে পৌঁছে যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে। যদিও ‘দেশ’ বিষয়টির সঙ্গে কখনও কখনও জড়িয়ে থাকে রাজনৈতিক ইতিহাসও। ভাষার সেসব দায় নেই। দায় নেই ডিজিটাল বিশ্বেরও। প্রহর আয়োজিত, বাংলাদেশের একুশে বইমেলার প্রাঙ্গণে ‘একই আকাশ একই মাটি একই ভাষা’ শীর্ষক আড্ডায় সে-কথাই উঠে এল বারবার।

আরও পড়ুন
‘ছোটো’ পত্রিকার ‘ছোটো’ পুরস্কার, মঞ্চে উঠে এল লিটল ম্যাগাজিনের বিরাট পরিবার

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার বিকেলে একুশে বইমেলার প্রাঙ্গণ সাক্ষী ছিল এক আশ্চর্য মিলনের। যেখানে জড়ো হয়েছিলেন দু’বাংলার কবি সাহিত্যিকেরা। প্রথাগত কোনো অনুষ্ঠান নয়, নিছক আড্ডার মাধ্যমেই আদানপ্রদান হল ভাবের। বাংলা ভাষাই যেখানে মূল সূত্রধর, অন্যকিছুর প্রয়োজন কী! তবু ছিল। ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রচ্ছদশিল্পী, প্রকাশক সহ একাধিক জগতের মানুষ। অথবা, প্রতিটা জগতই হয়তো ভেতরে-ভেতরে এক। প্রহর যাদের আত্মীয়।

আরও পড়ুন
একে একে ফাঁকা হচ্ছে চারপাশ, চোখে জল – করুণ সুর বুঝিয়ে দিল, বইমেলা শেষ

‘অকালবোধন’-এর প্রকাশক আচার্য মিলনের কথায় উঠে এল সে-প্রসঙ্গই। আবার, কলকাতা বইমেলা ও বাংলাদেশের একুশে বইমেলা তাঁর চোখে কীভাবে ধরা দিয়েছে, সে-ব্যাপারে আলোকপাত করলেন তরুণ কবি হাসান রোবায়েত। তাঁর কথায়, বেশ কিছু মিল ও অমিল সত্ত্বেও, আসলে জয় বাংলা ভাষারই। কবি মোস্তফা হামেদী বললেন দু’বাংলার সাহিত্যের চলন নিয়ে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে দুটি ভিন্ন দিকে সাহিত্যের পথ এগোলেও, ভাষার কাছে এসে মিলে যায় উভয়েই।

আরও পড়ুন
৩৪ জন প্রকাশক নিয়ে বইমেলার শুরু, মেলা চত্বরেই মারা যান আনন্দবাজারের সম্পাদক

আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু, ঐহিকের প্রকাশক-কর্ণধার তমাল রায়, কবি মন্দিরা এষ, কবি, রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়, মৃণ্ময় ভৌমিক, তৌহিদুল ইসলাম সহ আরও অনেকেই। তমাল রায় জানালেন, তাঁর লিটল ম্যাগাজিন ঐহিক দু’বাংলাকে এক সূত্রে বাঁধার চেষ্টায় রয়েছে গত কয়েকবছর ধরেই। সাহিত্যকে দেশের গণ্ডিতে আটকে রাখতে তিনি নারাজ। অন্যদিকে, চারু পিন্টু-র কথায় উঠে এল শিল্পীর ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা। মৃণ্ময় জানালেন, একুশে বইমেলার আতিথেয়তায় তিনি মুগ্ধ। মুগ্ধ প্রত্যেকের আন্তরিকতাতেও। কলকাতা বইমেলার থেকে আলাদা হয়েও কোথায় যেন এক হয়ে যায় একুশে বইমেলা। দু-বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের যাতায়াত সেতু হয়ে ওঠে সেই বন্ধনের।

আরও পড়ুন
ওপার বাংলার বইয়ের বিপুল সম্ভার, কলকাতায় শুরু বাংলাদেশ বইমেলা

সেতু হয়ে উঠেছিল প্রহরের আড্ডাও। শুক্রবারের বিকেল তখন আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে সন্ধ্যার দিকে। আস্তে আস্তে বাড়ছে ভিড়ও। পথচলতি মানুষজন জড়ো হচ্ছেন আড্ডার চারপাশে। শুনছেন কথোপকথন। চোখে প্রশ্রয়। আবার আসার আমন্ত্রণও। হবে নাই বা কেন! প্রহর তো চায় সমস্ত সীমানা ভেঙে বাঙালির হয়ে উঠতে। বাংলার কথা বলতে। এই বন্ধুত্বের সাক্ষী থাকতেই জড়ো হলেন অনেকে। অংশ নিলেন। জিতে গেল আবহমান বাংলা ভাষাই…

More From Author See More