নোবেল করোনা ভাইরাসের উপদ্রব সারা পৃথিবী জুড়ে মহামারীর চেহারা নিয়েছে। তবে এই তো প্রথম নয়। এর আগেও এইচআইভি, ইবোলা, সার্স, মার্স, এইচ১এন১ এর মতো অসংখ্য ভাইরাসের উৎপাত নীরবে সহ্য করতে হয়েছে মানুষকে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে যে অসংখ্য প্রাণঘাতী ভাইরাস আছে, আমরা তার ভগ্নাংশেরও ছোঁয়া পাইনি এখনও। অর্থাৎ এখনও আমরা যথেষ্ট নিরাপদ আছি। কতটা নিরাপদ? সেই প্রশ্নের উত্তর এখন আর নতুন করে দেওয়ার নেই। নোবেল করোনা ভাইরাস সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে। ফলে আশঙ্কা তো তৈরি হচ্ছেই। সেইসঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে, তাহলে কোথায় আছে সেইসমস্ত ভাইরাস? তাদের আক্রমণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাচ্ছে কে?
আরও পড়ুন
তামাক পাতা থেকেই আবিষ্কার ‘ভাইরাস’ – ১৩০ বছর আগে দুই বিজ্ঞানীর কাণ্ডকারখানা
গবেষকদের দাবি, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে অন্তত কয়েক ট্রিলিয়ন প্রাণঘাতী ভাইরাস। যার বেশিরভাগটাই আছে সমুদ্রের জলে। চিকিৎসকরা এখনও অবধি হাজার দশেক ভাইরাস শনাক্ত করতে পেরেছেন। বাকি কয়েক কোটি ভাইরাস এখনও মানুষকে স্পর্শই করতে পারেনি। আর তার কারণ লুকিয়ে আছে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রেই। সমুদ্রের জলকে প্রতি মুহূর্তে পরিশোধন করে নিরাপদ করে রাখে সমুদ্রের প্রাণীরাই। আর এভাবেই রক্ষা পাচ্ছে মানুষ।
আরও পড়ুন
বরফ গলে বেরিয়ে আসছে প্রাচীন ভাইরাস, মিশছে পৃথিবীতে – দায়ী কারা?
কী সেই পরিশোধনের প্রক্রিয়া? কোন কোন প্রাণী অংশ নেয় তাতে? এই নিয়েই গবেষণা করেছেন রয়্যাল নেদারল্যান্ড ইনস্টিটিউট ফর সী রিসার্চের গবেষক জেনিফার ওয়েলস। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণার প্রি-প্রিন্ট কপি। সেখানে তিনি দেখাচ্ছেন, সমুদ্রের পরিবেশে সবচেয়ে অবহেলিত 'জীব' ভাইরাসরা। কারণ তাদের বেশিরভাগের হদিশ সহজে মেলে না। সমুদ্রের জলে থাকা কিছু প্রাণীই তাদের সরিয়ে ফেলে। এর মধ্যে আছে স্পঞ্জ, কাঁকড়া, ঝিনুক এবং ওয়েস্টার। এর মধ্যে স্পঞ্জের কার্যকারিতাই সবচেয়ে বেশি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমুদ্রের জলের ৯৪ শতাংশ ভাইরাস অপসারণ করতে পারে স্পঞ্জ। আর ২৪ ঘণ্টায় সেই পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ শতাংশ। পরীক্ষাগারে দেখা গিয়েছে তেমনটাই। এরপরেই আছে কাঁকড়া। ঝিনুক এবং ওয়েস্টার তুলনায় অনেক কম কার্যকরী হলেও, তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন
১৫,০০০ বছর ধরে জীবিত ভাইরাস, বরফের মধ্যে পাওয়া গেল হদিশ
মানুষকে বাঁচাতে কয়েক হাজার বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে এইসব প্রাণী। অথচ আমরা তাদের স্বীকৃতি দিইনি। বরং, আধুনিক মানুষের আগ্রাসনের মুখে পড়ে সংকটে তাদের অস্তিত্বও। বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বহু প্রজাতি। আর এভাবেই তো ক্রমাগত নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি আমরা।
আরও পড়ুন
স্ত্রী-র জীবন বাঁচিয়েছেন ডাক্তার-নার্সরা, প্ল্যাকার্ড হাতে ধন্যবাদজ্ঞাপন বৃদ্ধের
জেনিফার তাঁর গবেষণাপত্র ব্যাখ্যা করবেন আগামী সপ্তাহে। তবে কোনো প্রেক্ষাগৃহে দাঁড়িয়ে নয়। কারণ আরেকটি ভাইরাস; করোনা। অতএব বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটে ব্যাখ্যা করবেন তাঁর পরীক্ষার ফলাফল। এই একটি ভাইরাস যদি এমন বিপদ ডেকে আনতে পারে, তাহলে কয়েক ট্রিলিয়ন ভাইরাসের আক্রমণ তো কল্পনারও অতীত। তবুও কি সচেতন হচ্ছি আমরা? এবার বোধহয় সময় এসে গিয়েছে।