তারাভরা আকাশের নিচে, ‘ডার্ক স্কাই নেশন’ হওয়ার পথে নিউজিল্যান্ড

আকাশজুড়ে মিটিমিটি চেয়ে আছে অসংখ্য নক্ষত্র। রাতেরবেলায় এই অপার্থিব দৃশ্য দেখতে কার না ভাল্লাগে। তবে কলকাতা, দিল্লি কিংবা বেঙ্গালুরুর মতো শহরে শীতকাল তো বটেই, গ্রীষ্মেও ভালোভাবে নক্ষত্রদের চিহ্নিত করাই দায় হয়ে ওঠে খালি চোখে। তার একটা কারণ যেমন বায়ুদূষণ, তেমনই রাতভোর কৃত্রিম আলোক দৌরাত্ম্যও ক্রমশ দৃশ্যমানতার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে তারাদের। শুধু ভারতই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছবিটা একইরকম। এবার রাতের আকাশকে সংরক্ষণ করতেই তাই বিশেষ উদ্যোগ নিল নিউজিল্যান্ড (New Zealand)। লক্ষ্য, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ‘ডার্ক স্কাই নেশন’ হয়ে ওঠা।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই ‘ডার্ক স্কাই নেশন’(Dark Sky Nation) আদতে কী? ২০০১ সাল থেকে এই বিশেষ খেতাব প্রদান করা শুরু করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডার্ক-স্কাই অ্যাসোসিয়েশন। আদতে স্থান বিশেষে রাতের আকাশ কতটা আলোক-দূষণ বা ধোঁয়াশার শিকার, সেটা নির্ধারণ করারই দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। সঙ্গে বৈজ্ঞানিক, প্রাকৃতিক, পরিবেশগত, শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে রাতের আকাশকে সুরক্ষিত করাই লক্ষ্য এই সংস্থার। যে-সকল দেশ আলোক ও বায়ু দূষণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে এনে রাতের আকাশ সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষণ করতে সক্ষম, ‘ডার্ক-স্কাই নেশন’ হিসাবে সে-সব দেশকে স্বীকৃতি দেয় ইন্টারন্যাশনাল ডার্ক-স্কাই অ্যাসোসিয়েশন। 

মজার বিষয় হল, বিগত ২২ বছরে কেবল একটিমাত্র দেশই স্বাদ পেয়েছে এই খেতাবের। আর তা হল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র নিউয়ি। এবার ‘ডার্ক-স্কাই নেশন’-এর এই তালিকায় জায়গা করে নিতে বিশেষ উদ্যোগ নিল নিউয়ি-র প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডও। 

আসলে, শুধু প্রকৃতি-সংরক্ষণই নয়, নিউজিল্যান্ডের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে রাতের আকাশের। আজ থেকে হাজার বছর আগের কথা। নিউজিল্যান্ডের মাওরি উপজাতির মানুষদের জীবন সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল রাতের আকাশের ওপর। রাতের আকাশ দেখেই সময় নির্ণয় করতেন তাঁরা, ঋতু শনাক্ত করতেন চন্দ্র-দিনপঞ্জি দেখে। এমনকি তাঁদের মৎস্যশিকার কিংবা ফসল কাটার একাধিক ঐতিহ্যবাহী উৎসবের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে রাতের আকাশ। যে রীতিতে ছেদ পড়েনি আজও। পাশাপাশি রাতের আকাশকে পবিত্র বলে মনে করেন স্থানীয় মাওরিরা। 

রাতের আকাশ সংরক্ষণের জন্য তাই প্রথম সরব হয়েছিলেন তাঁরাই। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ম্যাসি ইউনিভার্সিটির মাতাওরাঙ্গা মাওরি অর্থাৎ মাওরি-বিদ্যার অধ্যাপক রঙ্গি মাতামুয়া। শেষ পর্যন্ত তাঁর এই আন্দোলনকে প্রশাসনিকভাবে স্বীকৃতি দিল নিউজিল্যান্ড সরকার। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই কিউয়িদের দেশজুড়ে শুরু হবে আকাশ-সংরক্ষণের কাজ। তাতে শুধু মাওরি সংস্কৃতিই নয়, বাঁচবে বাস্তুতন্ত্রও। 

আইডিএসএ-র রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে রয়েছে ১১৫টি ডার্ক-স্কাই উদ্যান এবং ১৬টি ডার্ক-স্কাই অভয়ারণ্য। নিউজিল্যান্ডের এই সাম্প্রতিক উদ্যোগ সফল হলে, সংখ্যাটা এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়বে বলে আশাবাদী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা… 

Powered by Froala Editor

More From Author See More