সুন্দরবনের বাঘসংখ্যা ছাপিয়েছে ধারণক্ষমতা : রিপোর্ট

সাম্প্রতিক সময়ে, একাধিকবার সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছে সুন্দরবনের নাম। আর তার নেপথ্যে রয়েছে রয়েছে লোকালয়ে ব্যাঘ্র অনুপ্রবেশ। শুধু ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসেই ঘটেছে ৮টি ব্যাঘ্র অনুপ্রবেশের ঘটনা। এবার সাম্প্রতিক সমীক্ষা ও গবেষণায় উঠে এল, সুন্দরবনে (Sundarbans) বাঘের (Tigers) সঙ্গে মানুষের ক্রমবর্ধমান এই সংঘাতের কারণ। ব্যাঘ্র ধারণের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে গেছে সুন্দরবন, এমনটাই জানাল সাম্প্রতিক রিপোর্ট।

ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং রাজ্য বনদপ্তর যৌথভাবে জড়িত ছিল এই গবেষণার সঙ্গে। সাধারণত, প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার অরণ্যে সংঘাতহীনভাবে থাকতে পারে সর্বাধিক ৩ প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ। সুন্দরবনের একাধিক ব্লকে বাঘের ঘনত্ব ছাড়িয়ে গেছে সেই সীমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাঘের সংখ্যা সেখানে ৩-এর বেশি। বাঘের এই ঘনত্ববৃদ্ধির কারণেই ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘাত। 

২০১৮ সালের ব্যাঘ্রশুমারি অনুযায়ী, ভারতের অন্তর্গত সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৮৮টি। ২০২০-২১ সালে যা গিয়ে পৌঁছায় ৯৬টিতে। বিগত ২০ বছরে এটাই সুন্দরবনে বসবাসকারী বাঘের সর্বোচ্চ পরিসংখ্যান। সুন্দরবন ডেলটার আয়তন সবমিলিয়ে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে কেবলমাত্র ৪০০০ বর্গকিলোমিটার অরণ্য রয়েছে ভারতের মধ্যে। বাকিটা বাংলাদেশে। সুন্দরবন অরণ্যের মধ্যে দুই দেশের সুস্পষ্ট বিগেদসীমা না থাকায়, অবাধেই এক অরণ্য থেকে অন্য অরণ্যে চলাচল করতে পারে বাঘ। ঊর্ধ্বমুখী প্রজনন হার ছাড়াও, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির আরও একটি অন্যতম কারণ এটি। অন্যদিকে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অরণ্যে যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। কমেছে ঘন অরণ্যের পরিমাণ। ফলে, স্পষ্টতই ভারতীয় অরণ্যে বাড়ছে বাঘের ঘনত্ব। এবং তুলনামূলকভাবে তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ নতুন বাসস্থানের সন্ধানে বার বার হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। 

পাশাপাশি লকডাউনে অরণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের। উপার্জনের নানা পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মৎস্য ও কাঁকড়া শিকারের দিকে ঝুঁকেছেন অসংখ্য মানুষ। কাজেই ব্যাঘ্র অনুপ্রবেশের সঙ্গে সমানতালে বেড়েছে মানুষের সঙ্গে বাঘের সংঘাত। শুধু বিগত দু’বছরে বাঘের শিকার হয়েছে ৩০ জন মানুষ। 

আরও পড়ুন
পৃথিবীর বর্তমান আকৃতির জন্য দায়ী প্রাগৈতিহাসিক বন্যা!

তবে কোনো অরণ্যের ব্যাঘ্র ধারণক্ষমতা বাঘের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছাড়াও নির্ভর করে আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর। যার মধ্যে রয়েছে শিকারের পরিমাণ, লিঙ্গ অনুপাত, মানুষের কার্যকলাপের মতো বিষয়। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান নিয়ে এই গবেষণা করতে হয়েছে বনকর্মীদের। ফলে বর্তমান পরিস্থিতির সুস্পষ্ট ছবি পেতে ২০২২ সালের ব্যাঘ্রসুমারির দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন গবেষকরা। আপাতত, লোকালয়ে প্রবেশ করা বাঘগুলিকে কম ব্যাঘ্র-ঘনত্বপূর্ণ অরণ্যে ছাড়ার উপদেশ দিয়েছেন ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার গবেষকরা…

আরও পড়ুন
যেচে ডেকে আনা হবে বন্যা! পরিকল্পনা পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ভাসমান নৌকাতেই চলছে পড়াশোনা, বন্যাবিধ্বস্ত বিহারে অভিনব পাঠশালা