ভূপৃষ্ঠে আবিষ্কৃত প্রাগৈতিহাসিক যুগের আঁকিবুঁকি, উচ্ছ্বসিত প্রত্নতাত্ত্বিকরা

সপ্তম আশ্চর্য ছাড়াও গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন মানব সভ্যতার বহু আশ্চর্য কীর্তি। যা আজও বিস্মিত করে আমাদের। এই তালিকার প্রথম সারিতেই জায়গা করে নেয় পেরুর ‘নাজকা লাইন’। যা মূলত জিওগ্লিফ। অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠে খনন করে কিংবা কোনো নির্মাণ তৈরি করে বিশেষ কোনো ছবি ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা। অবশ্য খালি চোখে সামনে থেকে এইসব চিত্রকর্ম বোঝার উপায় নেই কোনো। উঁচু টাওয়ার বা বিমান থেকেই প্রত্যক্ষ করতে হয় এইসব অতিমানবিক চিত্রকলাদের।

বিশ শতকের গোড়ার দিকেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের নজর কেড়েছিল ‘নাজকা লাইন’-খ্যাত (Nazca Lines) পেরুর (Peru) এই ঐতিহাসিক জিওগ্লিফস। ৪৫০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র জ্যামিতিক চিত্র, পশু-পাখি, এমনকি মানুষের ছবিও। এবার অত্যধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমীক্ষা চালানোর পর আরও দীর্ঘায়িত হল সেই তালিকা। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক নথি অনুযায়ী সেখানে আবিষ্কৃত হয়েছে ১৬৮টি নতুন নাজকা-নকশা। হ্যাঁ, প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে এ যেন লুকিয়ে থাকা এলডোরাডোর সন্ধান। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সবমিলিয়ে, ২২টি নতুন নকশা খুঁজে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই পরিসংখ্যান এবার এক লাফে বেড়ে দাঁড়াল ১৯০-এ।

অত্যাধুনিক ড্রোন, থার্মাল এবং হাইরেজোলিউশন ক্যামেরার মাধ্যমে চালানো হয়েছিল এই জরিপ। নেপথ্যে ছিলেন ইয়ামাগাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। পেরুভিয়ান বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এই অনুসন্ধানে হাত মিলিয়েছিলেন জাপানের প্রযুক্তিবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকরাও। সদ্য-আবিষ্কৃত জিওগ্লিফগুলির মধ্যে রয়েছে তিমি, সাপ, মানুষ এবং বিড়ালের প্রতিচ্ছবি। তাছাড়াও লামা, গুয়ানাকোস, আলপাকাসের মতো স্থানীয় ক্যামেলিডও রয়েছে এই তালিকায়। সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ছবিরই আকার গড়ে ২ থেকে ৬ মিটার দীর্ঘ। অর্থাৎ, নাজকার কিংবদন্তি জিওগ্লিফগুলির থেকে আয়তনে বহুগুণ ছোটো এই ছবিগুলি। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে এইসমস্ত জিওগ্লিফ ‘প্রকাণ্ড’ মনে হলেও, আকাশপথে বিমান বা হেলিকপ্টার থেকে তাদের চিহ্নিত করা বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় অনেকক্ষেত্রেই। আর সেই কারণেই এতদিন মানুষের নজরে আসেনি সেগুলি। অত্যাধুনিক ড্রোন ও হাইরেজোলিউশন ক্যামেরাই এই কাজ সহজ করে দিল এবার। 

গবেষকদের মতে, নাজকার জিওগ্লিফগুলির বয়স দুই থেকে আড়াই হাজার বছর। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই সেগুলি তৈরি করেছিল আদিম পেরুভিয়ান সভ্যতার মানুষেরা। আবার অনেকের অভিমত, এইসমস্ত ছবির স্রষ্টা আসলে এলিয়েনরা। সে যাই হোক না কেন, বিশ শতকের শেষের দিকেই এই ঐতিহাসিক অঞ্চলটিকে হেরিটেজ সাইটের তকমা দেয় ইউনেস্কো। এমনকি বিগত দু-দশকেরও বেশি সময় ধরে নাজকা জিওগ্লিফ সংক্রান্ত গবেষণায় বিনিয়োগ করে চলেছে আন্তর্জাইক সংস্থাটি। প্রস্তুত করছে ফটোগ্রাফিক ম্যাপ। ইউনেস্কোর এই প্রচেষ্টা যা বৃথা যায়নি, তা প্রমাণিত হল আরও একবার…

Powered by Froala Editor

More From Author See More