গর্ভাশয়ের কোশেই প্রাণ বাঁচল শিশুর, বিশ্বে এই প্রথম

ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে মানবশিশু ১০ মাস ১০ দিন ধরে লালিত হয় মাতৃগর্ভে। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে গর্ভাশয়ে। এবার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও, মায়ের গর্ভাশয়ের কোশই প্রাণ বাঁচাল মানবশিশুর। সম্প্রতি এমনই আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বিশ্বে প্রথমবার গর্ভাশয়ের স্টেম কোশ (Stem Cell) ব্যবহার করে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের নজির গড়েছেন ব্রিস্টল হার্ট ইনস্টিটিউটের সার্জেনরা। 

ফিনলি। বিরল এক কার্ডিয়াক (Cardiac) রোগে নিয়েই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল এই নবজাতক। হৃদযন্ত্রের বাঁ দিকের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ায় রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছিল তার। ফলে অস্ত্রোপচার করতে হয় চিকিৎসকদের। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয় সদ্যজাত শিশুটির। তাছাড়াও বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে হৃদপেশি শিথিল করার প্রচেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। তবে প্রথাগত কোনো চিকিৎসাই কাজ করছিল না ফিনলির হৃদযন্ত্রে। বলতে গেলে, যেন ভবিতব্য লেখা হয়ে গিয়েছিল আগেই। উপায়ান্ত না দেখে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চিকিৎসার পথেই হাঁটেন চিকিৎসকরা। সম্মতি ছিল ফিনলির বাবা-মায়েরও। মায়ের গর্ভাশয় বা আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে প্ল্যাসেন্টা থেকে স্টেম কোশ সংগ্রহ করে তা ইনজেকশনের মাধ্যমে সরাসরি প্রবেশ করানো হয় ফিনলির হৃদযন্ত্রে। 

তবে আদতে গর্ভাশয় বলতে আমরা যা বুঝি তা হল ইউটেরাস। গর্ভাবস্থায় এই ইউটেরাসের বিকাশের জন্যই দায়ী থাকে প্ল্যাসেন্টা নামের অঙ্গটি। প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমেই গর্ভাজাত সন্তানের শরীরের সরবরাহিত হয় পুষ্টি, খাদ্য ও অক্সিজেন। রিজেনারেশন বা উজ্জীবনী শক্তি সম্পন্ন এই প্ল্যাসেন্টার কোশকেই তাই চিকিৎসার জন্য বেছে নিয়েছিলেন ব্রিস্টল হার্ট ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ম্যাসিমো ক্যাপুটো। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই কোশ ইনজেক্ট করার পর থেকেই দ্রুত সারতে শুরু করে ফিনলির হৃদযন্ত্র। সকলকে অবাক করে দিয়েই, বর্তমানে দিব্যি বেঁচে রয়েছে সে। এমনকি অন্যান্য ওষুধেরও আর প্রয়োজন পড়ছে না তার। বার করে আনা হয়েছে ভেন্টিলেশন থেকেও। 

তবে গবেষকরা জানাচ্ছেন, স্টেম কোশের ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় অনেকক্ষেত্রে। এমনকি শিশুদের শরীরে এই কোশ ব্যবহার করলে, তাদের প্রাণ সংশয় হতে পারে বলেই এতদিন মনে করতেন গবেষকরা। তবে ফিনলির উদাহরণ খুলে দিল চিকিৎসাজগতের এক নতুন দিগন্ত। আগামীদিনে এই পদ্ধতি আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষকদের স্বীকৃতি পেলে, শিশুদের হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়বে না আর… 

Powered by Froala Editor