ভাষাহীনতার পথে

“Language is a courage: the ability to conceive a thought, to speak it, and by doing so to make it true.”- Salman Rushdie

জ্যঁ লুক গোদার (Jean-Luc Godard)

সংজ্ঞাঃ একজন ‘ফিল্মমেকার’; যাঁর যাত্রাপথ আমরা গুনতে থাকি ঢেউ দিয়ে

ভাষাঃ ছবি; অক্লান্ত মস্তিষ্কের বয়ান

আরও পড়ুন
বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো ফ্লপ ‘পাতালঘর’ : অর্জুন গৌরিসারিয়া

বিংশ শতাব্দীর শিল্পের বিবর্তনকে বিশ্বযুদ্ধের থেকে দূরত্ব দিয়ে মনে মনে মেপে ফেলা যায় তুলনামূলক কিছু চেনা দশকে। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে শেষ জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “…will unvanquished men retrace his path of conquest, surmounting all barriers, to win back his lost human heritage” – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন এই কথাটুকুকে রবীন্দ্রনাথের অমোঘ প্রয়োগের প্রেক্ষাপট থেকে ছাড়িয়ে এনে একটু অন্যখানে রাখছি। দেখছি, ইউরোপের শৈল্পিক চলচ্চিত্র নিজেকে গড়ে তুলছে পরবর্তী চল্লিশ বছর ধরে, আনছে ভাবনার স্বাধীনতা, আনছে নতুন প্রাণ, নিরীক্ষার সুযোগ ও সাহস। সিনেমার ইতিহাসে ‘সাহস’ শব্দটির সঙ্গে প্রায় সমার্থক হয়ে উঠবে যাঁদের নাম, তাঁদের মধ্যে ফরাসি নুভল ভাগের (new wave) জ্যঁ লুক গোদারের জাম্প কাটের প্রয়োগ ও আখ্যান ভাঙার মতন চমক (যদি ‘থির বিজুরি’ বলে ভাবি) উপহার দেওয়া কাজগুলির পরে কেটে গেছে অনেকগুলো দশক। সেই ১৯৬৫ সালে ‘পিয়র ল ফ্যু’ ছবিটির প্রকাশকালে ‘লে কাইয়ে দ্যু সিনেমাতে’ গোদার ব্যাখ্যা করেন রাশিয়ার চলচ্চিত্রে আইজেনস্টাইন ও জিগা ভেরতোভের নিয়ে আসা সিনেমা-অন্তঃস্থ স্বাধীনতার প্রতি তাঁর প্রশংসাসূচক সম্মানের কথা। আলোচনা করেন প্রশ্ন তোলার স্বাভাবিকতার কথা; দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিজেকে ও আমাদের পরিমণ্ডলকে যে স্বাভাবিক জিজ্ঞাসাগুলির মুখে দাঁড়াতে দেখি (যেগুলিকে আলাদা করে ‘ক্রিটিকাল’ সমস্যা বলে মনে হয় না) অথবা কোনো প্রশ্নবাচক সমস্যাকে স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা বলেই ভেবে থাকি, তেমন করেই সিনেমার বেলায় বা শিল্পের বেলায় ভাবার কথা।

আরও পড়ুন
বাংলা সিনেমার নবজাগরণ ও আবহমান ঋতু

গত শতাব্দীর শেষভাগে চলচ্চিত্রের মঞ্চে দেখা দিল গোদারের প্রায় দশ বছর ধরে বানানো “Histoire(s) du cinema” (History of Cinema/ইস্তোয়া দ্যু সিনেমা), যাকে এক কথায় বলা যায় তাঁর ম্যাগনাম ওপাস। Histoire শব্দের আক্ষরিক অর্থ ইতিহাস, যা পাঠ্যবইসুলভ বদ্ধতা বহন করে, অন্যদিকে Histoire(s) বহুবচনে শব্দার্থ হয়ে ওঠে খোলামেলা এক গাথা বা কথকতা। কাজেই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের নিয়মনিষ্ঠ কোনো একক রাগ পরিবেশনের মতন করে নয় বরং রাগমালিকার মতন করে গ্রন্থিত বিংশ শতাব্দীর এই ইতিহাস, যার দিকে আমরা দেখব History of cinema নামক এই ছবির কোলাজের মধ্য দিয়ে, আবার চলচ্চিত্র যার দিকে আমরা তাকাব তাঁর ইতিহাস-স্বরূপে। এখানে জ্যঁ লুক গোদার আর সেই চেনা চিত্রপরিচালক নন, বরং এক স্রষ্টা ও সম্পাদক, যিনি একই সঙ্গে এক অপ্রাতিষ্ঠানিক ‘ক্যামেরাওয়ালা’ (‘দ্য ম্যান উইথ দ্য মুভি ক্যামেরা’)। এই শেষ পর্যায়ে ১৯৮০-৯০ পরবর্তী-গোদার তাঁর ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন দুটি শতাব্দীর সীমান্তে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপে জীবনের প্রথম তিন দশক কাটিয়ে, ফরাসি তথা বিশ্ব সিনেমার নতুনতম বিপ্লবের ব্যূহসজ্জার তীক্ষ্ণ সূচীমুখ হয়ে, ১৯৬৮তে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লবের ঘূর্ণির ভেতর কাগজের টুকরো হয়ে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের আঁচ ছুঁয়ে যেন অনেক অনেক পথ পেরিয়ে আসছে তাঁর সিনেমা। কারণ ও অর্থ খোঁজার যে জালে আমরা শিল্পের দিকে তাকানোর আগেই জড়িয়ে পড়ি, সেই কার্য-কারণ-অর্থ সম্পর্ককে আপেক্ষিকভাবে পর্দায় ভেঙে দিয়েছেন গোদার এই দৃশ্যমান মহাকাব্য থেকেই, যা একাধারে আত্মচিন্তা, ইতিহাস চিন্তা ও চলচ্চিত্র চিন্তা। অথচ নুভল ভাগের সেই দুরন্ত যুবককে ‘আঁফাঁ তেরিবলে’ (enfant terrible) বলে ডাকতে ডাকতে বিবর্তনহীন, উদ্বায়ী মিডিয়া কি এইসময় প্রায় ভুলে যেতে বসেছিল, যে, সেই enfant আক্ষরিক অর্থেই এসে ছুঁয়েছে ষাটের প্রান্ত। তাই কি চল্লিশ বছর পরে যখন তাকে ধারণ করতে হয় ইতিহাসের দায়ভার তখন প্রায় কেউই তাঁর দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকে না? যারা তাঁকে শুধুমাত্র নিউ ওয়েভে সোনালি ঝলকের মতন ভালোবেসেছিল, ১৯৯৯-তে সত্যি কি আর তাদের মধ্যে সকলেই হাত কামড়ে অপেক্ষা করে ছিল যে, দেখি গোদার আট খণ্ডের ডকুমেন্টারিতে কি মহামূল্যরত্ন গুছিয়ে তুলছেন! নাকি স্রোতের মুখ ঘুরে গেছে এতদিনে আর অনেকের চোখেই গোদার হয়ে গেছেন সেই পুরোনো কলেজ-ক্যাসানোভা! অথচ যে তিনটি ঢেউতে তাঁর কাজকে সাধারণত ভাগ করা হয়, তাঁর মধ্যে লক্ষ করব, গোদারের সিনেমার ভাষা, চিত্রগ্রহণ, এবং সম্পাদনা কখনোই অতীত বা মিউজিয়াম-পিস হয়ে থাকেনি। একদিকে শুরু থেকে একের পর এক ৩৫মিমি, হ্যান্ডহেল্ড, টেলিভিশন-ভিত্তিক আস্পেক্ট রেশিও নির্বাচন, ভিডিও ক্যামেরা, হাই-ডেফিনিশন ভিডিওগ্রাফি, গৃহীত স্থিরচিত্রের বৌদ্ধিক সুপারিম্পোজিশন থেকে শেষে এসে বাহুল্যবিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত থ্রি-ডি এবং অন্যদিকে ভাষা ও ভাষাহীনতা, বারবার ভেঙে ফেলা আখ্যান বা ন্যারেটিভের প্রায় সম্পূর্ণ অবলুপ্তি এবং শেষে হঠাৎ পুরোনো ন্যারেটিভের দিকে খুব সচেতন ফিরে দেখা— এই প্রতিটি মাধ্যম ও ভঙ্গিকে প্রায় ‘পারমুটেশন-কম্বিনেশনে’ হাতের তালুতে এনে ছেনে দেখছেন গোদার গত ষাট বছরে। সাহিত্যের ক্ষেত্র ছাড়া, চলচ্চিত্রের মতন অর্থনির্ভর শিল্পমাধ্যমে ষাট বছর ধরে এমন নিরন্তর ভাঙাগড়া প্রায় দুর্লভ।

আরও পড়ুন
‘নগ্নতা দৃশ্যে নয়, তোমার মনে’— গোদার্দকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি অ্যানা

তাহলে গোদারের পুরোনো দর্শকের পাশাপাশি নতুন দর্শক হবে কারা? এই নতুন দর্শকগোষ্ঠীকে (অর্থাৎ আমাদের প্রজন্মকে) কিছুটা সংজ্ঞায়িত না করলে, আমার এই লেখার গতিমুখ নির্ধারণ করা কঠিন হবে। একটু তাকাতে হবে ‘আমাদের’ দিকে, অর্থাৎ উদার-অর্থনীতির যুগে জন্মানোর, বামপন্থার স্বপ্নভঙ্গের পরের এই প্রজন্মের দিকে, যারা সেই সময়ে সবে কোল থেকে নেমে হামাগুড়ি দিচ্ছি বা সদ্য হাঁটিহাঁটি করছি। যারা দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বই থেকে শিখছি না বরং বস্তুতান্ত্রিকতাকে প্রায়-স্বাভাবিক বলে জানছি, যে প্রজন্মের কেউ কেউ নাকি উনিশ বছর বয়সে এসে রাহুল গান্ধীকে ভোট দেওয়ার কথা বলছে কারণ ‘ওকে দেখতে ভালো লাগে’। আমরা দেখছি বিলক্ষণ ঘেঁটে যাওয়া একটা স্পেস, যা আমাদের জন্য তৈরি করেছে আগের প্রজন্ম— যেখানে ফাঁকা আশাবাদ আছে, সেলফ লাভের আশ্বাস ও অনুশীলন আছে, অসংখ্য আত্মহত্যা আছে আর আছে অপ্রেম। ১৯৭৬-এই ‘Six fois deux’তে (Six times two) দেখছি গোদারের চলচ্চিত্রে এখন আর কোনো কৃত্রিম ভাবভালোবাসা পড়ে নেই, বরং কোত্থেকে এসে ঢুকেছে চারজনের সংসার! কলোসাল প্যারিসের মানচিত্র আর উন্নাসিক পথঘাট ছেড়ে গোদার এসে ঢুকছেন খুপরিতে, যেখানে ক্ষিদে-তেষ্টা আর সঙ্গমের কোনো আড়াল নেই, বাস্তবিক এবং মনস্ত্বাত্তিক কোনোটাই। সময় আমাদের এক হাতে ধরিয়ে দিয়েছে ‘ইম্পস্টার সিন্ড্রোম’ আর অন্য হাতে ‘ডানিং-ক্রুগার’।  সেই যে কবে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘দুই হাতে কালের মন্দিরা যে সদাই বাজে’— তাকে ফুলে-কাঁটায় আমরা আর বাজাতে পারছি না, বাজাতে পারছে না আমাদের কাল। যে ‘সুপ্তি ছুটে’ গিয়ে নৃত্য ওঠে, এই গত চল্লিশ বছরে রবীন্দ্রনাথ কি জানতে পারলেন, কী অগভীর ঘুমে জাগতে জাগতে আমাদের ঘুমের ওষুধগুলোর প্রেস্ক্রিপশন বেড়ে চলেছে! ‘নিত্যনূতন সংঘাতের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের যে নেচে ওঠার কথা ছিল, সে সংঘাতে আমরা কি আগেই আছড়ে পড়েছি! ঠিক এই জায়গা থেকেই আমাদের একবার তাকাতে হবে ‘অদিউ অ লঙ্গেজ’ Goodbye to Language (২০১৪)এ দেখানো দুটি (‘অথবা আয়নাসহ চারটি’) মানুষের মধ্যেকার সম্পর্কের দিকে। 

একান্ত চেনা গোদারিয় ছন্দে শুরু হলেও, রিকন্সট্রাকশন শব্দটা যে আক্ষরিক মানে বয়ে আনে, তার এক অবিসংবাদী প্রয়োগ ঘটে এই সিনেমার অন্যতম একটি শটে। সিনেম্যাটোগ্রাফার Fabrice Aragnoর উদ্ভাবনে বাঁ চোখে দেখা যায় একই দৃশ্যের একটি বিষয় বা চরিত্র ও ডান চোখে দেখা যায় অন্য চরিত্রটি— যাকে অনেকেই মনে করেছেন বর্ষসেরা শট বলে। এই দশকে স্রেফ বহিরঙ্গের সৌন্দর্যপন্থী থ্রি-ডির প্রয়োগের সামনে দাঁড়িয়ে একে প্রায় এক পথ-নির্দেশক বলা চলে এর সম্পূর্ণ নিরাভরণ ও বহুমাত্রিক মনস্ত্বাত্তিক প্রয়োগের কারণেও। ইভিচ নামক মহিলাটি বসে আছেন পার্কের বেঞ্চে, সঙ্গে ডেভিডসন, যিনি বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছেন। এইসময় হঠাৎ ত্রিমাত্রিক প্রয়োগে শটে ঢুকে পড়ছেন ইভিচের স্বামী । এখানেই শটটি তৃতীয় মাত্রায় দুভাবে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আমি উদ্ধৃত করছি The Dissolve ম্যাগাজিন থেকে: “Seen in 3-D, each image is relegated to an eye: Ivitch on the right, Davidson on the left, leaving viewers to “cut” between them by keeping one eye closed and the other open. It is montage taken to its logical extreme: in-eye editing.”

আমরা মনে রাখব, গোদারের ক্ষেত্রে তাঁর নির্মাণের সচেতন ছেনি-হাতুড়িগুলিও তাঁর দর্শনের অঙ্গ, কারণ তিনি ক্যামেরা ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেছেন বয়ান প্রতিষ্ঠার কাজে। কাজেই ‘আমাদের’ গোদারকে দেখার দৃষ্টি আবার পালটে সাজিয়ে নিতে হয় এবং বিশ্ব-ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয় ঠিক এমনই এক ট্রুবাদুরের (troubadour) লেন্সের ভিতর দিয়ে। এখানে ‘নো পাসারান’ মনে পড়বে অতিকাব্যিকভাবে; যেন ১৯৯৮তে দাঁড়িয়ে পূর্ব শতাব্দীর ইতিহাসকে তিনি বাধ্য করছেন তাঁর ক্যামেরার মধ্যে দিয়েই পরবর্তী শতাব্দীতে প্রবেশ করতে, যেমন মনে রাখতে হবে history of cinema-র এই চূড়ান্ত ব্রেখটিয় উচ্চারণ ‘Be a poet in time of distress’। 

আমরা যখন জন্ম নিচ্ছি ১৯৯০এর দিকে, গোদার তাঁর ফরাসি নিউ ওয়েভ থেকে প্রায় তিরিশ বছরের দূরত্বে দাঁড়িয়ে একাধিক নবীনতর মাধ্যমকে তুলে নিচ্ছেন হাতে। অথচ ’৭০-এর পর থেকে স্বাভাবিক প্রচার যখন বলে ‘সেই গোদার’ শেষ অর্থাৎ পুরোনো ঢেউয়ের চূড়া থেকে তিনি নেমে এসেছেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, এই মুহূর্তের দর্শক, এই প্রজন্ম তখনও কল্পনায় আসেনি, মাটিতে তো নয়ই। এখন নিরাপদ দূরত্ব থেকে ‘আমরা’ দেখছি, বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে, ফর্ম ভাঙা ব্যাকরণ আর তাৎক্ষণিক চমক লাগিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া বিশ্ববন্দিত (অথবা নিন্দিত) গোদার কিভাবে ফিরে যাচ্ছেন ইতিহাসের কাছে। তবে কি তিনি মহাকালের চাকার আওয়াজের খুব কাছে মাথা রেখে কান পাততে চাইছেন? 

আমাদের মনে রাখতে হবে গোদারের বয়সের অর্থাৎ জীবিত থাকার অমূল্য সুবিধার কথা, যে তিনি শুধু ১৯৬৮র মে মাস দেখেছেন তা নয়, অর্ধশতাব্দী ধরে দেখেছেন মৌলবাদের ও ধনতন্ত্রের উত্থান এবং বহু পরে এসে দেখছেন আরব-বসন্তও, যা ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল এক তিউনিসীয় ফলবিক্রেতার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। আমরা জানি Le Livre d'image (The Image Book) মুক্তি পাচ্ছে এরও আট বছর পর ২০১৮তে, যেখানে দেখানো হবে ‘আইসিস’-এর হাতে হত্যার দৃশ্য, সুপার-ইম্পোজিশনে, নদীতে বয়ে যাওয়া লাশের রক্ত, রং। কাজেই, তাঁর নির্মাণের দিকে তাকালে চলচ্চিত্রের অন্তর্নিহিত ভাবের বা আখ্যানের ভাঙনের কথা যেমন ভুলে গেলে চলবে না, তেমনই ভুললে চলবে না বিশ্ব-রাজনীতি, মধ্যপ্রাচ্যের  সংঘাত। ভুলে গেলে চলবে না তাঁর একাধিক স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব ও সেই বিপ্লবের সমাপ্তির সাক্ষী থাকা এবং মাথায় রাখা এই ধরনের বিপ্লবগুলির দশকব্যাপী উত্তরদায়িত্বও। মনে রাখতে হবে, ফিল্মের ভাষাতে ও ভাবনায় ক্লাসিকালি-গোদারিয়ান সবকিছুকেই গোদারকে নিজেকেও অতিক্রম করতে হয়েছে এতদিনে। 

আসলে গোদারের নব্বই বছরের জীবনের মাত্র সেই কবেকার পুরোনো দশটি বছর, তাঁর জাম্পকাট, তাঁর ১৯৬৩-৬৭র চলচ্চিত্রের আখ্যান ভাঙার খেলা, সেসব কিছুই কি আমরা আর তেমন করে নতুন প্রডাক্টের মতন স্পর্শ করেছি? সম্ভবত না, কারণ সেইসমস্ত কারিকুরি পটু ও অপটু হাতে এতদিনে চলে এসেছে দৈনন্দিনের কোঠায়, বাংলা টিভি অথবা এইচবিও-তে চলার মতন ছবিতেও। আমরা এমন এক যুগ, যাদের কাছে প্রায় কিছুই মহৎ নয় আর। তাই ২০১৮তে যখন তিনি ‘দ্য ইমেজ বুক’ বানান, তখন  দেখি কিছুক্ষণ পরে অর্ধেকেরও বেশি নন্দনের উৎসবমুখর দর্শক হল ছেড়ে বেরিয়ে যান আর বাকি পড়ে থাকা জনেরা হতবাক চেয়ে থাকেন এবং তাদের মধ্যে এমন মানুষদের চিনি যাঁরা একসঙ্গে ট্যাক্সি ভাড়া করে আবার সেই নজরুলতীর্থে যাবেন আরেকটিবার বড়ো পর্দায় দেখতে। কিন্তু এখানে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসা সবচেয়ে জরুরি যে এই হতবাক কি শুধুই ‘ডাম্ব-স্ট্রাক’? আর আরো ভয়ের কথা যদি বেখেয়ালে তা কেবল স্টার-স্ট্রাক হয়! গোদার দেখতে গিয়ে যে বিষয়ে সবচেয়ে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করেছি তা হল এই যে, যেন শুধু নামের কারণে সম্মান না করে ফেলি। আসলে যেটা হয় তা হল, যেহেতু গোদারের বেলায় সত্যিই ‘মাধ্যমই বার্তা’, (“the medium is the message” Marshall McLuhan)। একবার ওই সিনেমার হলের সিটে বসলে তিনিই আমাদের চালাবেন। আবার এর উল্টোটাও, ২০১০-পরবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে গোদারের সিনেমার বেলাতেই সত্যি, যে ওই সিনেমা হলের ওই সিটে বসেই আমার স্বাধীনতা আছে নিজের মতন করে ছবিটা বুঝে নেওয়ার। যে সিনেমা শুরুতেই সাবধান‘বাণী’ দেয়— “It remains to be seen if non-thought contaminates thought.”। এখন এই শুরুর কথাটা কি একপ্রকার ‘ইন্টেলেকচুয়াল গেটকিপিং’ নাকি সেই পুরোনো খেলা, যাকে আমাদের ভাষায় বলতে ইচ্ছা করে ‘পাগলে পাগলে খেলা’! আমাদের বাংলায় একটা শব্দ চালু আছে, অভাবনার ভাবনা। ১৯৬৫তে বলা তাঁর এই পুরোনো কথাটাকে আমরা মেলাতে চেষ্টা করব এই নন-থটের সঙ্গে— “Posing problems is not a critical attitude but a natural function. When a motorist deals with traffic problems, one simply says he is driving; and Picasso paints.”। আমাদের মনে পড়বে জীবনানন্দের ‘বোধ’ কবিতার কথা—

সব চিন্তা – প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়
শূন্য মনে হয়

তবু যদি জোর করে ধরে নিই যে এই নন-থট কথাটা স্রেফ একটা ধাক্কা দেওয়া শব্দ হিসেবেই বসানো, তাহলেও তো এই বাক্যে এই শব্দটার অবস্থান খাটো হয়ে যায় না। যুক্তিপূর্ণ শব্দ ব্যবহারের যে পরিকল্পের মধ্যে আমাদের ভাষা বেড়ে উঠেছে, সম্ভবত গোদার এখানে সেই গোড়াটায় আঘাত করেছেন goodbye to language। উল্টোদিকে এ এক নিমন্ত্রণপত্র, বিচ্ছিন্ন চিত্র ও শব্দের একঘণ্টার এক যাত্রায়, যেখানে কোনো দৃশ্য আমাকে কতটা ভাবাবে বা আদৌ ভাবাবে কিনা, আমার চিন্তাপদ্ধতি সংক্রামিত অথবা আক্রান্ত হবে কিনা, তা দর্শক হিসেবে নেহাতই আমার সচেতন সিদ্ধান্ত। 

Adieu au Langage সিনেমার নামের ‘Adieu’ (বিদায়) মাথায় রেখে এই ‘Ah Dieux’ (আহ ঈশ্বর) নিশ্চয়ই এক অবশ্যম্ভাবী ‘pun intended’; কিন্তু সেই সঙ্গে কি মনে পড়তে পারে— গীয়ম অ্যাপোলিনেয়রের এর লেখা L’Adieu du Cavalier কবিতাটির— “Ah Dieu ! que la guerre est jolie” এবং তার পরের স্তবকে “Adieu! voici le boute-selle”। আবার দর্শকের সহজ-স্বাধীনতায় আমি OH অক্ষর দুটিকে একেবারে অন্যভাবে খুঁজে পাচ্ছি সিনেমা দেখার সময়। OH অর্থাৎ other half, বিশেষত যেখানে এই সিনেমা প্রদক্ষিণ করে যোগাযোগের ভাষা হারিয়ে ফেলা এক দম্পতির মধ্যেকার শূন্যতাকে। ম্যাকমিলান ডিকশনারি বলছে, OH “conveniently circumvents reference to gender or marital status…is a neat way to preserve the anonymity of said person…it also frequently appears with no determiner at all”। এখানে আমি ধরে নিচ্ছি, সময়-সচেতন গোদার, আইফোনের মতই আধুনিক জার্গন ও আর্বান ডিকশনারির সঙ্গেও নিজেকে কিছুটা অভ্যস্ত করে নিয়েছেন। যদি তা নাও হয়, তবু আমার ধারণা, ভাষার দিক থেকে ভাবলে, কোনো সহাবস্থানের বা দাম্পত্যের অন্য অংশটিকে বোঝাতে OH-এর ব্যবহার একাধিক নির্ণায়ক তথ্য লুকিয়ে ফেলতে সক্ষম, ঠিক যেমন OH অক্ষর দুটি পিছনের langage শব্দটিকে ঢেকে আছে।

‘Goodbye to Language’ এর থ্রি-ডি শটের নির্মাতা আমাদের অধিকার দিয়েছেন ইন-আই এডিটিংয়ের। তিনিই আমাদের আরো এক ধাপ এগিয়ে ‘দ্য ইমেজ বুকে’ আমাদের অধিকার দিচ্ছেন একথা বলার যে, ‘তোমার এই চিত্র, শব্দ ও চিত্রকল্পের স্তুপ ঘেঁটে আমি আমার মাথার ভিতর এই বানিয়ে নিয়ে বাড়ি গেলাম’ এবং আক্ষরিক অর্থেই সেই নির্মাণের ওপর তাঁরও কোনো হাত নেই। তাঁর এই মেকিং ও এডিট আবার সেই ‘হিস্টোরি অফ সিনেমা’র মতন, কিন্তু প্রেক্ষাপট আলাদা এবং সম্ভবত রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি গভীর। আসলে হয়তো এখানে গোদারের ‘কমিনিউকেশনই সিস্টেম’ই আমাদের বোঝার একমাত্র রাস্তা, কারণ আমরা চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারি ‘ডাম্বিং-ডাউন’ ইজ ফান্ডামেন্টালি এগেইন্সট গোদার এবং বছরের পর বছর পেরিয়ে এসে তিনি তাঁর দর্শকের অবমূল্যায়ন করবেন না, অবচেতনায়ন করবেন না। আমরা গোদারকে পেলাম একটু বড়ো হয়ে, যখন তিনি টেলিভিশনের ফরম্যাটে কাজ শেষ করে আবার বড়ো পর্দায় ভাষান্তরে যাচ্ছেন, যখন তাঁর কাজকর্মের ওপর থেকে মিডিয়ার ফোকাস সরে গেছে প্রায়। আমরা পেলাম যখন স্মার্টফোন এসেছে হাতে হাতে। কাজেই ১৯৬০ এবং ১৯৮০-র দশকের দেখা আমাদের দেখার থেকে হয়তো ততখানিই দূরত্বে দাঁড়িয়ে, যতটা দূরত্বে থাকতে পারে পাড়ায় একটি টিভি থাকার থেকে হাতে হাতে অ্যান্ড্রয়েড। এইধরনের দূরত্বে দাঁড়িয়ে এই দুই দশকব্যাপী ইতিহাসের পাঠ, ‘histoire(s) du cinema’, যার মূল সূচনা মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৮ সালের এক বক্তৃতামালা। প্রত্যেকটি বক্তৃতার আগে গোদারের নিজের একটি ছবি ও প্রথম দুটি বক্তৃতার আগে অন্য আরেকজন পরিচালকের ছবি দেখানোর আয়োজন ছিল। যেহেতু ছবি ও বক্তব্য একত্রে পাশাপাশি চলার মতন প্রযুক্তি সেইসময় ছিল না, যা আজকের দিনে স্বাভাবিক ‘প্রেজেন্টেশন’ ভঙ্গি, তাই তাকে চিত্র ও কথার এই দূরত্ব মেনেই এই লেকচার সিরিজ চালাতে হয়েছিল। তিনি নিজেই বলেছেন— “you can’t answer in words. You could answer with – if the words came after an image and then again before another image” । কুড়ি বছর পর যখন তিনি ডকুমেন্টারিরূপে এই কাজগুলি সাজালেন, তখন তাকে আমাদের মনে পড়বে শুরুতেই আমরা তাকে বলতে শুনেছিলাম “…what I was seeking in my history of cinema was to be less alone” (অনুবাদ ও সম্পাদনা টিমোথি বার্নার্ড)। এই একান্ত অথচ সর্বজনীন আর্তি থেকেই এই সিরিজের আশ্চর্য উন্মোচন। আমরা তাঁর হাত ধরে ইতিহাসের একেকটা অংশে ঢুকছি একেকটি কালচক্র পার হয়ে, যেখানে সেই অসংখ্য চলচ্চিত্রের যাত্রাধ্বনি শোনা যায়, আর সমস্ত ‘সিনেমাওয়ালা’ বা দর্শক বা সমাজ সিনেমার মধ্যে হয়ে উঠতে পারে সেই রাবীন্দ্রিক প্রফেসির মতন ‘unvanquished men retrace his path of conquest, surmounting all barriers’। 

আট খণ্ডের এই মহাকাব্যের একেবারে শেষে এসে তিনি বললেন— If a man walked through paradise in dreams, "and received a flower as a sign of his visit," (quoting Borges, who was quoting Coleridge) "and found the flower in his hand when he woke up, what can we say? I was this man."। আমরা দেখব এই কথাগুলির আগেই পর্দায় ভেসে আসে তিনটি শব্দ,"Usine de Rêve” মানে স্বপ্নের কারখানা। আমাদের মনে পড়বে, নুভেল ভাগ ফরাসি সিনেমা কীভাবে usine বা ফ্যাক্টরি শব্দটিকে সরাসরি ক্যাপিটালিজমের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে বারবার। মনে পড়বে রেনের সেই ১৯৫৮র শর্ট ডকুমেন্টারি Le Chant du Styrène (প্লাস্টিকের গান) যেখানে ক্ষয়হীন প্লাস্টিকের কারখানাকে রেনে ব্যবহার করেছেন কাব্যের অলৌকিকের মতন। মনে পড়বে ‘Numéro deux’-তে (নুমেরো দু/Number Two) এবং পরেও ‘অদিউ অ লাঙ্গেজে’ usine শব্দের একাধিক ব্যবহার এবং কারখানার ছবির ব্যবহার প্রায় লেইটমোটিফের মতন।

আসলে গোদারের ‘হিস্ট্রি অফ সিনেমা’ এবং শেষের দিকে চার-পাঁচটি ছবিতে, প্লেটোর রিপাব্লিকের সেই গুহার মতন করেই, গোদার তুলছেন তার একান্ত নিজস্ব এক জনসমাজ, যে সমাজ আসলে সিনেমা, এবং সেই সমাজের ইতিহাস। একেবারে শুরু থেকেই দর্শককে দিচ্ছেন সহযাত্রীর সম্মান, সেরেব্রাল সম্মান। সেই সঙ্গে প্রশ্ন করছেন ঘটমান বাস্তবকে, প্রশ্ন করছেন ফোটোগ্রাফির সত্য ও নৈতিকতাকে, যা হয়তো প্রকারান্তরে মিডিয়ার সততার বিরুদ্ধেই প্রশ্ন। দ্বিতীয় ভাগে ‘কালার’ অংশে ফোটোগ্রাফির আবিষ্কারের সাদা-কালো ইতিহাস থেকে রঙের ব্যবহারে আসার কথা বলতে গিয়ে ফুলের তোড়ার রং দিয়ে যাচাই করছেন আমাদের উৎসব ও শেষকৃত্যের চেনা দ্যোতনাকেও। প্রত্যেকটি নির্মাণের মধ্যে দিয়ে প্রশ্ন করছেন সমকালীন চেনা আবহকে, অভ্যস্ত দৈনন্দিনকে, অতীত ও ভবিষ্যতকে, রিয়ালিজম সহ ‘ট্রোপ থিওরিকে’ও, নিজেরই কিছু চেনা ট্রোপ আলাদা আলাদা দ্যোতনায় ব্যবহার করে।

‘অদিউ আ লঙ্গেজের’ শেষ মিনিটে এই লাল ফুলদুটির হাওয়ার দোলায় কাছে আসা, একে অপরের দিকে হেলে পড়া আমাদের মনে করাতে পারে ‘অসাহসী’ বলিউড-টলিউডের ফুলে ঢাকা মুখচুম্বন। সেই সঙ্গে আমাদের মনে পড়বে ফুল তো আসলে গাছেদের যৌনাঙ্গ, আর ঠিক এভাবে অজ্ঞাতেই দুটি ‘জীব’ একে অন্যের কাছে এসে পড়তে পারে, দূরে সরে যেতে পারে, আবার কাছে আসতে পারে। এই ফুলের দোলা দেখতে না দেখতেই আবহে বেজে উঠবে একে অপরের সঙ্গে মিশে যাওয়া বিড়ালের গোঙানির মতন বাচ্চার কান্না আর কুকুরের দীর্ঘ ডাক। আমরা ইমেজের ফ্রিজশটে সিনেমা শেষ হওয়ার দুনিয়াকাঁপানো দুটি উদাহরণ দেখেছি ত্রুফোর ‘ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ’ (Les quatre cents coups) আর সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’তে, আর এখানে দেখব/শুনব ‘ফ্রিজ-সাউন্ড’। ঠিক যে মুহূর্তে আমাদের কান ওই কুকুর ও শিশুর একত্রিত হাউলিংয়ে ধাতস্থ হয়ে আসছে, সাধারণ ঘরোয়া আওয়াজগুলিতে মন শান্ত হয়ে আসছে এক ঘণ্টার ‘কষ্টকর’ চাপানউতোরের পর, সেই মুহূর্তেই নেমে আসছে আচমকা সম্পূর্ণ শব্দহীনতা এবং আমাদের আবার অস্বস্তিতে ফিরে যাওয়া। এখানে যেন ‘ওমেনে’র সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে— যেখানে বাচ্চার কান্না বা কুকুরের টানা সুরের কান্নাকে অমঙ্গলময় মনে হওয়ার কথা ছিল এবং কান্না থেমে গেলে স্বস্তির আসার কথা ছিল, সেখানে বরং বাচ্চা ও পোষ্যটির সঙ্গে কাটানো এক উচ্ছ্বল সময়ের আভাস শুনিয়েই হঠাৎ দুটি শব্দের একত্রে অস্বাভাবিক থেমে যাওয়া তৈরি করছে আবহ(হীনতা)। এবার এইধরনের নৈঃশব্দ্যে শান্তি খুঁজব না বিপদের আশঙ্কা, সেটা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাও হয়তো আমাদের হাতেই দিতে চেয়েছেন গোদার।

শেষের দিকের সিনেমায় গোদার গুছিয়ে রেখে গেছেন অকাব্যিক কাব্য, অপ্রেমের সঙ্গম, অনুচ্চারিত ভালোবাসা ও ঘৃণার আগুনগুলি— যা যা রেখে যাওয়া যায় আমাদের মতন পরবর্তী ও তৎপরবর্তীদের জন্য। তাই ‘আমাদের গোদার’ এক অন্য সিসিফাস, যাঁর পাথর পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে না, বরং সে পাথর তিনি নিজেই গড়িয়ে আনেন নিজের দিকে বারবার। 

আমরা ফিরে যাব Germany Year 90 Nine Zero (১৯৯১) ছবির এই দৃশ্যটির কাছে, যেখানে নিজের সৃষ্টির বিশ্বাস, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের দিকে অসম্মানভরা ফুলের গোছা ছুঁড়ে দেওয়া যায় আর দেখব, নিজেরই বিশ্বাসের ওপর একাধিকবার গাড়ির চাকা চালিয়ে দেওয়ার মতন সিনেম্যাটিক ভাঙন, গোদার তাঁর একানব্বই বছরের জীবনে, ষাট বছরের নির্মাণের জীবনে যেচে ডেকে আনছেন বারবার, বারবার। আর একেবারে শেষে কিছু (অ)প্রয়োজনীয় ‘existentially absurd’ প্রশ্ন রেখে চলে যাচ্ছেন— কেন একানব্বই, কেন বিরানব্বই নয়? কেন ২০২২এর ৩রা ডিসেম্বর নয়? কেন ১৩ই সেপ্টেম্বর, এই জাম্প কাট? আর সব শেষে, আজকে তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যুর লগ্নে আমরা ভুলে যাব না, ‘দর্শন’ মানে ‘দেখা’।

(লেখক কলকাতার নাগরিক, চলচ্চিত্রপ্রেমী, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণারত)

Powered by Froala Editor