দেশের জল পরিশোধন কেন্দ্রগুলির ৭৫ শতাংশই ছাড়পত্রহীন!

পরিবেশ দূষণের দোসর হয়ে এসেছে পানীয় জলের সংকট। আর সেই সংকট মেটাতেই ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে অসংখ্য মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্ট। আজকাল রাস্তাঘাটে জল খেতে চাইলে বোতলবন্দি মিনারেল ওয়াটারকেই নিরাপদ মনে করেন অনেকে। কিন্তু সত্যিই কি জলসংকট মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে এই প্ল্যান্টগুলি? নাকি অপরিকল্পিতভাবে জল উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর আরও বেশি নিচে নেমে যাচ্ছে? সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যাগ অডিট (Cag Audit Report) রিপোর্টে উঠে এসেছে এই সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দেশের জল পরিশোধন কেন্দ্রগুলির ৭৮ শতাংশের কাছেই নেই গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের ছাড়পত্র (NoC)।

যে কোনো প্যাকেটজাত খাদ্য বা পানীয় কিনতে গেলে আমরা প্রথমেই দেখে নিই প্যাকেটের গায়ে এফএসএসআই-এর চিহ্ন রয়েছে কিনা। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় এই সার্টিফিকেট। এর অর্থ, সেই খাদ্য বা পানীয়টি আমাদের শরীরের তেমন ক্ষতি করবে না। কিন্তু প্রকৃতির কতটা ক্ষতি করবে, তা ভেবে দেখি না আমরা। ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডের নথি অনুযায়ী এই মুহূর্তে সারা দেশে ৩১৮৯টি জল পরিশোধন কেন্দ্র রয়েছে। আর এর মধ্যে ২৪৭৫টি কেন্দ্রের কাছেই গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের ছাড়পত্র নেই বলে জানিয়েছে ক্যাগ রিপোর্ট। অর্থাৎ এই কেন্দ্রগুলি সারা বছরে কত জল তুলবে, এবং এর ফলে সেই অঞ্চলের জলের ভাণ্ডারে কতটা টান পড়তে পারে, তার কোনো তথ্য নেই।

ক্যাগ রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই মুহূর্তে সমস্ত সরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড বিশেষভাবে অবহেলিত একটি সংস্থা। সব মিলিয়ে সংস্থায় ৩৭ শতাংশ শূন্যপদ রয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে যে পরিমাণ লোকবল দরকার, তাও নেই সংস্থাটির। এদিকে গত ১০ বছরে ভূগর্ভস্থ জলস্তরে টান পড়েছে যথেষ্ট। সারা দেশের নদীগুলি থেকে ভূগর্ভে যে পরিমাণ জল পৌঁছায়, তার ৬৩ শতাংশই তুলে নেওয়া হয় প্রতি বছর। কোনো কোনো রাজ্যে আবার পরিমাণটা ১০০ শতাংশেরও বেশি। ফলে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভূগর্ভস্থ জলের সঞ্চয় শেষ হয়ে যাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা।

অবশ্য গতবছরই ইন্ডিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের ছাড়পত্র না পেলে নতুন করে কোনো প্ল্যান্টকে সার্টিফিকেট দেবে না এফএসএসআই। কিন্তু ইতিমধ্যে যে বিপুল সংক্ষক প্ল্যান্ট কাজ শুরু করে দিয়েছে, তাদের নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানেন না কেউই।

আরও পড়ুন
ভয়াবহ দূষণের শিকার গঙ্গার দক্ষিণ প্রবাহ, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্লাস্টিক দূষণ রোধ থেকে বৃক্ষরোপণ— হাজির রোবট