ঘরে এল আই-লিগ ট্রফি, সবুজ-মেরুন জোয়ার কলকাতায়

১০ মার্চ। কল্যাণীর স্টেডিয়ামে তখন চলছে শ্রেষ্ঠত্ব ছিনিয়ে আনার লড়াই। আইজলের বিরুদ্ধে কলকাতার ফুটবল ক্লাবের। টানটান উত্তেজনা। ক্লাবের তাঁবুতেও ভিড় করেছেন বহু সমর্থক। এই ম্যাচ জিতলেই আরও একবার ইতিহাস ছুঁয়ে দেখা ক্লাবের। আরও একবার সেরার শিরোপা। গোলশূন্য প্রথম অর্ধ। দ্বিতীয়ার্ধে ৩৫ মিনিটের মাথায় এল গোল। হোসেবা বেইতিয়ার অনবদ্য পাসে জালে বল জড়ালেন বাবা দিওয়ারা। আর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল মোহন-সমর্থকরা।

তখনও অবধি বাকি ছিল ৪ ম্যাচ। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলা লিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টবেঙ্গলের থেকে দূরত্ব ১৬ পয়েন্টের। লিগ শেষ হওয়ার আগেই তিলোত্তমার রং হয়ে গেল সবুজ-মেরুন। কিন্তু শেষ হল না আই-লিগ। তার আগেই ভাইরাসের সংক্রমণ। স্থগিত রাখা হল ম্যাচ। তবে ক্রমাগত পরিস্থিতির অবনতির কারণে শেষ অবধি বাকি ম্যাচগুলি বাতিল করেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হল মোহনবাগানকে।

মোহনবাগানের এই ‘অসমাপ্ত’ আই-লিগ জয় নিয়েই বিতর্ক দানা বেঁধেছিল কলকাতার ফুটবল মহলে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল দাবি জানিয়েছিল, আই-লিগের অন্যতম দাবিদার তারাও। তবে লিগ শেষ হওয়ার আগেই, ম্যাচ বাতিল করে কেন এই ঘোষণা? কিন্তু হিসাবের নিরিখে স্পষ্ট ছিল আই-লিগ খেলা বাকি দলগুলি বাকি থাকা সমস্ত ম্যাচে জয় আনলেও ট্রফি স্পর্শ করে দেখার কোনো সুযোগ ছিল না তাদের কাছে।

২০১৫-এর পরে ২০২০-তে আবার ইতিহাস ছুঁয়ে ফেলা। জাতীয় লিগজয়। বঙ্গতনয় সঞ্জয় সেনের পর সেই স্বপ্নটাকে আবার তুলে ধরলেন কিভু ডিকুনহা। তবে লিগ শেষ হওয়ার মাস ছয়েক পেরিয়ে যাওয়ার পরও, ট্রফি ঘরে আসেনি মহামারীর কারণে। থমকে ছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের উৎসবের সেই আমেজ। ১৮ অক্টোবর সেই উৎসবেই যেন মাতল কলকাতা। হাজার প্রতীক্ষার অবসান হয়ে ক্লাবের তাঁবুতে ঢুকল ট্রফি। ‘মোহনবাগান’ ধ্বনিতে গমগম করে উঠল ফুটবল নগরী।

আরও পড়ুন
সবুজ-মেরুনে সাজছে হাওড়া ব্রিজ, আই-লিগ জয়ী মোহনবাগানকে বিশেষ সম্মান

ভাইরাসের ভয় তুচ্ছ করেই রাস্তায় নামলেন হাজার হাজার সমর্থক। শরতের আকাশে উড়ল সবুজ-মেরুন আবীর। কোচ কিভু ডিকুনহা সহ একাধিক লিগজয়ী ফুটবলারই তখন গোয়ায়। সেখান থেকেই আবেগ মেখে নিলেন তাঁরা। আবেগ মেখে নিলেন ইতিহাসের সাক্ষী থাকা প্রাক্তন ফুটবল তারকারাও। এই জয় তো তাঁদেরও।

আরও পড়ুন
নাকে অক্সিজেনের নল নিয়েই মাঠে নামলেন আপ্পারাও, মোহনবাগানকে হারিয়ে শিল্ড জিতল ইস্টবেঙ্গল

আই-লিগ দাপানোর দিন শেষ হয়েছে। চলতি মরশুমে আইএসএল-এ নামতে চলেছে দল। তবে লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার আগেই এক স্বর্ণমুহূর্ত তৈরি করে গেল জাতীয় ক্লাব। যাঁদের লড়াই শুরু হয়েছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলকে পায়ে ঠেলেই। গত দুয়েক দশক ধরে কলকাতার ফুটবল অনেকটাই বিদেশি নির্ভর। তবুও শেষ আই-লিগ জয়ের সঙ্গেই জুড়ে থাকল দলগত পারফর্মেন্স। বেইতিয়া, ফ্রান কিংবা বাবা দিওয়ারার পাশাপাশিই সমানভাবে সাহিল, সুহের, শঙ্কর, ফৈয়াজ, আজারুদ্দিন, শুভ ঘোষরা চিনিয়ে দিলেন বাঙালি ফুটবলারদের জাত। আগামীদিনে ফ্র্যাঞ্চাইসি ফুটবলের অংশ হতে চলেছে কলকাতার দুই ফুটবল-জায়েন্টই। আরও বেড়ে যাবে হয়তো বিদেশি নির্ভরতা। কতটা সুযোগ আসবে বাঙালি ফুটবলারদের তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে বারবার তরুণ ফুটবলারদের তুলে আনা সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের শেষ আই-লিগ মনে করে দেবে সেই কথাই। মনে করিয়ে দেবে তার ইতিহাসকেই...

আরও পড়ুন
১৯১১ সালে মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের কাহিনি ঠাঁই পাচ্ছে পাঠ্যপুস্তকেও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ইস্টবেঙ্গল লিগ জেতায়, দুঃখে ‘দেশান্তরী’ হয়ে গিয়েছিলেন মোহনবাগানী লালাকাকু

More From Author See More