করোনাভাইরাসের জেরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। আর তাতে রাস্তার কুকুরদের জীবন বিপন্নতার মুখে। বন্ধ রয়েছে সমস্ত খাবারের দোকান, ছোটো ছোটো হোটেল। ফলে খাবার জুটছে না কুকুরদেরও। এই পরিস্থিতিতে অনেককেই অবশ্য দেখা গেছে এগিয়ে আসতে। অনেক জায়গায় সরকার নিজেও ব্যবস্থা নিয়েছে এদের খাবারের বন্দবস্ত করতে। এবার ফেসবুকে প্রকাশিত আরেকটি ছবি অবাক করে দিল সবাইকে। এক ভবঘুরে, যাঁকে এলাকার লোকেরা ‘পাগল’ হিসেবেই চেনে, কুকুরদের খাওয়ালেন পরম যত্নে।
কবীর সুমনের ‘এক মুখ দাড়ি গোঁফ, অনেক কালের কালো ছোপ ছোপ’ সেই গানের মতোই একটি চরিত্র। মানসিক ভারসাম্যহীন এক মানুষ। ঠিকানা নেই কোনো। নেই জীবনের নিশ্চয়তাও। কাঁচরাপাড়ার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেই জীবন চলে তাঁর। তাঁকে কাঁচরাপাড়ার রেলওয়ে হসপিটাল, সিএমএস অফিসের পাশে দেখা যায় প্রায়শই। শান্ত, ভবঘুরে এই মানুষটিকে অনেকে ডাকেন ‘চিমা’ বলে। অনেকে ‘হুলো’ বলেন। মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও কাউকে বিরক্ত করেননি কোনোদিন। তাই পাড়ার নানান বাড়ি থেকেই টুক-টাক জুটে যায় খাবার। তবে সে খাবার একা খান না। বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে তবেই খান কাঁচরাপাড়ার এই একান্তভোলা ‘চিমা’। বন্ধু বলতে? রাস্তার অনেকগুলি কুকুর। চিরবিশ্বস্ত ওই সারমেয়রাই ‘চিমা’-র বন্ধু।
ফেসবুকে অনির্বাণ ঘোষের আপলোড করা সেই ছবিই ছড়িয়ে পড়েছে সম্প্রতি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ‘চিমা’ রাস্তার কুকুরদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছেন বিস্কুট। লকডাউনের পরিস্থিতিতে যখন বন্ধ সব দোকানপাট। অনেকেই বেরোচ্ছেন না বাড়ি থেকে। কেউ ওনাকে দিয়ে গিয়েছিলেন একটি বিস্কুটের প্যাকেট। কিন্তু বন্ধুদের না দিয়ে কি খেয়ে নেওয়া যায়? অভুক্ত শ্বাপদদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন ওই সম্বলটুকুও।
মানবিকতার চূড়ান্ত এক নিদর্শন এটাই। যেখানে আমরা অনেকে বাড়িতে কিলো কিলো চাল, আটা, অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী তুলে রাখছি। একবারও ভাবছি না অন্যদের কথা। নিঃশব্দে যেন এই ঘটনা আমাদের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে কাঠগড়ায়। অথবা আয়নার সামনে। চেষ্টা করলে আমরাও কি পারি না ‘চিমা’-র মতো অবলা প্রাণীদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে?