মেলেনি করোনার চিকিৎসা, মেঝেতে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা কলকাতার একই পরিবারের তিনজনের

সকাল থেকেই বাড়িতে কারোর সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিবেশীরা সকলেই তাই একটু অবাক হয়েছিলেন। বেলা বাড়তে থাকলে সন্দেহ আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অবশেষে পুলিশে খবর দিলে তারা এসে ভেঙে ফেলে বাড়ির দরজা। তারপর একটি ঘরের ভিতর গিয়ে দেখা যায় তিনটি মৃতদেহ পড়ে আছে। মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটে ঠাকুরপুকুর এলাকার সত্যনারায়ণ পল্লিতে।

সে এক মর্মান্তিক দৃশ্য। ৮০ বছরের গৃহকর্তা শুয়ে আছেন মেঝের ওপর। আর তাঁর ৭০ বছরের স্ত্রী ও ৪৮ বছরের ছেলে শুয়ে আছেন খাটের উপর। কারোর শরীরেই প্রাণের কোনো স্পন্দন নেই। কর্তার মৃতদেহের পাশে মেঝেতে চক দিয়ে লেখা, 'আমরা তিনজনেই মৃত'।

ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটিমাত্র পাত্র, যার মধ্যে লেখা বিষের সাবধানবাণী। আপাতভাবে পুলিশের তাই অনুমান বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন পরিবারের তিন সদস্যই।

স্ত্রী রুনু এবং জন্মাবধি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে দেবাশীষকে নিয়ে এই বাড়িতেই থাকতেন গৃহকর্তা গোবিন্দ কর্মকার। একসময়ে কারখানায় কাজ করলেও বহু বছর আগে সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে নানারকম কাজ করে সংসার চালাতেন গোবিন্দ, এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় প্রতিবেশীরা। অভাবের সংসারে হঠাৎ আসে বিপর্যয়। কিছুদিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন রুনু কর্মকার। তারপর থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় তিনি শয্যাশায়ী। দুই রোগীর পরিবারের একমাত্র ভরসা গোবিন্দ কর্মকার নিজেও বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছিলেন। তার উপরে লকডাউনের মধ্যে বন্ধ সমস্ত উপার্জন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চরম বিপাকে পড়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন
বেড়েই চলেছে সংক্রমণ, লকডাউনে ভারতের ‘ব্যর্থতা’ ও কিছু আশঙ্কা

এর মধ্যেই গত রবিবার গোবিন্দ নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও যেহেতু তাঁর শরীরে জ্বরের উপসর্গ ছিল, তাই তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। আশেপাশের সমস্ত হাসপাতাল থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হলে অবশেষে বাড়িতেই আশ্রয় নেন তিনি। অভাব ও হতাশার মধ্যে এই আক্রমণে মানসিক স্থিতাবস্থা ধরে রাখতে পারেননি গোবিন্দ, প্রাথমিকভাবে এমনটাই অনুমান পুলিশের। আর তার জেরেই নিলেন এই চরম সিদ্ধান্ত। একসঙ্গে একটি পরিবার মুছে ফেলল নিজেদের অস্তিত্ব।

আরও পড়ুন
করোনার ভয়ে বৃদ্ধা মাকেও বাড়িতে ঢুকতে দিল না ছেলে, অমানবিক দৃশ্য তেলেঙ্গানায়

Powered by Froala Editor

More From Author See More