শ্রমিক দিবসের বহু আগেই, ১ মে কৃষি উৎসব পালিত হত প্রাচীন ইউরোপে

আপনি যদি প্রাচীন রোমের বাসিন্দা হতেন, মেতে উঠতেন উৎসবে। না, শ্রমিক দিবস উপলক্ষে নয়। তার আবির্ভাব বহুযুগ পরে। প্রাচীন রোমানরা এই দিনটি পালন করত বসন্তোৎসব হিসেবে। তবে শুধু রোমানরাই নয়, এই উৎসব পালিত হত মিশর এবং গ্রিসেও। গ্রীষ্মের শুরুতে, যখন চারপাশ ভরে উঠছে ফসলে, আনন্দে মেতে উঠত তারা। মে দিবসের সঙ্গে জড়িয়ে এমন আশ্চর্য ইতিহাসও।

রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিপত্তির মূল ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। কৃষিজীবীদের হাতেই রাষ্ট্রের ঐশ্বর্য নির্ভর করত। আর বসন্তের শেষে নতুন ফসল ওঠার সময়টা যে তাঁদের কাছে বিশেষ আনন্দের দিন হয়ে উঠবে, এতে আর আশ্চর্য কী? গ্রামে গ্রামে শুরু হত ফুলের উৎসবও। কৃষিকাজের দেবী ফ্লোরিয়ালিসের বন্দনায় মেতে উঠতেন প্রত্যেকে। পালিত হত ‘ফ্লোরালিয়া’, বা ‘ফেস্টিভ্যাল অব ফ্লোরা’।

গ্রামের মাঝে বসত একটি বড়ো চিরহরিৎ গাছ। তার ডালেই বিভিন্ন শস্য ঝুলিয়ে রাখতেন কৃষকরা। এই গাছের নাম ছিল মে ট্রি। আজও ইউরোপের অনেক জায়গায় মে ট্রি বা মে টাওয়ার চোখে পড়ে। তবে মেলার আসর বসে না আর। সেখানে নাটক আর মূকাভিনয় দেখতে ভিড় করে না মানুষ। খ্রিস্টান ধর্মের চাপে ক্রমশ মুছে গিয়েছে এইসব পেগান রীতিনীতি। তবে সেই দীর্ঘ ইতিহাসের প্রভাব থেকে গিয়েছে মানুষের জীবনে।

তবে শুধুই ফুল বা ফসলের উৎসব নয়, মে মাসের প্রথম দিনটা সূর্যের উৎসবও বটে। দেবতা নাকি এইদিন সারা বছরের পোশাক পরিবর্তন করে আকাশে উদয় হতেন। তাই তার আগেরদিন রাতে ঘুম হত না প্রাচীন রোমানদের। সারারাত জেগে তারা প্রতীক্ষা করত নতুন সূর্যোদয়ের। বছরের শুরুতে যে সূর্য উঠবে, তা একেবারে নতুন। নতুন দিন শুরু হবে পৃথিবীতে। এই নতুন দিনের প্রতীক্ষাতেই তো যুগে যুগে রাত জেগেছে মানুষ। কিন্তু তবু যে দিন বদলায় না। প্রতিটা দিন আবারও আগের দিনের পুনরাবৃত্তি করে। কিন্তু আশা ছাড়েনি মানুষ। দিন বদলাবে, এই বিশ্বাসে আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কতজন।

১৮৮৬ সালে শিকাগোর রাস্তায় প্রথম শ্রমিক ধর্মঘটও তো সেই দিনবদলেরই আহ্বান। আর অদ্ভুতভাবে, সেই দিনটাও ১ মে। সেই দিনকে মাথায় রেখেই এখন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এই সমাপতন কি নিছক কাকতালীয়? নাকি এভাবেই যুগে যুগে মানুষের স্বপ্ন এক সূত্রে গাঁথা পড়ে? ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায় বর্তমানও।

Powered by Froala Editor