বিয়ের পর পুরুষরাই যান শ্বশুরবাড়ি, ভারতের বুকেই রয়েছে এমন মাতৃতান্ত্রিক সমাজ

একসময় আর্যদের সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। তবে তখন বিবাহের রীতি কেমন ছিল, সেটা বিশদে জানা যায় না। তখনও স্থায়ী বসবাস শুরু না হওয়ায় শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার রেওয়াজ হয়তো ছিল না। আর তাই বিয়ে মানেই মেয়েদের চোখের জল ফেলতে ফেলতে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে, এটাই চিরাচরিত রীতি। কিন্তু হঠাৎ যদি দৃশ্যটা বদলে যায়? দেখা যায় পুরুষরাই চোখ মুছতে মুছতে বিয়ের পর বিদায় নিচ্ছেন নিজের বাড়ি থেকে। আর যদি সেটাই হয় কোনো অঞ্চলের প্রথা? অবাক লাগবে, তাই তো? তবে ভারতের উত্তর-পূর্বে এবং বাংলাদেশের উত্তরে গারো প্রদেশে আজও এই রীতি বর্তমান।

ভারতের উত্তর-পূর্বে মেঘালয় রাজ্যটি নানা দিক থেকে আশ্চর্যজনক। আর তার মধ্যে অন্যতম বড়ো কারণ এখানে খাসি ও গারো নামে দুটি মাতৃতান্ত্রিক উপজাতির উপস্থিতি। সারা পৃথিবীতে যখন কন্যাভ্রূণ হত্যা এক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, তখনও এই দুই উপজাতিতে কন্যা সন্তান জন্মালে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনেক সন্তান থাকলে মেয়েটির অধিকার থাকে সবার আগে। এমনকি এখানে বিয়ের পর ছেলেদেরই শ্বশুরবাড়িতে আসতে হয়।

মহাভারতের কাহিনি অনুযায়ী মণিপুর রাজার ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে শিব বর দিয়েছিলেন যে তাঁর বংশে কেবল পুত্রই জন্মাবে। তারপরেও চিত্রাঙ্গদার জন্ম হলে রাজা তাঁকে পুরুষের মতোই পালন করলেন। রাজকন্যা নয়, যুবরাজ হয়ে উঠলেন চিত্রাঙ্গদা। সেই কাহিনি মনে রেখেই আজও গারো এবং খাসি উপজাতির মানুষরা মেয়েদের সবার আগে অধিকার দিয়ে আসে। তবে স্পষ্টই বোঝা যায় এই কাহিনি পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিতে করা ব্যাখ্যা। 

আসলে এই মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বীজ নীহিত আরও প্রাচীন ইতিহাসে। সেই ধারা আজও বহমান। আজকের পৃথিবীতে সিঙ্গল মাদার এক অতি আধুনিক ধারণা হলেও গারো এবং খাসি উপজাতির মানুষরা কোনোদিন কোনো শিশুকেই অবৈধ বলে মনে করেনি। সত্যিই এই সমাজকে আজও অনেককিছু শেখাতে পারেন তাঁরা। সভ্য মানুষ যে আজও কেন তাঁদের প্রাচীন বলেন, কী জানি!

আরও পড়ুন
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিয়ের বিধান তৈরির নির্দেশ কেরালার গির্জায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘হিন্দু ললনাদের প্রতিরাত্রে বিয়ে দিচ্ছেন বিসমিল্লা খান’; যাঁর কাছে সুরই হয়ে উঠেছিল ধর্মাচরণ

More From Author See More