আইনি নিষেধাজ্ঞার ৭ বছর, আজও ‘স্বাভাবিক’ সাফাইকর্মীদের মৃত্যু

ঘণ্টাদুয়েক আগে আবাসনের সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমেছেন দুজন মানুষ। তবে হঠাৎ তাঁদের আর কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সন্দেহ হতেই পুলিশে যোগাযোগ করেন পরিচারক। তবে দমকলের কর্মীরা এসে পৌঁছনোর আগেই সব শেষ। সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যেই শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। সম্প্রতি এমন ঘটনাই ঘটেছে পূর্ব দিল্লির ত্রিলোকপুরী আবাসনে। যদিও তিন রাজ্যের নির্বাচন এবং রাজনৈতিক তরজার মধ্যে এবারেও হারিয়ে গেল দুজনের মৃত্যুর খবর।

কিন্তু প্রতিটা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো এই মৃত্যুও কিছু প্রশ্ন রেখে গেল। ২০১৩ সালে ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং’ বিরোধী আইন পাশ হওয়ার পরেও কেন তার কোনো বাস্তব প্রয়োগ ঘটছে না? আইন ব্যবস্থার কাছে এই প্রশ্নই রেখে গেলেন মৃত লোকেশ কুমার এবং প্রেম চন্দ।

সাফাইকর্মী মৃত্যুর ঘটনা ভারতে নতুন নয়। ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে গড়ে ৩৪০ জন সাফাইকর্মী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এই তো মাসখানেক আগের কথা। কলকাতার কুঁদঘাট এলাকায় ম্যানহোল পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন মালদা থেকে আসা চারজন ঠিকা শ্রমিক। তবে প্রবল নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় চারজন সামান্য সাফাইকর্মীর মৃত্যু তল পায়নি। প্রতিটা রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে মানুষের সমানাধিকার, সার্বিক সুযোগের ব্যবস্থা এসব নিয়ম করে লেখা হয়ে আসছে ৭ দশক ধরে। তবে সবই যে কেবল প্রতিশ্রুতি। বর্ণবিভাজন, জাতিবিভাজনের মধ্যে দিয়েই আজও টিকে আছে ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং’ বা মানুষের দ্বারা আবর্জনা পরিষ্কারের ব্যবস্থা।

১৯৯৪ সালে সাফাইকর্মী আন্দোলনের সূচনা দেশজুড়ে। সেইসঙ্গে জাতিবিদ্বেষের প্রশ্নটিও উঠেছিল গুরুত্বের সঙ্গেই। আজও সাফাইকর্মী বলতেই কোনো তফশিলি জাতি বা উপজাতির মানুষকেই বেছে নেওয়া হয়। এমনকি ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং’ আইনত নিষিদ্ধ হওয়ার আগে বিভিন্ন পৌরসভা বা সরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপনে লেখা হত এই কাজ তফশিলি জাতি ও উপজাতির মানুষদের জন্য ১০০ শতাংশ সংরক্ষিত। হ্যাঁ, এও একরকমের সংরক্ষণ বৈকি!

দেশজুড়ে আন্দোলনের চাপে ২০১৩ সালে ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং’ বিরোধী আইন আনে সুপ্রিম কোর্ট। আর সেই আইন মোতাবেক দিল্লির ঘটনায় অভিযুক্ত পরিচারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাহুল নামের আবাসনের সেই পরিচারক ৩০০০ টাকার বিনময়ে দুজনকে নামিয়েছিলেন সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে। আইনে হয়তো রাহুল শাস্তি পাবেন। কিন্তু দেশজুড়ে এই সমস্যার শেষ হবে কি? আইন তৈরির ৭ বছর পরেও বাস্তব অবস্থা অন্তত সে-কথা বলে না। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আবর্জনা অপসারণের পরিকাঠামো নেই বললেই চলে। আইনের ফাঁক বাঁচিয়েই যেমন সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে কাজ করছেন সাফাইকর্মীরা, তেমনই কাজ চলছে অনেক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাতেও। আর বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা? আজও এদেশে তার কল্পনা করাও কঠিন।

Powered by Froala Editor

More From Author See More